আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৯ জানুয়ারী ২০২৩, রবিবার |

kidarkar

৭৪ ভাগ উদ্যোক্তা দুর্নীতির শিকার, প্রধান সমস্যা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন: সিজিএস

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোভিড পরবর্তী সময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের পরিষেবা গ্রহণকালীন সময়ে দুর্নীতির শিকারের হার বেড়েছে। সেবা নিতে গিয়ে ৭৪ ভাগ উদ্যোক্তা সরাসরি দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

সেবা প্রদানকারীদের এসব দুর্নীতির সবচেয়ে বেশি পরিচিত মাধ্যম ঘুষ। এ ছাড়া চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতি এবং মাত্রাহীন পৃষ্ঠপোষকতা দুর্নীতি বাড়াচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। গত বছরের ২৭ জুন থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আটটি বিভাগের ১৯৪ জন এসএমই উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী এবং এসএমই খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বিশিষ্টজনেরা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘যেসব খাতে সরকারের সঙ্গে ব্যক্তি পর্যায়ের সম্পর্ক রয়েছে, সেখানকার দুর্নীতির চিত্রটাই আসছে। তাই এটা নিয়ে আমাদের এত মাথাব্যথা। কিন্তু প্রত্যেকটি বেসরকারি খাতেও হচ্ছে। এসএমইর মতো খাতে কেন দুর্নীতি নিয়ে আমরা চিন্তিত হব, কারণ এ খাতের দুর্নীতি অগ্রসর জাতির পথে বড় বাধা। দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লে দুর্নীতি কমবে বলে মনে হয় না। কারণ, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল, তারপরও দুর্নীতি থেমে থাকেনি। অর্থাৎ যতই আয় বাড়ুক, যদি না জবাবদিহি নিশ্চিত করা না যায় তাহলে সম্ভব হবে না। আয়কে স্বচ্ছতার মধ্যে রাখাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ৯০–এর দশকের পর থেকে মুক্তবাজার ব্যবস্থায় উন্নতি হলেও বাস্তবে তার সূফল পাওয়া যায়নি। কারণ, এটাকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেগুলোর কাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে। ক্ষমতা কাউকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে না, বরং ক্ষমতা হারানোর ভয় মানুষকে দুর্নীতিতে যুক্ত করে। এ জন্য জবাবদিহি সবচেয়ে বেশি জরুরি। বর্তমানে ডিজিটাল হওয়ার মাধ্যমে অনেক কাজে গতি এসেছে কিন্তু দুর্নীতি কমেনি। এর পেছনে সামাজিক ও রাজনৈতিক যে কারণ কাজ করে সেটি ধরা যায়নি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বড় সমস্যা ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা সংগঠনের নিজেদের মধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতি থামাতে না পারা। কাঠামোগত পরিস্থিতিতে যদি স্বচ্ছতা না আনা যায়, তাহলে কখনোই দুর্নীতির আগ্রাসন থেকে মুক্তি মিলবে না। এ জন্য রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা জরুরি বলেও মত দেন অনেকে।

অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘অবস্থা এমন সর্বাঙ্গে ব্যাথা, ওষুধ দেব কোথা? ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পে দুর্নীতি কেন এতদূর পর্যন্ত গেল সেটি আগে খুঁজে বের করা দরকার। প্রতিটি পদে আজ নিয়োগ পেতে হলে টাকা ঢালতে হয়, স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে রাজস্ব বোর্ড পর্যন্ত। আবার কেউ বাধ্য হয়েও খাচ্ছেন। সমস্যাটা ওপর থেকেই শুরু। সেখানে বন্ধ না হলে এর থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। কালো টাকা সাদা করতে গিয়ে নিজেরাই যেন সেটার মধ্যে চলে যাচ্ছি। এ জন্য রিজেনারেশনের মাধ্যমে এগুলো ঠিক করতে হবে।’

সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব ও ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবির) সেক্রেটারি জেনারেল আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এসএমই খাতকে অবহেলা করে দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। কিভাবে এটাকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে বিকশিত করা যায় সেটা নিয়ে বরং আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে। এককালে শুনতাম সুইচ ব্যাংকে, পরে কানাডার বেগম পাড়া, এখন কাতারেও রাখা হচ্ছে। যারা টাকাগুলো নিয়ে গেছেন, তাঁরা যথাযথভাবে যেমন নেননি, তেমনি আনেনওনি। এটিকে যদি ঠিক করা না যায়, তাহলে দুর্নীতি হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা আছে কিন্তু প্রয়োগ হচ্ছে না। তবে অনেক নেতিবাচক দিক যেমন আছে, কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন আলোচনা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এটাকে বাস্তবায়নের জন্য যদি কাজ করি তবেই এগোবে। কেউ বলে আমলাতন্ত্র, কেউ বলে ব্যাংকাররা দায়ী। কিন্তু দেশটা সবার। সবাই সবার জায়গা থেকে এগিয়ে না আসলে সম্ভব হবে না।

দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘মিডিয়া আপাদমস্তকই এখন দুর্নীতিতে ভরে গেছে। দুর্নীতির পরিস্থিতি সম্পর্কে সবার জানা। গণমাধ্যম এখন লুটপাটের সর্বোচ্চ সীমায়। এতটাই মিথ্যার ওপর যা আগে কখনো হয়নি। বর্তমানে যে অনিয়ম হয়, তার খুব সামান্য পরিমাণে আমরা জেনে থাকি। বিচার বিভাগ, রাজনীতি সবকিছুই এখন দুর্নীতিতে যুক্ত। যারা টাকা পাচার করছে, তাদের না ধরে, বরং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.