আজ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৯ ডিসেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

আসছে শীত, বাড়ছে পর্যটক

শাহ আলম নূর: শীত মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে দেশের পর্যটক কেন্দ্রগুলেঅ ভরে উঠছে। অন্যান্য স্থানের মত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে বাড়ছে পর্যটকের আনাগোনা। পর্যটকদের ভীরে এসব এলাকার হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও সৈকত এলাকার সব ব্যবসায় ফিরছে চাঙ্গাভাব।
সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে মহামারী করোনার বিধিনিষেধ শিথিল করার পর এবারই চলতি বছর দেশের পর্যটন শিল্প বেশ ভাল সময় পাড় করছে। ডিসেম্বর ছুটির মৌসুম হওয়ায় বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলো দেশী এবং বিদেশী উভয় পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে।
পর্যটকদের সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে, বর্তমানে হোটেলগুলোর ৯০ শতাংশ রুম ইতিমধ্যেই বুকিং হয়েছে। নতুন বছরের জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে তারা আশা করছেন।
তারা বলছেন বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে দেশে ফিরে আসেন। এসময় তারা দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানগুলো পরিদর্শন করেন।
তারা বলছেন চলতি বছর দেশের পর্যটন শিল্প বেশ সুসময় পাড় করছে। এসুযোগে তারাও আতিথীদের বেশ ভালভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে চলতি বছর দেশের পর্যটন শিল্পের অবদান অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় বাড়াবে বলে সংশ্লিষ্ঠরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ট্যুরিজম স্যাটেলাইট হিসাব ২০২০ তথ্যানুসারে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের মোট জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ছিল ৩ শতাংশ। এসময় মোট কর্মসংস্থানের ৮ শতাংশ হয়েছে পর্যটন খাতে।
কক্সবাজারের সিগাল হোটেল গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার প্রসেনজিৎ গুহ ঠাকুরতা বলেন চলতি বছর তারা দেশি, বিদেশী পর্যপকদের বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন। কারণ পর্যটকদের মধ্যে বেশ উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের হোটেলের ৯০ শতাংশের বেশি রুম বুকিং হয়েছে বলে তিনি জানান।
পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন প্রতি বছর নভেম্বরে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর, ইউরোপ এবং আমেরিকায় অবস্থানরত বাংলাদেশীদের অনেকে ছুটি কাটাতে দেশে ফিরে আসেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় অনেকেই ইতোমধ্যে দেশে চলে এসেছেন। এতে দেশের পর্যটক শিল্প বেশ ভাল সময় পার করছে।
কক্সবাজারের রয়্যাল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্টের বিক্রয় ও বিপণন পরিচালক আব্দুল আউয়াল বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় এ বছর তাদের রুম বুকিং অনেক বেশি হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে তাদের হোটেলের ৭০ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। অন্যান্য সময় তাদের েেহাটেলের ৪৮৩ কক্ষ বিশিষ্ট হোটেলটির বুকিং হার প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত তাদের েেহাটেলের রুম বুকিং ৭০ শতাংশের বেশি থাকবে বলে আশা করছেন।
চলমান শীত মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই সবুজ চা বাগানের জন্য বিখ্যাত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা হবিগঞ্জের প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট অধিকাংশ রুম বুকিং হচ্ছে।
রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার জোসেফ গোমেজ বলেন, “পর্যটকদের সমাগম বেশ ভালো। আমরা ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়ী গ্রুপ উভয়ের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।”
গত বছর একই সময়ে মোটামুটি সংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি ছিল। কারন কোভিড’র-১৯ বেশ কিছু বিধিনিষেধ তখনও বহাল থাকায় অনেকের মধ্যে বেশ আশঙ্কা ছিল।
বর্তমানে সবকিছু স্বাভাবিক থাকায় পর্যটকদের মধ্যে ভয়ের কোন কারন নেই। এবং ভ্রমন থেকে বিরত করার কিছু নেই বলে গোমেজ মনে করছেন।
