আজ: বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ইং, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৭ নভেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

বোরো মওসুমের আগে মূল্য পরিশোধের জটিলতায় সৌদি থেকে ইউরিয়া সার আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলমান ডলার সংকটের মধ্যে– ইউরিয়া সার আমদানির মূল্য পরিশোধ নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এতে ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে চলা বোরো মওসুমের আগে ১২ লাখ টন ইউরিয়া আমদানি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) অর্থ মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের জানিয়েছে, ‘আমদানি মূল্য পরিশোধ নিয়ে আমরা জটিলতার মধ্যে পড়েছি’। আমদানি ব্যাহত হলে আসন্ন বোরো ধান চাষের মওসুমে– যখন সারটির চাহিদাও বিপুল থাকবে– তখন এর ফলে সার সংকট দেখা দিতে পারে বলেও সতর্ক করেছে।
তবে কৃষি মন্ত্রণালয় দাবি করছে, সরকার যেকোনো মূল্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাই কোনো সার সংকট হবে না।
জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) চুক্তির আওতায়- সৌদি আরব, কাতার ও দুবাই থেকে প্রতিবছর ১২ লাখ টন ইউরিয়া আমদানি করে বাংলাদেশ।
এই আমদানির জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো– সৌদির ব্যাংকগুলোর সঙ্গে রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট এপ্লিকেশন (আরএমএ) পরিষেবার মাধ্যমে এলসি (ঋণপত্র) সমন্বয় করে থাকে। আরএমএ পরিষেবা দেয় আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং পেমেন্ট সিস্টেম- সুইফট।
বিসিআইসি চেয়ারম্যান শাহ মো. ইমদাদুল হক অর্থ মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে লেখা পৃথক দুই চিঠিতে– প্রধানত সৌদি আরব থেকে সার আমদানির মূল্য পরিশোধ ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৬ লাখ টন ইউরিয়া রপ্তানি করে থাকে।
সৌদির সার সরবরাহকারী– সাবিক এগ্রি-নিউট্রেন্ট কোম্পানিকে দেওয়া সৌদি ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত ক্রেডিট সীমা ফুরিয়ে আসার দিকেও তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সাবিক এগ্রি-নিউট্রেন্ট সৌদি আরবের আল বিলাত ব্যাংক ও আল জাজিরা ব্যাংকের গ্রাহক। সৌদির এই ব্যাংক দুটি কোম্পানিটির হয়ে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক লেনদেন সম্পন্ন করে। সাবিক’কে দেওয়া উভয় ব্যাংকের একটি সম্মিলিত ক্রেডিট সীমা রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত ‘ক্রেডিট লিমিট’ পেরিয়ে যাওয়ায় ব্যাংক দুটি সমস্যার মধ্যে পড়েছে।
বিসিআইসি চেয়ারম্যানের মতে, ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের কোনো কোনো ব্যাংক ঋণপত্রের (এলসি) আংশিক পেমেন্ট করছে। এতে ক্রেডিট লাইনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে; আমদানি ও রপ্তানিকারক দুই দেশের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং বাণিজ্যিক আস্থায় চিড় ধরছে বলেও উল্লেখ করেন বিসিআইসি চেয়ারম্যান।
সার আমদানির মূল্য পরিশোধ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দূর করতে- গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এমডি এবং বিসিআইসি চেয়ারম্যান সভা করেছেন। তারপরও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি বলে জানান বিসিআইসি’র কর্মকর্তারা।
এর আগে গত ২৫ অক্টোবর সাবিকের সিনিয়র ম্যানেজার- নাওয়াফ আল সাবহান ও সেলস এক্সিকিউটিভ- মোহাম্মদ আল আবদুল করিম ঢাকায় এসে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বিসিআইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে সভা করেন।
পেমেন্ট সমস্যার সমাধানের জন্য সৌদি আরব থেকে আসা প্রতিনিধিরা– দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সৌদি এক্সিম ব্যাংকে এলসি খোলার পরামর্শ দেন।
এরপর সৌদি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সোনালী ব্যাংক। কিন্তু, মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাংকটি জানায় তারা সুইফট পেমেন্ট ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত নয়। অর্থাৎ, শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো ব্যবস্থা না নিলে সাবিক থেকে সার আমদানি করা সম্ভব হবে না।
ডলার সংকটের কারণে সারসহ জরুরি বিভিন্ন পণ্য আমদানি যাতে ব্যাহত না হয়– সেজন্য গত ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ নির্বাহীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই নির্দেশনার পর বাণিজ্য সচিব এবং খাদ্য সচিব জানান- সার, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যক পণ্যের আমদানি দায় মেটানোর মতো ডলার কোনো ব্যাংকে না থাকলে– এমনকী রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করে এলসি দায় মেটাতে (বাংলাদেশ ব্যাংকের) গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ইউরিয়া সার আমদানি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়া পরও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, সার আমদানিতে কোন সংকট হবে না। ‘সার আমদানির ব্যয় যাই হোক না কেন– কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই বিল দেবে’।
তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত’ সার মজুদ রয়েছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় ‘অতিরিক্ত’ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিসিআইসি সূত্রে জানা যায়, এ বছর ২৬ লাখ টনের বেশি ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে। একইসঙ্গে, চলতি বছরে ‘নিরাপত্তা মজুদ’ হিসেবে কর্তৃপক্ষ আরও ৬ লাখ টন ইউরিয়া আমদানি করবে।
আমন ধানের মৌসুমে ৬-৭ লাখ টন ব্যবহার হয়। বোরো মৌসুমে এই চাহিদা দ্বিগুণের বেশি থাকে।
আগামী মাস থেকেই বোরো আবাদের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। তবে জানুয়ারি থেকে ইউরিয়ার চাহিদা বাড়তে থাকবে।
আমদানিতে মাত্র একটি উৎসের ওপর নির্ভর করার জন্য বিসিআইসি’কে দায়ী করেছেন- সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম।
তিনি বলেন, ‘মূল সমস্যা হলো, বিসিআইসি একটি মাত্র উৎস থেকে সার আমদানি করে। আমরা বিসিআইসিকে সাবিক ছাড়াও বিকল্প উৎস থেকে আমদানির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি। তাদের বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত’।
সার আমদানির আংশিক এলসি মূল্য পরিশোধের অভিযোগ অস্বীকার করে আফজাল করিম বলেন, ‘এ অভিযোগ সঠিক নয়। অন্তত আমাদের তরফ থেকে পেমেন্ট সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হচ্ছে না’।
শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, এক্ষেত্রে দেখা দেওয়া জটিলতাগুলো জরুরিভাবে দূর করা হবে। সার আমদানি নিরবচ্ছিন্ন থাকবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.