প্রতিকুলতার মধ্যেও ভাল অবস্থানে টেক্সটাইল খাত
শাহ আলম নূর : কভিড, কাঁচামালের ঊর্ধ্বমুখিতা, মূল্যস্ফীতি, মদ্রার অবমূল্যায়ন, পণ্য জাহাজীকরণের ব্যয়বৃদ্ধি ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ নানামুখী ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকট আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশও এর উত্তাপ টের পাচ্ছে বেশ ভালো করেই। নানামুখী চাপের কারণে এরই মধ্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান। তবে এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও ব্যবসায়িকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। দিন দিনই বড় হচ্ছে তাদের ব্যবসা।
তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ স্পিনিং এবং টেক্সটাইল মিলস ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রত্যাশিত আয়ের চেয়ে বেশি আয় করেছে। সুতার দাম বৃদ্ধি এবং পোশাক বিক্রয়ে প্রবৃদ্ধি একই সাথে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য এখাতে আয় বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ঠরা মনে করছেন।
ঊ্যবসা পরিচালনা করতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের বৃদ্ধি সত্ত্বেও এখাতে ইতিবাচক উপার্জন এবং মুনাফা নিয়ে বছরটি শেষ করেছে।
টেক্সটাইল খাতের তালিকাভুক্ত ৫৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৫টি অর্থবছর ২১-২২ এর আর্থিক পর্যালোচনা করার পর এখন পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুসারে ২৮টি টেক্সটাইল এবং স্পিনিং মিলস ২১-২২ অর্থবছওে আয় বৃদ্ধি করেছে। একই সাথে ১৭টি কোম্পানি ২১-২২ আর্থিক বছরে লোকসান করেছে।
পোষাক খাতের ১৭টি লোকসানী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আটটি ২১-২২ অর্থবছরের জন্য কোনও লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি।
ডিএসই’র তথ্যানুসারে টেক্সটাইল সেক্টরের চারটি কোম্পানি ২১-২২ অর্থবছরে ইতিবাচক আয়ে ফিরে এসেছে, যা এর আগের অর্থবছরে লোকসানী প্রতিষ্ঠন ছিল।
অন্যদিকে ২১-২২ অর্থবছর পাঁচটি কোম্পানি লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে যেগুলি ২০-২১ অর্থবছওে লাভজনক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ছিল।
চলমান বিদ্যুৎ’র ঘাটতি এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামের বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে টেক্সটাইল এবং স্পিনিং মিলস আয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে খাত সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
তথ্যে দেখা যায় ২১-২২ অর্থবছরে টেক্সটাইল এবং স্পিনিং কোম্পানিগুলির রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার পরও ব্যাপক উৎপাদন খরচ তাদের লাভের একটি বড় অংশ খেয়ে ফেলছে। এমন প্রবণতা ২০২২-২৩২ অর্থবছরে প্রথম ত্রৈমাসিকেও অব্যাহত থাকবে বলে তারা মনে করছেন।
মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস লি:’র ২০২১-২২ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ২৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় আগের বছরের ০.৫২ টাকার বিপরীতে ২১-২২ অর্থবছর বৃদ্ধি পেয়ে ১.৯২ টাকা হয়েছে। শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হল একটি কোম্পানির মোট মুনাফা। যা সাধারণ শেয়ারের মোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা হয়। কোম্পানিটি ২১-২২ অর্থবছরের জন্য তার শেয়ারহোল্ডারদের ৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে গত ২১-২২ অর্থবছরে সায়হাম কটন মিলস লি:’র আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ২৫৩ শতাংশ বেড়ে ২১-২২ অর্থবছরেন ১.২৭ টাকা হয়েছে। যা আগের ২০-২১ অর্থবছরে ছিল ০.৩৬ টাকা। কোম্পানিটি ২১-২২ অর্থবছর’র জন্য ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
টেক্সটাইল খাতের অপর প্রতিষ্ঠন তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস লি: ২০২১-২২ অর্থবছরে একটি শীর্ষ মুনাফা অর্জনকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় উঠে এসছে। এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২১-২২ অর্থবছর শেষে ৬.৬১ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা ২০২০-২০২১ অর্থবছর শেষে ২.০৫ টাকা ছিল। প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস বেড়েছে ২২২ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠনটির পরিচালনা পরিষধ ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে।
সায়হাম কটন মিলস’র কোম্পানি সেক্রেটারি সাহিনুর কবির বলেন, সুতা বিক্রয় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে আমাদের আয় বৃদ্ধিতে বড় ধরনের সহযোগিতা করেছে।
অন্যান্য শীর্ষ টেক্সটাইল কোম্পানি যারা ২০২১-২২ অর্থবছরে বিস্ময়কর আয়ের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তোসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, দেশ গার্মেন্টস, আলহাজ্জ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, মুন্না ফেব্রিক্স লিমিটেড, মতিন স্পিনিং মিলস লিমিটেড,হাওয়েল টেক্সটাইল (বিডি) লিমিটেড এবং সাফকো স্পিনিংস মিল।
অন্যদিকে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে শাশা ডেনিমস লি: সবচেয়ে বেশি লোকশান করেছে। প্রতিষ্ঠনটি ২০২১-২২ অর্থ বছরে আয়ের ক্ষেত্রে ৬৬৩ শতাংশ লোকসান করেছে। কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ২০২১-২২ অর্থ বছরের জুন শেষে ঋণাত্বক ৫.৭৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ২০২-২১ অর্থ বছরের জুন শেষে ছিল ১.০২ টাকা।
স্টাইলক্রাফ্ট লিমিটেড, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, আনলিমা ইয়ার্ন ডাইং লিমিটেড, তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং, জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আগের বছরের তুলনায় লোকসান করেছে।
তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে আটটি কোম্পানি ২০২১-২২ অর্থবছরে কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং, আরএন স্পিনিং মিলস লিমিটেড, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস লিমিটেড, দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেড, জাহিন স্পিনিং লিমিটেড এবং অ্যানলিমায়াার্ন ডাইং লিমিটেড।