আজ: শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৯ নভেম্বর ২০২২, বুধবার |

kidarkar

ইআরএফ গোলটেবিলে বক্তারা

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মই সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম

নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটানোর অন্যতম সহজ উপায় হচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো। বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করার পাশাপাশি সুবিধাভোগির কাছেও তা নিরাপদে, তাৎক্ষণিকভাবে পৌছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্লাটফর্মই হতে পারে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম।
বুধবার, (০৯ নভেম্বর)  ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সেমিনারে এমন অভিমত তুলে ধরেন বক্তারা। রাজধানীর পুরানা পল্টনে সংগঠনটির কার্যালয়ে “বৈধ পথে সহজে নিরাপদে ডিজিটাল মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে করণীয়” শীর্ষক  সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এতে অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞরা নানা সুপারিশ তুলে ধরেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যারা রেমিট্যান্স গ্রহণ করেন,তাঁদের ব্যাংকে গিয়ে লেনদেনের বিষয়ে এক ধরনের সামাজিক ও মনস্তাত্বিক দূরত্ব আছে। ফলে ঘরে বসেই অবৈধ পথে রেমিট্যান্স গ্রহণ করাকেও তাঁরা অপেক্ষাকৃত সহজ মনে করেন। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে যারা কাজ করছে তাদের সঙ্গে প্রবাসীদের দূরত্ব কমাতে না পারলে রেমিট্যান্স বাড়ানো যাবে না। এ জন্য সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম কার্যকারী ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশের সঙ্গে সপ্তাহে তিন দিন লেনদেন বন্ধ থাকছে। এ কারণে হুন্ডিতে লেনদেনের পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। সরকার এসব প্রথা ভেঙ্গে একটা প্রবণতা চালু করতে চায়। এ জন্য অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়াতে ডলারের বাজারে ভারসাম্য রাখতে হবে। বৈধ এবং অবৈধ পথে ডলারের হারের পার্থক্য বেশি হলে প্রবাসী শ্রমিকরা হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হন। প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম নিয়ে তাদের দেশত্ববোধ বাড়ালে তাঁরা বৈধ পথে ডলার পাঠাতে আগ্রহী হবেন। পাশাপাশি ডিজিটাল সেবা বাড়ানোর ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের চেয়ারম্যান ড. বজলুল এইচ খন্দকার বলেন, ২০১৯ ও ২০২০ সালে দেশে রেমিট্যান্স আসা অনেক বেড়েছিল। ওই সময়ে সরকার প্রণোদনা চালু এবং ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল। বর্তমানে রেমিট্যান্স আনতে বৈশি^কভাবে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি খরচ হচ্ছে। এটা কমিয়ে আনতে হবে। হুন্ডির মাধ্যমে দ্রুত ও অনেক কম খরচে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণেই ওই পথ বেছে নিচ্ছেন। এখন থেকে বৈধ পথে আনতে এমএফএসসহ ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবস্থা করতে পারলে খরচ ও সময় অর্ধেক কমানো সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে রেমিট্যান্স আসার পরেই তা ক্যাশ আউট হয়ে গেলে কিন্তু সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া যাবে না। বরং ইকোসিস্টেম শক্তিশালী করে ডিজিটাল মাধ্যমেই তা ব্যবহার করলে দেশের অর্থনীতি আরো বেশি শক্তিশালী হবে। এ জন্য দেশেও ডিজিটাল ফাইন্যান্স সেবা বাড়াতে হবে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, রেমিট্যান্স ডিজিটাল মাধ্যমে দ্রুত আনা সম্ভব।  অল্প সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ডিজিটাল মাধ্যমের বিকল্প নেই। এই রেমিট্যান্স বাড়াতে পারলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মি বলেন, শ্রমিকদের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যাংকি চ্যানেলে সহজে ও দ্রুত টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা গেলে তাঁরা সে পথ বেছে নেবে। যারা দেশে থেকেই রেমিট্যান্স আয় করেন তাঁদেরকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকের সংজ্ঞা নিয়েও কাজ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিএফআইইউর সাবেক উপপ্রধান ইস্কান্দার মিয়া বলেন, অবৈধভাবে যে শ্রমিকরা বিদেশে গেছেন তাঁদের টাকা কিভাবে বৈধ পথে আনা যায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এমএফএস এজেন্টদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। টাকা পাচারের পথ বন্ধ করতেও উদ্যোগ নেয়া জরুরী ।
বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল (অবঃ) শেখ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বৈধপথে তাৎক্ষনিকভাবে সরকারী প্রণোদণাসহ বিকাশে রেমিট্যান্স পাঠানোর সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এই মুহুর্তে বিশ্বের ৭০টি দেশ থেকে ৭৫টি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে সেটেলমেন্ট হয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্টে রেমিট্যান্স আসছে। ২০২১ সালে বিকাশে ২৪২৭ কোটি টাকা সমপরিমানের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এই বছর শেষে তা প্রায় চার হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল মওলা বলেন, প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্যা দূর করলে রিজার্ভের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা এখন মোকাবেলা করা সহজ হবে। এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স আনা গেলে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে মেটানো সম্ভব হবে।
উন্নয়ন সমনন্বয় এর এমিরেটস ফোলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী বলেন, প্রবাসীদের আয় করা ডলার একটি গ্রুপ রেখে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উৎস পর্যায়ে হুন্ডির সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি সরাসরি প্রবাসীদের এমএফএসে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুবিধা চালু করা সম্ভব হলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ানো সম্ভব হবে।

ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে গোল বৈঠক আলোচনা সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.