আইপিও তহবিলের শুধুমাত্র ১০% ব্যবহার করা হয়েছে ব্যবসা সম্প্রসারণ কাজে
শাহ আলম নূর : ব্যবসা সম্প্রসারনের জন্য ২০২২ সালে আইপিও তহবিলের শুধুমাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। এক বছরে প্রাথমিক পাবলিক অফারিংয়ের (আইপিও) মাধ্যমে ১,০৮৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে নয়টি কোম্পানি। কিন্তু চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে এসব কোম্পানি তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য তহবিলের অর্ধিকাংশই ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) কোম্পানিগুলি ২০২২ সালে নতুন মূলধন সংগ্রহ করেছে, কিন্তু এই তহবিলের বেশিরভাগই সম্প্রসারণের জন্য ব্যবহার করেনি। যা অর্থনীতির জন্য তেমন সুখবর নয়।
ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে নয়টি কোম্পানি ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য মাত্র ১১০.৩ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ অর্থের মধ্যে ১৪৯.৯ কোটি টাকা বা ১৩.৭৭ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ৭৪১.৭ কোটি টাকা বা মোট তহবিলের ৬৯.০৯ শতাংশ এসএমই, প্রকল্প অর্থায়ন, ফিক্সড ডিপোজিট রসিদ (এফডিআর), ট্রেজারি বন্ড এবং সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা হয়েছিল।
কোম্পানিগুলোর আইপিও প্রসপেক্টাস অনুযায়ী অবশিষ্ট তহবিল ব্যাঙ্ক ঋণ এবং আইপিও খরচ পরিশোধের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
২০২১ সালে ২০টি কোম্পানি ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছ, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২০ সালে আটটি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৯৮৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, আইপিও তহবিলগুলি সাধারণত বাজারে নগদ প্রবাহ বাড়ায়, নতুন চাকুরী তৈরি এবং অর্থনীতিতে গতি আনে।
কোম্পানিগুলোর আইপিও প্রসপেক্টাস অনুসারে, তহবিলের একটি ছোট অংশ বিদ্যমান সক্ষমতা বাড়ানো বা নতুন ইউনিট স্থাপনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকি তহবিল পুঁজিবাজার, এসএমই, প্রজেক্ট ফাইন্যান্স, এফআরডি, ট্রেজারি বন্ড, সরকারি সিকিউরিটিজ, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ বহনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিধি মোতাবেক- আইপিও থেকে উত্তোলিত অর্থের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ঋণ পরিশোধ বা কার্যকরী মূলধন হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।
২০২২ সালে, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যাল এবং জেএমআই হাসপাতাল বুক বিল্ডিং পদ্ধতির অধীনে ৭৫ কোটি টাকা করে সংগ্রহ করেছে।
এদিকে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স ১৯.৪ কোটি টাকা, বিডি থাই ফুড ১৫ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪২৮ কোটি টাকা, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ১৫ কোটি টাকা, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৫ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ৪২৫ কোটি টাকা এবং ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স ২০ কোটি ২৬ লাখ টাকা উত্তোলন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, “শিল্পায়নের জন্য পুঁজিবাজার একটি বড় উৎস। এটি আরও কর্মসংস্থান তৈরি করবে, এবং মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করবে। “তিনি আরও বলেন, “কিছু বহুজাতিক কোম্পানি আমাদের দেশে ব্যবসা করছে, কিন্তু তারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। কিন্তু তারা প্রতিবেশী দেশগুলির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। আমাদের পুঁজিবাজারের স্বার্থে তাদের কর মওকুফের প্রস্তাব দেওয়া উচিত।” যত বেশি বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে, দেশের পুঁজিবাজার তত বেশি স্থিতিশীল হবে বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “উৎপাদন খাতের কোম্পানিগুলোর লাভের পরিমাণ কমেছে। ফলে কিছু কোম্পানি আইপিওর শর্ত পূরণ করতে পারেনি।আবার শেয়ারবাজারে কিছুটা তারল্য সংকট রয়েছে। এতে কমেছে আইপিওর সংখ্যা। বেশ কয়েকটি কোম্পানি আইপিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, “কমিশন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অনুমোদন দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু কখনো এটি সময় নেয়, কারণ আইপিও আবেদনে তথ্য অনুপস্থিত থাকে, বা কিছু পয়েন্ট আরও স্পষ্ট করণের প্রয়োজন হয়।
“যদি কোনো কোম্পানি সমস্ত নিয়ম-কানুন মেনে আইপিও প্রসপেক্টাস উপস্থাপন করে এবং যথাযথ নথিপত্র সরবরাহ করে তবে কোন বিলম্ব ছাড়াই অনুমোদন পাবে বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ, আইপিও’র মাধ্যমে ২০১৯ সালে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ৬৫৫ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ১,৪৪২ কোটি টাকা, ২০১৬ ৯৫০ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে ৬৭৫ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে ৩,২৬৩ কোটি টাকা, ২০১৩ সালে ৯১০ কোটি টাকা, ২০১২ সালে ১,৮৪২ কোটি টাকা, ২০১১ সালে ৩,২৩৩ কোটি টাকা, ২০১০ সালে ৩,৩৯০ কোটি টাকা এবং ২০০৯ সালে ৯১৭ কোটি টাকা বিভিন্ন কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করেছে।