শিল্প পুলিশ সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক : শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় শিল্প পুলিশ সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, শিল্পাঞ্চলে অপরাধের মাত্রা ও প্রকৃতি ভিন্নতর। শিল্পক্ষেত্রে বিশেষ করে পোশাক শিল্পে নৈরাজ্য ও অস্থিরতা দেখে আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম শিল্প পুলিশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ২০০৯ সালে শিল্প পুলিশ গঠনের ঘোষণা দেয়। ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর হতে শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য এ ইউনিটটি যাত্রা শুরু করে।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রোববার দেওয়া এক বাণীতে সরকারপ্রধান এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে সাইবার ক্রাইম, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন, মানি লন্ডারিং ইত্যাদি সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম একটি জনবান্ধব আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার সব ধরনের সময়োপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
তিনি জানান, গত সাড়ে ১৩ বছরে পুলিশ বাহিনীতে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, সাইবার ইউনিট গঠনসহ ছয়টি বিশেষায়িত ইউনিট, চারটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, তিনটি র্যাব ব্যাটালিয়ন, দুটি রেঞ্জ, দুটি মেট্রোপলিটন পুলিশ, ৬৩টি থানা, ৯৫টি তদন্ত কেন্দ্র এবং ৩০টি ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার গঠন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। যুগপূর্তির এই শুভক্ষণে তিনি ইউনিটের সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের দেশপ্রেমিক পুলিশ সদস্যরা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার লক্ষ্যে পুলিশের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে জনবল ও বাজেট বৃদ্ধিসহ সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পুলিশের প্রায় সব ইউনিটের কাঠামো সংস্কারসহ মোট ১ হাজার ৫২৯টি ক্যাডার পদসহ সর্বমোট ৮২ হাজার ৯২৭টি পদ সৃজন করা হয়।
তিনি জানান, বিশ্বায়ন ও ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে অপরাধীরা সহজলভ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও সর্বদা নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে অপরাধকে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পরিসরে দ্রুত বিস্তৃত করছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং স্থানীয় প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ প্রতিরোধ ও অপরাধ উদঘাটন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এ যুগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কিত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য পুলিশ কার্যক্রমের প্রতিটি পর্যায়কে ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি শিল্প খাত হতে অর্জিত আয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ছিল ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পখাত রপ্তানি করেছে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক, যা মোট রপ্তানির ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশ। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। শুধুমাত্র পোশাক শিল্পে বর্তমানে প্রায় ৪২ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় থাকার কারণে আমাদের এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক, মালিক ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে শিল্প সম্পর্কিত সুসম্পর্ক বজায় রাখা, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও কারিগরি বিশেষজ্ঞদের নিরাপত্তা বিধান করাসহ শিল্প সেক্টরে সামগ্রিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এ কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও কলকারখানার সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সব শিল্পক্ষেত্রে অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ আরও সচেষ্ট হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেওয়া সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।