আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৯ নভেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার |

kidarkar

করোনা বিধিনিষেধ বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: টানা কয়েকদিনের মতো করোনা বিধিনিষেধ বিরোধী বিক্ষোভে বেসামাল চীন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের জিরো কোভিড নীতির বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। সপ্তাহজুড়ে দেশটির বাণিজ্যিক হাব সাংহাইসহ বিভিন্ন শহরে চলছে বিক্ষোভ। রাস্তায় নেমে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন করোনা বিধিনিষেধ বিরোধীরা। রাজধানী বেইজিং, সাংহাই, উহান, চেংদু ও উরুমকিতে বিক্ষোভ হচ্ছে কয়েকদিন ধরে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এতো বড় বিক্ষোভ হতে দেখা যায়নি দেশটিতে, বলছেন চীনা বিশ্লেষকরা।

করোনা মহামারি ৩ বছরের কাছাকাছি হলেও এখনও চীনে হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। করোনাভাইরাস সংক্রমণ গত কয়েকদিনে কয়েক দফা বেড়ে গেছে দেশটিতে। তা সত্ত্বেও দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াং প্রদেশের একটি আবাসিক ভবনে বৃহস্পতিবার আগুন লেগে ১০ জন নিহত হওয়ার জেরে বিধিনিষেধ বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা জানান, ওই ভবনের বাসিন্দারা আগুন লাগার সময় দ্রুত বের হতে পারেননি কারণ একটা অংশ লকডাউনের আওতায় ছিল। যদিও নগর কর্মকর্তারা বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন। এ ঘটনার জেরে রোববার (২৭ নভেম্বর) দেশটির বাণিজ্যিক হাব সাংহাইয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয়রা।

এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাংহাইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভের জেরে বেশ কয়েকজনকে আটক করার খবরও পাওয়া গেছে। ১৯৮৯ সালে তিয়ানানমেন স্কোয়ারের বিক্ষোভের পর থেকে এতো বেশি চীনা নাগরিক একটি একক ইস্যুতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে গ্রেফতারের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও।

এশিয়া সোসাইটির একজন চীনা বিশেষজ্ঞ বেতস গিল বলেন, ‘শি জিনপিংয়ের ১০ বছরের ক্ষমতায় থাকার সময়কালে, এটি সরকারি নীতির বিরুদ্ধে নাগরিকদের সবচেয়ে বড় ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনা।’

জিরো কোভিড পলিসির বিরুদ্ধে জনসাধারণের অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, অনলাইন, অফলাইনসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ২০১৯ সালে হংকং ইস্যুতে করা নিরাপত্তা আইন নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়ে শি জিনপিংয়ের সরকার। এরপর এবারই অভ্যন্তরীণভাবে এমন বিক্ষোভের মুখোমুখি হচ্ছে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার।

শি জিনপিং কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধের’ নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যক্তিগত দায় স্বীকার করেছিলেন। গত অক্টোবরে কমিনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেসে তিনি বলেছিলেন, ‘সবার আগে মানুষের জীবন বাঁচা প্রয়োজন।’ ‘সঠিক’ কোভিড নীতিকে তিনি তার রাজনৈতিক অর্জনের মধ্যেও বিবেচনা করেছিলেন।

চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, আবার হু-হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বাড়ছে আক্রান্ত ও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর অভিযোগের তীর ছোড়া হয় চীনের দিকেই। এখনও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আছে। আর সেই কারণেই এবার চীন সরকার একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে। আড়াই বছর আগে তৈরি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি চাইছে না শি জিনপিংয়ের সরকার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘যদিও এভাবে বিক্ষোভে জনসাধারণের ফুঁসে ওঠা শি জিনপিংয়ের জন্য বিব্রতকর। তবে এতে খুব একটা পরিবর্তন ঘটবে না। কেননা দল, সামরিক, নিরাপত্তা এবং প্রচারযন্ত্র সম্পূর্ণ তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

তবে শি জিনপিং জিরো কোভিড নীতি থেকে সরে আসবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। চীনের মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবী তেং বিয়াও বলেন, ‘যদি তিনি সেখান থেকে সরে আসেন, তাহলে এর অর্থ হবে তার অতীতের শূন্য-কোভিড নীতি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাকে এর দায় নিতে হবে। এটি তার ইমেজের ক্ষতি করবে।’

তবে শি জিনপিংয়ের নীতিতে তেমনটি নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

যদিও প্রস্তুত হওয়ার আগে যদি তিনি তার কোভিড নীতিতে পরিবর্তন আনতেন, তবে বহু মানুষের মৃত্যু, আক্রান্ত হওয়া এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে যেতে পারতো।

দেশব্যাপী প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মানসম্মত করার ও বাসিন্দাদের এবং অর্থনীতির জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ অগ্রগতি প্রয়াসে শি জিনপিং সরকার গত মাসে ২০টি পদক্ষেপ নেয় এবং শূন্য-কোভিড নীতিতে পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে শি আনুষ্ঠানিকভাবে সমস্ত প্রাদুর্ভাব রোধ করার প্রয়োজনীয়তা প্রত্যাখ্যান করেননি। সেকারণে অনেক স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এখনও সতর্কতার অবলম্বন করতে গিয়ে কঠোর লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইনের মতো নিয়মগুলো বাস্তবায়ন করছে। এতেই ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।

জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ ফেলো উইলি ল্যাম বলেন, ‘এই পর্যায়ে তারা অবগত নয় বলে মনে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘একদিকে, শি জিনপিং এবং তার দলকে শক্তিশালী বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু একই সময়ে, আমরা নতুন প্রশাসনের কাছ থেকে সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি দেখতে পাচ্ছি।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.