বেঙ্গল ফাইনের বিরোধ: দায়-দেনা নিষ্পত্তিসহ পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হয়ে লেনদেনের অপেক্ষায় থাকা বেঙ্গল ফাইন সিরামিকসের মালিকানা নিয়ে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষে কোম্পানিটির দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বৈঠকে কোম্পানিটির সকল দায়-দেনা নিষ্পত্তি করাসহ পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ লক্ষে একাধিক স্বতন্ত্র পরিচালক ও আইসিবির পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সম্প্রতি বেঙ্গল ফাইন সিরামিকসের পরিচালনা পর্ষদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে, গত ১১ অক্টোবর বেঙ্গল ফাইন সিরামিকসের সঙ্গে বিএসইসির অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। এসময় বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন ও নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কোম্পানির পক্ষে চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রাশেদ মকসুদ খান, পরিচালক ফারজানা রুবাইয়্যাত খান, বেঙ্গল ফাইনের প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমান্ডার জাহিদ হাসান, কোম্পানির সচিব শহীদুল ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ কুমার রায়ের প্রতিনিধি হিসেবে অভিজিৎ রায় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মইনুর রহমান চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বেঙ্গল ফাইন সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ কুমার রায় ২০১২ সালের ৭ ও ২৩ মার্চে সমঝোতা চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলতি বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কোম্পানির সমস্ত বকেয়া দায় যেমন- ব্যাংকের দায়, আইসিবির ডিবেঞ্চার, পরিচালকের ঋণ এবং অন্যান্য বকেয়া নিষ্পত্তি করবেন। এরপর কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এবং তাদের মধ্যে সমঝোতা স্মারক অনুসারে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে। এখানে বিশ্বজিৎ রায় ক্রেতা এবং প্রকৌশলী রাশেদ মকসুদ খান বিক্রেতা। সেহেতু সকল বকেয়া দায় নিষ্পত্তির জন্য অবশ্যই একে-অপরকে সহযোগিতা করতে হবে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মইনুর রহমান চৌধুরীকে বেঙ্গল ফাইন সিরামিকসে একজন স্বাধীন পরিচালক ও কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ করা যেতে পারে। আর কোম্পানিটির ৬৯ হাজার শেয়ার, যা ১০.৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসাবে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) একজন প্রতিনিধিকে পরিচালনা পর্ষদে একজন পরিচালক মনোনীত করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিএসইসি কর্তৃক এক বা একাধিক আরও স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ করা যেতে পারে।
এদিকে, চলতি বছরের ২৭ জুলাই বেঙ্গল ফাইন সিরামিকসের মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ ও বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুর রহমান।
২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিএসইসি ওটিসি মার্কেট বিলুপ্ত ঘোষণা করে। ফলে ওটিসি মার্কেটের আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে ওটিসি মার্কেট থেকে বেঙ্গল ফাইন সিরামিকসকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
প্রসঙ্গত, বেঙ্গল ফাইন সিরামিকস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৬ সালে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৬৫ লাখ। এর মধ্যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ৩০.১৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৭.৬১ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২২.২২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বুধবার (২৭ জুলাই) বেঙ্গল ফাইন সিরামিকসের শেয়ার সর্বশেষ ৬০.৫০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।