আজ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৯ জানুয়ারী ২০২৩, সোমবার |

kidarkar

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

গ্রাহকের অনাপত্তির সনদ দিচ্ছেনা আইপিডিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঋণের সর্বশেষ কিস্তিসহ সুদ আসলে মোট ৬ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ টাকা পরিশোধ করেছে আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ঋণের সব টাকা পরিশোধ করা হলেও এখনো তারা অনাপত্তি সনদ দিচ্ছে না। এর ফলে গাড়ির মালিকানাও বুঝে পাচ্ছে না আল হাবিব।

সোমবার (৯ জানুয়ারি) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন আল হাবিব এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হাবিবুর রহমান।

তিনি বলেন তার প্রতিষ্ঠান আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ০৪/১২/২০১৬ ইং তারিখের মন্জুরীতে ৬০ কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে গাড়ী ক্রয়ের জন্য ১০.৫০% সুদে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে যার ঋণ হিসাব নং ১০০১-৬১১-০০০০০৫১১৪। ঋণের টাকা ছাড় হওয়ার আগেই ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে ৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৯৩ টাকা করে ৬০ টি চেক নিয়ে নেয় তারা। এই ঋণের টাকায় নিটল টাটা থেকে ১০টি গাড়ী কেনা হয়। যা আইপিডিসি সরাসরি নিটল টাটাকে পরিশোধ করে। পরে আমরা সর্বশেষ কিস্তিসহ গত ৩০ জুন সুদসহ সর্বমোট ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮০ টাকা পরিশোধ আইপিডিসিকে পরিশোধ করি।

একইভাবে গাড়ী ক্রয়ের জন্য ০৪/০৭/২০১৭ ইং তারিখের মন্জুরীতে ৬০ কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ১০.৫০% সুদে আরও ৫ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে আমার প্রতিষ্ঠান। যার ঋণ হিসাব নং ১০০১-৬১১-৫৫৮০। যথারীতি ঋণের টাকা ছাড়ের আগেই ঋণের বিপরীতে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৫ টাকা করে ৬০ টি কিস্তির চেক জমা নেয় আইপিডিসি। এই ঋণের টাকায় Rangs মটরস থেকে ১৫টি গাড়ী কেনা হয়। যা আইপিডিসি সরাসরি র‌্যাংগস মটরসকে পরিশোধ করে। আমরা গত ৩০ অক্টোবর এই ঋণের সর্বশেষ কিস্তিসহ সুদ আসলে মোট ৬ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ টাকা আইপিডিসিকে পরিশোধ করি। কিন্তু দুটি ঋণের সব টাকা পরিশোধ করা হলেও এখনও পর্যন্ত আমাদেরকে অনাপত্তিপত্ত দিচ্ছেনা লিজিং প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি। ফলে আমরা গাড়ীর মালিকানাও বুঝে পাচ্ছিনা।

আল হাবিব এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থ্কে বলা হয় উল্টো গাড়ির মালিকানা না দেয়ার কারণ জানতে চেয়ে আইপিডিসির দ্বারস্থ হলে মৌখিকভাবে প্রথম ঋণের জন্য আরও ৩২ লাখ ৩২ হাজার ৭৪ টাকা এবং দ্বিতীয় ঋণের জন্য আরও ৭২ লাখ ৩৩ হাজার ৪৬৪ টাকা দাবি করে আইপিডিসি। সুদে আসলে সব টাকা যথাসময়ে পরিশোধের পরও অতিরিক্ত এই টাকা কিসের জন্য তা লিজিং কোম্পানিটির কাছে বারবার জানতে চাইলেও তারা আমাদেরকে সদুত্তর দিতে পারছে না। এই টাকা কোন খাতে বকেয়া রয়েছে তা লিখিতভাবে জানতে সর্বশেষ ১৬ নভেম্বর আমরা আইপিডিসিকে চিঠি দিলে তার জবাবে ২৮ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম ঋণের ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৯১৬ টাকা এবং দ্বিতীয় ঋণের ৭৩ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৪ টাকা পাওনা রয়েছে। তবে এতে আবার অগ্রিম হিসেবে প্রথম ঋণের ৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৯৩ টাকা এবং দ্বিতীয় ঋণের ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৫ টাকা সমন্বয় করা হয়নি বলে দাবি করে আইপিডিসি, যা উল্লেখিত পাওনা টাকা থেকে বাদ যাবে বলে জানায় তারা। তবে আইপিডিসির পক্ষে পাওনা দাবি করা এই চিঠিতে কে স্বাক্ষর করেছেন তার নাম এবং পদবীও উল্লেখ করা হয়নি।

হাবিবুর রহমান বলেন ঋণের সর্বশেষ কিস্তি পরিশোধের পর অনাপত্তিপত্র চাইলে উক্ত প্রতিষ্ঠান অনাপত্তি দিবো-দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে । পরবর্তীতে অনাপত্তির জন্য বারবার যোগাযোগ করার পরও অনাপত্তি পত্র না দিয়ে হঠাৎ করে তারা মৌখিকভাবে জানায়, সুদের হার ১০.৫০% হইতে ১৪% বাড়ানো হয়েছে বিধায় উক্ত আইপিডিস উল্লেখিত টাকা পাওনা রয়েছে। অতিরিক্ত দাবি করা এই টাকা পরিশোধ করা না হলে গাড়ী না দিয়ে উল্টো সিআইবি লিষ্টে ক্লাসিফাইড করে দেয়ারও হুমকি দেয় তারা। যা আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করার সামিল। তবে কোন আইনে এবং কখন এই সুদের হার বাড়ানো হয়েছে সে ব্যাপারে উক্ত প্রতিষ্ঠান আমাদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ বা আলোচনাও করেনি এবং আমাদের সম্মতিও নেয়নি। শুধু তাই নয়, মন্জুরী পত্রের শর্তানুযায়ী সুদের হার বাড়ানোর পর কিস্তির টাকার পরিমানও বাড়ার কথা। কিন্তু এ সম্পর্কেও তারা কোনো যোগাযোগ করেনি কিংবা কিস্তির টাকার পরিমানও বাড়িয়ে নেয়নি। বরং বাংলাদেশ ব্যাংক যেখানে করোনা মাহামারিকালে সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার কমিয়েছে সেখানে উক্ত প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে গোপনে আমাদের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। যা নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত এবং ব্যাংকিং নিয়মনীতি বহির্ভূত। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকা স্বত্ত্বেও আমাদেরকে করোনাকালীন কোনো সুযোগ সুবিধাও দেয়নি তারা।

তিনি বলেন সুদের হার বৃদ্ধি এবং আইপিডিসির হুমকির বিষয়ে ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৯ (১) (চ) ধারা মোতাবেক তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের শরনাপন্ন হই। বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগের পর গত ২ নভেম্বর বিষয়টি গ্রাহক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কের ভিত্তিতে বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও তাতে কর্ণপাত করছেনা আইপিডিসি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপের পর আইপিডিসি উল্টো আমাদের সাথে মিটিং এর নামে প্রহসন করে যাচ্ছে।
সর্বশেষ গত ২৮/১২/২২ ইং তারিখ এক চিঠির মাধ্যমে লোনের সমস্যা সমাধানের জন্য পরদিন ২৯ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২ টায় আমাকে বৈঠকে ডাকা হয়। গুলশানে আইপডিসির প্রধান কার্যালয়ের ওই বৈঠকে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও উপস্থিত থাকার কথা বলা হলেও তিনি উপস্থিত থাকেননি। বৈঠকে আইপিডিসির হেড অব সাপ্লাই চেইন ফাইন্যান্স জনাব মোহাম্মদ সোলাইমান সারোয়ারের নেতৃত্বে মোট চারজন উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে তারা অতিরিক্ত টাকা দাবির পক্ষে তেমন কোনো যুক্তি তুলে ধরতে পারেননি এবং আমার প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারেন নি। তারা আমাকে সুদ মওকুপের জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেন। ওই বৈঠকে কোনো রেজুলেশন তৈরি না করে পরদিন সন্ধ্যায় তারা একটি রেজুলেশন আকারে তৈরি করে আমাকে মেইলও করে। যেখানে প্রায় সব বিষয়ে আমাকে রাজি এবং বোঝাতে সক্ষম হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তারা কার্যবিবরনীতে আরও উল্লেখ করে আমি নাকি হিসাব সমন্বয়ের ব্যাপারে সম্মত হয়েছি, যাহা সম্পূর্ণ অসত্য ও বানোয়াট। আমি পরদিনই তাদের এ কার্যবিবরনী প্রত্যাখ্যান করে আবারও আমার বক্তব্য তুলে ধরে তাদের চিঠি দেই।

অবশেষে আমার কোনো ধরনের আবেদন না করা সত্বেও আইপিডিসির হেড অব কালেকশন-বিজনেস ফাইন্যান্স জনাব রফিকুল ইসলাম গত ০৫/০১/২৩ ইং তারিখ তাদের অতিরিক্ত সাড়ে ৩% হারে আরোপিত সুদ হতে আমাকে ৫ লক্ষ টাকা মওকুপের প্রস্তাব দেন। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং নিয়ম বহির্ভূত। সেজন্য আমি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি।

উল্লেখ্য, আইপিডিসি ফাইন্যান্স থেকে এর আগেও আমরা দুই দফায় ১২ কোটি ও ১৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে তা পরিশোধ করি। সেটি নিয়ে কোনো জটিলতা হয়নি। কিন্তু এবারের হয়রানি নিয়ে আমার প্রতিষ্ঠান (আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ) এর পক্ষ হতে আইপিডিসির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করার পর তারা আমার উপর চরম ক্ষিপ্ত হন এবং সি. আই. বি তে আমাকে ডিফল্ট করা এবং কিভাবে কিভাবে ব্যবসা করি তাও দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার সাথে সাথেই আমার ১০০১৬১১০০০০০৫১১৪ একাউন্ট টি কোনো কিস্তি বাকী না থাকা স্বত্ত্বেও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ডিফল্ট করে রিপোর্ট করে যা সকল আইন কানুনকে ভুলুণ্ঠিত করেছে। অথচ চুক্তি অনুযায়ী আইপিডিসি আমার কাছে কোন টাকা পাবে না। তাদের অযৌক্তিক এ দাবি একরকম অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করার সামিল। তারা আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যসায়িক সুনাম নষ্টের চক্রান্ত করছে। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে সৎভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে যাবে।

এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগের পর গত ২ নভেম্বর বিষয়টি গ্রাহক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কের ভিত্তিতে বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি দেওয়া হলেও তাতে কর্ণপাত করছে না আইপিডিসি।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.