আজ: শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৮ জানুয়ারী ২০২৩, শনিবার |

kidarkar

আদানি গ্রুপের শেয়ার ধস, খোয়ালেন ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কোম্পানির শেয়ারের দামে ধস নামায় বুধ থেকে শুক্রবার— মাত্র তিন দিনে ভারতের ‍শেয়ারবাজারে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার লোকসানের শিকার হয়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপ।

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের শেয়ারবাজার সূচক বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই) বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, গত তিন দিনে আদানি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারের দাম কমেছে ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ, আদানি ট্রান্সমিশনের শেয়ারের দাম কমেছে ১৯ শতাংশ, আদানি গ্রিন এনার্জির মেয়ারের দাম কমেছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আদানি গ্রুপের প্রধান বা ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি হিসেবে যেটিকে ধরা হয়, সেই আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

এছাড়া আদানি গ্রুপের লিজ নেওয়া বন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর (ইপিজেড) শেয়ারের দরপতন ঘটেছে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, আদানির গ্রুপের অধীন খাদ্য ও ভোজ্যতেল প্রস্তুতকারী কোম্পানি আদানি উইলমারের শেয়ারের পতন ঘটেছে ৫ শতাংশ।

সবচেয়ে কম হ্রাস পেয়েছে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণকারী কোম্পানি আদানি পাওয়ারের শেয়ারের দাম। গত তিন দিনে এ কোম্পানির দরপতন ঘটেছে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

এনডিটিভিসহ ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শেয়ারবাজার বিশ্লেষক সংস্থা হাইডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের প্রতারণা আর কর ফাঁকি নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয়েছে এই অবস্থা।

বিএসই ও ভারতের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা এনডিটিভিকে বলেছেন, ভারতের শেয়ারবাজার নিয়ে গত ২৪ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হাইডেনবার্গ রিসার্চ। এতে বলা হয়েছে, গত কয়েক দশক ধরে নির্লজ্জ কারসাজি ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভারতের শেয়ারবাজারে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রেখেছে আদানি গ্রুপ। এই গ্রুপের কারণে কোটি কোটি ডলার লোকসানের শিকার হয়েছে ভারতের শেয়ারবাজারে নথিভুক্ত বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বহুজাতিক কোম্পানি।

টানা দুই বছর ব্যাপক অনুসন্ধান চালানোর পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে হাইডেনবার্গ রিসার্চ। এদিকে, আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে হাইডেনবার্গ রিসার্চের সাম্প্রতিক এই প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন’, ‘বানোয়াট’ ও ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার আদানি গ্রুপের শীর্ষ নির্বাহী জতীন জালুন্ধওয়ালা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গত ২৪ জানুয়ারি হাইডেনবার্গ রিসার্চ যে বিদ্বেষপূর্ণ, ক্ষতিকর ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে গবেষণার ছিটেফোঁটাও নেই এবং তাদের এই প্রতিবেদনের জেরে ব্যাপকভাবে লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে আদানি গ্রুপ, গ্রুপের শেয়ারধারী ও বিনিয়োগকারীরা। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে ভারতের শেয়ারবাজারে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক এবং এর জেরে সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে ইতোমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত যন্ত্রণা দেখা দিয়েছে।’

‘একটি বিদেশি গবেষণা সংস্থার এই ধরনের বেপরোয়া এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রতিবেদনে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। আদানি গ্রুপের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে— তা ইতোমধ্যে সবার কাছেই স্পষ্ট। হাইডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারটি আমাদের বিবেচনাধীন আছে।’

মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তালিকায় এতদিন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হিসেবে নাম ছিল গুজরাট থেকে উঠে আসা ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা গৌতম আদানির। তবে সাম্প্রতিক এই ধসের পর সেই তালিকায় ৭ম স্থানে তিনি নেমে গেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, আদানির ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা মোট অর্থ ও সম্পদের পরিমাণ ৯ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.