‘ব্রয়লার মুরগির মাংস নিরাপদ, স্বাস্থ্যের কোনো ঝুঁকি নেই’
নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্রয়লার মুরগির মাংস একটি নিরাপদ খাদ্য, এ মাংস খাওয়াতে কোনো ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
ব্রয়লার মুরগির মাংসে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল ও অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে কি না, তা জানতে পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী এ কথা জানান। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, উৎস নির্বিশেষে ব্রয়লারের মাংসে সর্বোচ্চ সহনশীল মাত্রার অনেক কম পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক এবং ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশ রয়েছে। ফলে ব্রয়লার মাংস একটি নিরাপদ খাদ্য এবং এ ধরনের ব্রয়লার মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনো ঝুঁকি নেই।
বাংলাদেশে মাথাপিছু মুরগির মাংস খাওয়ার পরিমাণ অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া নিরাপদ কি না এ নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং সামাজিক গণমাধ্যমে অনেক প্রচারণায় দেখা যায় যে, ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের ফলে জনগণের মধ্যে অনেক সময় ব্রয়লার মাংস সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্রয়লার মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়। ফলে ব্রয়লার শিল্পের ওপর একটি বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
সম্প্রতি তার নজির আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ২০২০ সালে শুরু হওয়া কোভিড- ১৯ প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে পুষ্টিসমৃদ্ধ ব্রয়লার মাংস খাওয়া অনেক কমে যায়।
মুরগির খাবারের বর্জ্য ব্যবহার করা হয় বলে যে ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
এই পরিস্থিতিতে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও উদ্যোগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অধীনে ব্রয়লার মুরগির মাংস নিরাপদ কি না তা জানতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে, কম্পোজিটে (কলিজা, কিডনি এবং গিজার্ডের সমন্বয়) এবং মুরগির খাদ্যে কি পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতু আছে তা নির্ণয় করা।
আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, বাংলাদেশের পাঁচটি জেলা শহরের (ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং বরিশাল) ব্রয়লার খামার (ছোট, মাঝারি এবং বড়) এবং বাজার থেকে ব্রয়লারের মাংস, হাড় ও কম্পোজিট এবং ব্রয়লার খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি ঢাকা জেলার তিনটি সুপারশপ থেকে ব্রয়লার মুরগির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত প্রায় এক হাজার ২০০টি ব্রয়লার মুরগি এবং ৩০টি ব্রয়লার মুরগির খাদ্য থেকে ৩১৫টি নমুনা প্রস্তুত করে বহুল ব্যবহৃত ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক এবং ৩টি ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে এবং কম্পোজিটে মূলত দুইটি অ্যান্টিবায়োটিক (অক্সিটেট্রাসিাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন) এবং ৩টি হেভি মেটালের (আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও লেড) সামান্য উপস্থিতি রয়েছে, যা অস্বাভাবিক নয় এবং তা সর্বোচ্চ সহনশীল সীমার অনেক নিচে। খামার এবং বাজারে প্রাপ্ত ব্রয়লার মাংসের চেয়ে সুপারশপের ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক এবং হেভি মেটাল এর পরিমাণ কম রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব নাহিদ রশীদ ও কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার উপস্থিত ছিলেন।