পদোন্নতি বাতিল: ডিএসইর এইচআর পলিসি নিয়ে সভা তলব এসইসির
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তাদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে একযোগে ৯৫ জনকে পদোন্নতি দিয়েছিলেন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া। এর জের ধরে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। এবার তার দেওয়া পদোন্নতির তালিকা থেকে ১৮ কর্মকর্তার নাম বাতিল করেছে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ, যা গত রোববার (৬ অক্টোবর) কার্যকর হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ডিএসইর মানবসম্পদ নীতি (এইচআর পলিসি) সংক্রান্ত সভা ডেকেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
এইচআর নীতি সংক্রান্ত সভার বিষয়ে বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ১০ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় কমিশন প্রাঙ্গণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এইচআর নীতি সংক্রান্ত সভায় নিজ নিজ প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
এদিকে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) রেগুলেশন, ২০১৩ এর রেগুলেশন ৬.৬ অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদ এমডির সব সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যদি এমন কোনো হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তা নীতিমালা পরিপন্থী বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া, রেগুলেশন ৮.৯ অনুযায়ী, পরিচালকরা কোনোভাবেই এক্সচেঞ্জের ম্যানেজমেন্টের কার্যক্রমের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। তবে, এমডির কোনো সিদ্ধান্ত ভুল বা ডিএসইর জন্য ক্ষতিকর হলে পরিচালনা পর্ষদ বিএসইসিকে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করতে পারে। অভ্যন্তরীণ অডিট দল দিয়ে তদন্ত করারও সুযোগ আছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসইর অনেক কর্মকর্তার অভিযোগ, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নীতিমালা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় ১৮ কর্মকর্তার পদোন্নতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত রোববার এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্য ৮ কর্মকর্তাকে ‘ডাবল প্রমোশন’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসইর কর্মকর্তাদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
যাদের পদোন্নতি কেড়ে নেওয়া হয়েছে: উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) থেকে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হওয়া তিনজন। জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (এসএম) থেকে সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) হওয়া সাতজন। ব্যবস্থাপক থেকে জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক হওয়া পাঁচজন। জ্যেষ্ঠ এক্সিকিউটিভ থেকে উপ-ব্যবস্থাপক হওয়া তিনজন। মহাব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি বাতিল করা কর্মকর্তারা হলেন—মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাইদ মাহমুদ যোবায়ের ও সৈয়দ আল-আমিন রহমান। সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি বাতিল করা কর্মকর্তারা হলেন—মো. বজলুর রহমান, কামরুন নাহার, মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ পাঠান, মোহাম্মদ আহসান হাবিব, মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, সৈয়দ ফয়সাল আব্দুল্লাহ ও মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন রেজা। জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি বাতিল করা কর্মকর্তারা হলেন—ফারহানা শরিফা, সাদাত মারুফ হাসনায়েন, মামুন-উর-রশিদ, শরিফ গিয়াস উদ্দিন আলম ও মো. মশিউর রহমান চৌধুরী। উপ-ব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি বাতিল করা করা কর্মকর্তারা হলেন—মো. আব্দুল লতিফ মিয়া, মো. সফিকুল আলম ও মো. দেলোয়ার হোসেন।
চলতি বছরের গত ২৩ আগস্ট তারিক আমিন ভূঁইয়ার পদত্যাগের পরের দিন ২৪ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমানকে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য ডেকেছিলেন। ২৫ আগস্টের মধ্যে তারেক আমিনের পদত্যাগ এবং তার দ্বারা ডিএসইর কর্মচারীদের পদোন্নতির বিষয়ে ডিএসইকে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই দিন বিএসইসির কাছে তারেক আমিন ভূঁইয়াকে স্বপদে পুনর্বহাল এবং পদত্যাগের সঠিক কারণ তদন্তের দাবি জানায় বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। পরবর্তীতে তারিক আমিন ভূঁইয়া এক চিঠিতে বিএসইসিকে জানান, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন নীতিমালা মেনেই তিনি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়েছিলেন। নীতিমালা মেনে কাজের সুযোগ পেলে তিনি আবার ফিরতে চান। তবে, ২৫ আগস্ট অনেকটা তড়িঘড়ি করে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ।