মালিকানা পরিবর্তন হলেও কমেছে আয়
বিনিয়োগকারিদের সুখবর দিতে পারছেনা ফু-ওয়াং ফুডস
শাহ আলম নূর : খাদের কিনারায় থাকা ফু-ওয়াং ফুডস’র মালিকানা পরিবর্তন করা হয়েছে ভাল কিছুর প্রত্যাশায়। তবে মালিকানা পরিবর্তনের নয় মাস চলে গেলেও বিনিয়োগকারিদের সুখবর দিতে পারেনি শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ফু-ওয়াং ফুডস।
বিনিয়োগকারিদের জন্য ভাল কিছু করার আশায় তিনজন নতুন বোর্ড সদস্য দেওয়া হয়েছিল তবুও খাদ্য উৎপাদন ব্যবসা করা কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড এখনও নেতিবাচক উপার্জনের কার্যকারিতা প্রদর্শন করে চলেছে।
শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত ফু ওয়াং ফুড লিমিটেড ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তার নিট মুনাফায় ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরের একই সময়ে ০.৬৮ কোটি টাকার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে ০.৪৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে। যা গত চার বছরে এটির সর্বনিম্ন ত্রৈমাসিক মুনাফা ছিল। ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড’র শেয়ার প্রতি আয় গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে ০.০৬ টাকা থেকে সর্বশেষ প্রান্তিকে ০.০৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা এবং বোর্ডের অনেক অনিয়মের পরে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটিকে একটি নতুন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান- মিনোরি বাংলাদেশকে হস্তান্তর করে। প্রতিষ্ঠানটির হাত বদল কার্যকর করতে নতুন করে ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বলে উল্লেখ করা হয়।
হাতবদল কার্যকর করতে মিনোরি বাংলাদেশ ফু-ওয়াং ফুডের ৭.৬১ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করে এবং প্রতিষ্ঠানটির আগের তিন পরিচালককে সরিয়ে কোম্পানির বোর্ডে তিনটি পরিচালকের পদ পেয়েছে মিনোরি বাংলাদেশ।
ফু-ওয়াং ফুড’র তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আহমেদ চৌধুরী এবং পরিচালক আফসানা তারান্নুম ও লুবাবা তাবাসসুমকে সরিয়ে বোর্ডে স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন মিয়া মামুন, মোঃ আফজাল হোসেন এবং সিদরাতুল মাহবুব হাসান।
জাপানের প্রতিষ্ঠান মিনোরি কো: লিমিটেডে’র একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ। পরবর্তীকালে ফু-ওয়াং ফুডের কারখানার সুবিধাগুলিকে আপগ্রেড করতে এবং এর বিপণন চ্যানেলগুলি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়। ফু-ওয়াং ফুডের দায়িত্ব নেয়ার পর অন্তত নয় মাস কেটে গেছে এবং কোম্পানিটি এসময়ে তিনটি ত্রৈমাসিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
কোম্পানিটি ২০২১-২২ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ০.২৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ০.৩৩ কোটি টাকা।
ফু-ওয়াং ফুডের এক কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময় ডলার সংকটে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে মুনাফায় প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন আমরা নয় মাসেরও কম সময় আগে কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করেছি। একটি কোম্পানির হাতবদল করার পর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নয় মাস খুব কম সময়। আমরা এখন একটি শক্তিশালী বিপণন নীতির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাজারের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি সহ বেশ কিছু বিষয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যে উদ্যোগ নিয়েছি তা সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি। আমাদের আগামী ত্রৈমাসিকে আরও ভাল করতে হবে।
ফু ওয়াং ফুডের আয়ও ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৪.৭ শতাংশ কমে ২৮.৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, এর আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৮.৭ কোটি টাকা।কোম্পানির নিরীক্ষক তার ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তুত করা নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে বলেছে, যে ফার্মটি ৮৯ কোটি টাকা মূল্যের বিক্রয় দেখিয়েছে তবে এটি প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করতে পারেনি।
নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অনুসারে, কোম্পানিটি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ২৮.৩০ কোটি টাকার একটি ইনভেন্টরিও দেখিয়েছিল, কিন্তু এই বিষয়ে ২০.৫৭ কোটি টাকার ব্যবধান পাওয়া গেছে।
এছাড়া অগ্রিম বেতন হিসেবে দেওয়া ০.২৮ কোটি টাকা, ব্রিস্টি বিস্কুট ফ্যাক্টরিকে দেওয়া ০.১৯ কোটি টাকা, সহযোগী সংস্থা ফু-ওয়াং বেভারেজকে দেওয়া ৮.৪১ কোটি টাকা এবং কাঁচা মাল সরবরাহ খাতে ব্যয় করা ১.৩২ কোটি টাকার বিপরীতে কোনো নথি বা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেখাতে পারেনি শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি।
এই বিষয়গুলিকে উদ্ধৃত করে, কোম্পানিটি তার চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের এর জন্য দেওয়া সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, বোর্ডের দ্বারা সমস্যাগুলির উপর একটি বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করার পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফু-ওয়াং ফুড ২০১৮ সাল পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের স্টক লভ্যাংশ প্রদান করেছে। পরে, এটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এর জন্য শুধুমাত্র ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের ১.৬৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে৷ তবে এটি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য কোনও লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি।
/আমাদের বাচান শেয়ারবাজার দেখার কি কেউ নেই।