এদিকে শীতের শুরুতেই এবার পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে আসতে শুরু করেছেন বিদেশি পর্যটকরা। গত তিনদিনে শ্রীমঙ্গলের শুধু নিসর্গ নীরব ইকো কটেজেই এসেছেন ১২ জন। এদের অনেকেই উঠেছেন বিভিন্ন রিসোর্ট ও কটেজে।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ১০ মাস আগে দক্ষিণ এশিয়ায় ভ্রমণে বের হয়েছেন। এক সপ্তাহ হলো বাংলাদেশে এসেছেন। এখানকার কৃষ্টি কালচার এবং মার্কেটিং তাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে।
‘চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ‘চামুজ্ঞ’র ম্যানেজার শংকর চত্রী বলেন, গত তিনদিনে এখানে শতাধিক বিদেশি নারী-পুরুষ খাওয়া-দাওয়া করেছেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী ইকো কটেজে বোর্ডার হিসাবে ১২ জন ছিলেন।
‘চামুজ্ঞ’রেস্টুরেন্টের সিনিয়র স্টাফ তাপস দাশ তালিকা তুলে ধরে বলেন, আমাদের এখানে যারা এসেছেন তারা হলেন, ১. ভ্যালিরি-বেলজিয়াম, ২. অলিবার-বেলজিয়াম, ৩. জুলি-বেলজিয়াম, ৪. অ্যানিতা-ফ্রান্স, ৫. লাউরি-আমেরিকা, ৬. জিয়াংর-চায়না, ৭. চারা-কানাডা, ৮. কেটিং-অস্টেলিয়া, ৯. ইউগো-ইতালি, ১০. হিন্যারি-ফ্রান্স, ১১. ইজারত- ফ্রান্স ১২. স্টিফেন- জার্মান।
স্টিফেন নামের ওই জার্মান নাগরিক বলেন, বাংলাদেশ তার কাছে খুব ভালো লেগেছে। এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করছি। জলাশয়ের পাখির কিচিরমিচির খুবই ভালো লেগেছে। শ্রীমঙ্গলের টি প্লান্টেশন ইউনিক লেগেছে। এখানকার মানুষ অতিথিপরায়ন।
মৌলভীবাজার পর্যটনসেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাজী সামছুর রহমান বলেন, এবার শীতের শুরুতেই বিদেশি পর্যটকদের ঢল নেমেছে। বিগত বছরগুলোতে পর্যটক আসা বন্ধ ছিল। অনেক কটেজও বন্ধ ছিল। রিসোর্টের ব্যবসায় অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। এবার বিদেশিদের আনাগোনায় রিসোর্ট কটেজ ব্যবসায় আশার প্রদীপ জ্বলেছে।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়ও পর্যটকদের বেশ ভাল উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কুয়াকাটায় সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অংশের সাথে এই অঞ্চলের যোগাযোগের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দেশি-বিদেশি ভ্রমণ প্রেমিকদের কুয়াকাটায় আসতে বেশ উৎসাৎাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা বলছেন ১৫ ডিসেম্বর থেকে পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
কুয়াকাটার একটি আবাসিক হোটেল খান প্যালেসের ব্যবস্থাপক আবদুস শাকুর বলেন, বর্তমান যে পরিমান পর্যটক এখানে আসছে এমন ধারাবাহিকতা আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। চলতি বছর তারা করোনাকালিন সময়ের ক্ষতি পূরণ করতে পারবে বলে আশা করছেন।
গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা-এর নির্বাহী পরিচালক প্রদীপ সান্যাল বলেন, গত দুই বছর তাদের ব্যবসার অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। তবে বর্তমানে উন্নতি হচ্ছে। শুক্রবার এবং সরকারি ছুটির দিন তাদের রিসোর্টের সকল কক্ষ বুকিং হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ এবং সাজেক উপত্যকা সহ বাংলাদেশের ১,০০০ টিরও বেশি পর্যটন স্থান রয়েছে। এসব স্থানে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে।
ট্যুর গ্রুপ বাংলাদেশ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরানুল আলম বলেন, প্রতি বছর শীতে সেন্টমার্টিনে বিপুল সংখ্যক পর্যটককের আগমন ঘটে। তবে চলতি বছর জাহাজের সংখ্যা সীমিত হওয়ায় তাদের সংখ্যা অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম।
তিনি বলেন অন্যান্য বছর প্রতিদিন প্রায় ১০,০০০ পর্যটকের আগমন ঘটে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে গড়ে প্রায় ৫০০ মানুষ যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, শীত ও বর্ষাকালে বান্দরবানে অনেক তরুণ-তরুণী হাইকিং ও ট্রেকিংয়ে যায়। যদিও বর্তমানে বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তিনি বলেন অন্যান্য সময়ের তুলনায় বর্তমানে শ্রীমঙ্গল এবং সাজেকেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পর্যটক কম রয়েছে। কারন জীবনযাত্রার ব্যায় বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক মধ্যবিত্ত মানুষ ভ্রমন করতে সাহস পাচ্ছেন না।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি রাফিউজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে দেশীয় পর্যটন খুব ভালো সময পার করছে।
তবে বর্তমানে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা আশানুরূপ নয়। অনেক দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারনে এমন হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.