আজ: বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ইং, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৬ ডিসেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার |

kidarkar

টান পড়েছে বাড়তি তারল্যে, আমানত চাঙা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ব্যাংক খাতে গত এক বছরে আমানত ১ লাখ ১ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা বেড়েছে। আর ঋণ বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। তবে একই সময়ে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমেছে।
এই চিত্র দেখে বোঝা যায়, গ্রাহকেরা ব্যাংক থেকে ব্যাপক হারে টাকা তুলে নিচ্ছেন বা ব্যাংকের আমানত কমে যাচ্ছে বলে যে গুজব রটেছে, তা সঠিক নয়। মূলত এই সময়ে ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্যই কেবল কমেছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে। এ জন্য অনেকে জমানো টাকা তুলে ব্যয় মেটাচ্ছেন। তবে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে আমানত কমেনি। দুর্বল ব্যাংকগুলোর আমানত কমে তা গিয়ে জমা হচ্ছে ভালো পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত ও শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তিসম্পন্ন বিভিন্ন ব্যাংকে। আবার মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অন্য খাতে বিনিয়োগ করলেও তা ঘুরেফিরে ব্যাংকেই জমা হচ্ছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে, এটা ঠিক। তবে খারাপ ব্যাংক থেকে আমানত ভালো ব্যাংকে যাচ্ছে। মানুষ এখন খারাপ মালিকদের ব্যাংক চিনতে শুরু করেছেন। এ জন্য তাঁরা ওই সব ব্যাংকে টাকা রাখছেন না। সরকারি–বেসরকারি খাতের সবার–ই আর্থিক খাতের প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে মন্তব্য করা উচিত। এতে অর্থনীতির ক্ষতি হয় না।
জানা গেছে, ২০২০ সালের অক্টোবর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানত ছিল ১২ লাখ ৫১ হাজার ১২০ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬২ কোটি টাকা। এই সময়ে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এ বছরের অক্টোবরে তা আরও বেড়ে হয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলো যে আমানত সংগ্রহ করে তার ১৭ শতাংশ সিআরআর (নগদ জমা হার) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমা) হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। আর ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো জমা রাখে সাড়ে ৯ শতাংশ আমানত। বাকি অর্থ ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে বা বিনিয়োগ করতে পারে।
জানা যায়, ২০২০ সালের অক্টোবরে ব্যাংকের ঋণ ও বিল (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ) ছিল ১১ লাখ ১৭ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। ২০২১ সালের একই মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ লাখ ২২ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। করোনার এই এক বছরে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। চলতি বছরের অক্টোবরে এসে ঋণ ও বিল বেড়ে ১৪ লাখ ৩৪৫ কোটি টাকায় ওঠে। অর্থাৎ গত এক বছরে ঋণ ও বিল বেড়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা।
এ বছরের এপ্রিল মাস থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। আবার মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে ১০৫ টাকায় উঠেছে, যা গত বছরে ছিল ৮৫ টাকা। এতে আমদানি খরচ অনেক বেড়েছে। ফলে ব্যাংকের ঋণ ও বিল বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে ব্যাংকগুলোর হাতে সিআরআর ও এসএলআর রাখার পর ২০২০ সালের অক্টোবরে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের একই মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ২০ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অতিরিক্ত তারল্য অবশ্য কমে ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ ১১ মাসে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ৫০ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস গত শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ব্যাংকে টাকা নেই, এমন কথা ছড়ানো হয়েছে। তাই সাধারণ গ্রাহক আতঙ্কে ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। এখন সেই গ্রাহকেরা আবার ব্যাংকে টাকা রাখতে শুরু করেছেন।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.