আজ: শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ইং, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০১ জানুয়ারী ২০২৩, রবিবার |

kidarkar

জাতিসংঘের ‘ঘৃণ্য’ সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয় ইসরায়েল : নেতানিয়াহু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল। একইসঙ্গে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এটিকে ‘ঘৃণ্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং বলেছেন, জাতিসংঘের ‘ঘৃণ্য’ এই সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয় ইসরায়েল।

অন্যদিকে শনিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির মাধ্যমে গৃহীত এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন। রোববার (১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

মূলত ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল গত পাঁচ দশক ধরে ফিলিস্তিনের বেশ কয়েকটি অঞ্চল অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। অবৈধ এই দখলদারিত্বের কারণে ইসরায়েল ‘কী ধরনের বিচারের মুখে পড়বে’ সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইজিসে) মতামত জানতে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে।

প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশসহ ভোট দেয় মোট ৮৭টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসহ ২৬টি দেশ। আর ভোটদানে বিরত ছিল ৫৩টি দেশ। ৮৭টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় এটি পাস হয়ে যায়।

আর জাতিসংঘে এই প্রস্তাব পাস হওয়াকে নিজেদের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করছে ফিলিস্তিন। তারা বলেছে, এর মাধ্যমে ইসরায়েলের অপরাধ উন্মোচিত হবে।

রয়টার্স বলছে, গত শুক্রবারের এই ভোটটি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে। ইহুদি এই রাজনীতিক এই সপ্তাহে ইসরায়েলের সরকারের প্রধানের পদ গ্রহণ করেছেন।

কট্টরপন্থি এই রাজনীতিক এমন কিছু দলকে নিয়ে জোট বেঁধে সরকার গঠন করেছেন যারা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণকে অগ্রাধিকার তালিকায় শীর্ষে রেখেছে এবং সরকারে এমন দলও রয়েছে যারা পশ্চিম তীরের ভূখণ্ডকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়।

জাতিসংঘের সেই ভোটাভুটির পরই নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল এই ‘ঘৃণ্য সিদ্ধান্ত’ মানতে বাধ্য নয়। এক ভিডিও বার্তায় বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইহুদি জনগণ তাদের নিজস্ব ভূমিতে দখলদার নয় বা আমাদের চিরন্তন রাজধানী জেরুজালেমেও দখলদার নয়। জাতিসংঘের কোনও প্রস্তাবই সেই ঐতিহাসিক সত্যকে বিকৃত করতে পারে না।’

গাজা ও পূর্ব জেরুজালেমের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিরা অধিকৃত পশ্চিম তীর অঞ্চলকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্য চায়। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বসতিকে অবৈধ বলে মনে করে।

মূলত ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে গাজা উপত্যকা এবং পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীর দখল করে নেয়। যদিও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরকে তাদের ভবিষ্যৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে চায়। তবে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ হলেও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল কয়েক ডজন ইহুদি বসতি নির্মাণ করেছে এবং সেগুলো এখন প্রায় ৫ লাখ ইসরায়েলির আবাসস্থল।

অবশ্য আনুমানিক ২৫ লাখ ফিলিস্তিনি নাগরিক অধিকৃত পশ্চিম তীরে বাস করে এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের চলাচল ও গতিবিধি কঠোরভাবে সীমিত করে রেখেছে।

রয়টার্স বলছে, আন্তর্জাতিক আদালত নামে পরিচিত হেগ-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) সারা বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিরোধ নিষ্পন্নের বিষয়ে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত। এর রায় মানা বাধ্যতামূলক হলেও আইসিজে’র তা প্রয়োগ করার ক্ষমতা নেই।

এদিকে জাতিসংঘে এই প্রস্তাব পাস হওয়াকে নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখছে ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেনেহ বলেছেন, ‘রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে আইনের অধীন আসার এবং আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে চলমান অপরাধের জন্য দায়বদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে।’

এছাড়া গাজার ক্ষমতাসীন দল হামাসের কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, ‘দখলদার রাষ্ট্রকে (ইসরায়েল) আটকানো ও বিচ্ছিন্ন করার দিকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.