আজ: শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৭ অক্টোবর ২০২২, সোমবার |

kidarkar

চেক নগদায়নের শর্ত বাতিল চেয়ে চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক:গ্রাহকের জমাকৃত চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে না মর্মে দেওয়া শর্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) চিঠি দিয়েছে দুটি স্টেকহোল্ডার সংগঠন। সংগঠন দুটি হচ্ছে-পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের প্ল্যাটফরম সিইও ফোরাম এবং ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।

সম্প্রতি সংগঠন দুইটির পক্ষ থেকে আলাদাভাবে দুটি চিঠি দেওয়া দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ, সম্প্রতি কার্যকারিতা স্থগিত থাকা ২০১০ সালের একটি প্রজ্ঞাপনের আলোকে ডিএসই’র পক্ষ থেকে ব্রোকারহাউজগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন গ্রাহকের জমাকৃত চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত ওই টাকার বিপরীতে কোনো শেয়ার কিনতে না দেয়া। পুঁজিবাজারে ওই নির্দেশনার তীব্র প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে সোমবার এই ইস্যুকে কেন্দ্র বাজার চরম অস্থির হয়ে উঠে। বড় ধরনের দর পতন হয়। এর প্রেক্ষিতে চেকের ইস্যুটি নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে।

জানা গেছে, ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি’ রোজারিও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, গত ৬ ডিসেম্বর ২০১০ সালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিএসই কমিশনের নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালনের জন্য প্রত্যেক ট্রেকহোল্ডারকে গ্রাহকের জমাকৃত চেক নগদায়নের পর ক্রয়াদেশ বাস্তবায়ন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। সেই নির্দেশনাটি তৎকালীন কমিশন জারি করার পর পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাবের ফলে মাত্র দুইদিনের মাথায় অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর তা স্থগিত করে দেওয়া হয়। এ আদেশের ফলে পূর্বের ন্যায় পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ডিবিএ’র চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকের চেক নগদায়নের রিয়েল টাইম ব্যাংকিং ব্যবস্থা না থাকায়, গ্রাহক চেক জমাদানের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় করার প্রচলন বহু আগে থেকেই চলমান রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ব্রোকারহাউজে চেক প্রদানের মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রয়োজন মাফিক শেয়ার ক্রয় করতে সমর্থ হয়। অন্যদিকে, এই প্রক্রিয়ার ফলে ব্রোকারেজ হাউজ এক্সচেঞ্জকে তাদের দৈনিক শেয়ার ক্রয়ের ওপর অর্থ নিষ্পত্তিতে কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না। তাছাড়া লেনদেনে সুনাম ও স্বচ্ছতা রয়েছে এমন সুপরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য গ্রাহকের ক্ষেত্রেই ব্রোকারেজ হাউজ কেবলমাত্র চেক গ্রহণের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়াদেশ বাস্তবায়ন করে থাকে। গ্রাহকের চেক নগদায়ন না হওয়ার ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি যেহেতু ব্রোকারকেই নিতে হয়, তাই এক্ষেত্রে ব্রোকারহাউজ তাদের ঝুঁকির বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচনা করেই মূলত গ্রাহকভেদে চেকের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়ের অনুমতি দিয়ে থাকে। তাই ট্রেকহোল্ডার গ্রাহকের জমাকৃত চেক নগদায়নের পর ক্রয় আদেশ বাস্তবায়ন করার বিষয়ে জারিকৃত নির্দেশনা পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে বাজারের দৈনিক লেনদেন কমে বাজার নিম্নমুখী ধারায় অবস্থান নেওয়া এবং বিনিয়োগকারীর একটি বড় অংশ বাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নিতে পারে। এ ছাড়া তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়ে বাজার শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়া এবং দীর্ঘমেয়াদে বাজারের ছন্দপতন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। তাই দেশে চলমান সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশের অর্থনৈতিক ধারা অব্যাহত রাখতে, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও অগতি সুসংগঠিত রাখাতে নির্দেশনা স্থগিত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এদিকে সম্প্রতি জারি করা নির্দেশনা স্থগিতাদেশ চেয়ে সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্ট মো. সায়েদুর রহমান চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘদিনের স্থগিত ইস্যুতে ডিএসইর এই ধরনের আশ্চর্যজনক নির্দেশনা বাজারে আরও আতঙ্ক ও বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। যেখানে পুঁজিবাজার ইতোমধ্যে একটি অস্থির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই বাজারের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে তা প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।

এ ছাড়া সিইও ফোরামের চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যখনই কোনও ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারী যথাযথ নথি-প্রমাণ বা সত্যতা ছাড়া ডিএসই বা বিএসইসির কাছে অভিযোগ করেন, তখনই ডিএসই বা বিএসইসি অবিলম্বে প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরু করে। এ ছাড়া খবর অনলাইন নিউজ পোর্টাল বা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ হওয়ায় পুঁজিবাজার নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারীদের সুনাম নষ্ট হয়। তাই বিএসইসি বা ডিএসইতে অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে যথাযথ সহায়ক নথি-প্রমাণ বা সত্যতা পাওয়ার পরই প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরু করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রাহকের জমাকৃত চেক নগদায়নের পর ক্রয় আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশনাটি প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্ট মো. সায়েদুর রহমান।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কিনতে না দেওয়ার নির্দেশনা বাস্তবসম্মত নয়। অনেক বড় বিনিয়োগকারী আছেন, কোনো শেয়ারকে সম্ভাবনাময় মনে হলে তারা দ্রুত সেটিতে বিনিয়োগ করতে চান। এমন অবস্থায় তারা চেক দিয়ে এর বিপরীতে সমপরিমাণ অর্থের শেয়ার কেনার আদেশ দেন। কিন্তু চেক নগদায়ন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে এমন হতে পারে, একদিনের ব্যবধানে শেয়ারটির দাম অনেক বেড়ে যায়। বাড়তি দামে তারা শেয়ার কেন কিনবেন? এছাড়া ব্যাংকসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগাকারীরা সব সময় প্রতিদিনের লেনদেন শেষে নেট ক্রয় থাকলে ওই টাকা চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করে থাকে। তাই ওই নির্দেশনা বহাল থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার আশংকা আছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.