আজ: শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪ইং, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, মঙ্গলবার |

kidarkar

উপেক্ষিত শ্রমিক অধিকার

কল্যাণ তহবিলে মুনাফার অংশ দিচ্ছে না তালিকাভুক্ত ইন্স্যুরেন্সগুলো

শাহ আলম নূর : ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর মুনাফার একটি অংশ শ্রমিকের কল্যাণ তহবিলে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোন ইন্সুরেন্স কোম্পানীই তা মানছে না।

দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, মুনাফার ৫% বছর শেষ হওয়ার ৯ মাসের মধ্যেই অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার পর কোম্পানীর শ্রম আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরে নিষ্পত্তি করার পরামর্শও দিয়েছে নিরীক্ষকরা।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বলছে, আইন লঙ্ঘন করলেও জনবল সংকটে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফলে শ্রমিকের কল্যাণের জন্য ফান্ডের কার্যকারিতা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড এবং শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড ট্রাস্টির মাধ্যমে আলাদা ব্যাংক হিসাবে ব্যবস্থাপনা হবে। আর শ্রমিকদের কল্যাণে গঠিত বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন ফান্ড সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্ত, আহত, কিংবা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত শ্রমিকদের প্রদান করবে।
তালিকা ভুক্ত অনেক কোম্পানীর শ্রম আইন পরিপালন না করার বিষয়টি জানিয়ে গত বছর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে চিঠি দেয় শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে, ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠনের তথ্য চেয়ে গত বছরের এপ্রিলে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানীকে আলাদা চিঠি পাঠিয়েছিল বিএসইসি।
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ২৩৪ ধারা অনুযায়ী, কোম্পানিগুলিকে অবশ্যই এ দুটি তহবিল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আইন অনুযায়ী, হিসাব বছরের শেষ দিনে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ অন্যূন এক কোটি টাকা কিংবা স্থায়ী সম্পদের মূল্য অন্যূন দুই কোটি টাকা হলে কোম্পানী নীট মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রমিকের কল্যাণ তহবিলে প্রদান করবে। জমাকৃত তহবিলের মধ্যে ৮০% অংশগ্রহণ তহবিলে, ১০% কল্যাণ তহবিল এবং অবশিষ্ট ১০% শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে যাবে।
নিয়ম অনুযায়ি ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড এবং শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড ট্রাস্টির মাধ্যমে আলাদা ব্যাংক হিসাবে ব্যবস্থাপনা হবে। আর শ্রমিকদের কল্যাণে গঠিত বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন ফান্ড সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্ত, আহত, কিংবা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত শ্রমিকদের প্রদান করবে।

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) অনুযায়ী বীমা কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ শ্রমিক কল্যান ফান্ডে জমা প্রদান থেকে অব্যাহতি চেয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব’র কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন’র (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন।

চিঠিতে তিনি বলেন উপর্যুক্ত বিষয়ে আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষনপূর্বক জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) ধারা ২৩৪ এর উপধারা ১ অনুযায়ী প্রত্যেক কোম্পানীকে একটি শ্রমিক অংশগ্রহন তহবিল ও একটি শ্রমিক কল্যান তহবিল স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। আইনে প্রত্যেক বৎসর শেষ হওয়ার অন্যূন নয় মাসের মধ্যে পূর্ববর্তী বৎসরের নীট মুনাফার ৫% (পাঁচ শতাংশ) অর্থ ৮০:১০:১০ অনুপাতে যথাক্রমে অংশগ্রহন তহবিল, কল্যান তহবিল এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফাউন্ডেশন আইন ২০০৬ এর ধারা-১৪ এর অধীনে স্থাপিত শ্রমিক কল্যান ফাউন্ডেশন তহবিলে প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।

এ প্রেক্ষিতে মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন দি ইন্সটিটিউট অব চার্টাড এ্যাকাউন্টস এর প্রেসিডেন্টকে একটি পত্র প্রেরণ করে। উক্ত পত্রে কোন কোম্পানী/ প্রতিষ্ঠান অডিট করার সময় তাদের তালিকাভুক্ত অডিট ফার্ম নীট মুনাফার ৫% অর্থ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফাউন্ডেশনে জামার বিষয়টি নিরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসেন। অডিট ফার্মগুলো উল্লিখিত পত্রের নির্দেশনা অনুসরন করে বীমা কোম্পানীগুলোতে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং বীমা কোম্পানীগুলোকে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করে আসছেন।

এ প্রেক্ষাপটে অডিট কোম্পানীগুলো বিভিন্ন বেসরকারী বীমা কোম্পানীর হিসাব নিরীক্ষণের সময় কোম্পানীর বিগত বৎসরের নীট মুনাফার ৫% অর্থ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফাউন্ডেশনে জমার বিষয়টির উপর আপত্তি প্রদান করছে যা কোম্পানীর অন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। বেসরকারী বীমা কোম্পানিগুলো অডিট কার্যক্রম সমাধানে নানাবিধ আপত্তির সম্মুখীন হচ্ছে। সরকারী ২টি বীমা কর্পোরেশনে যতদুর জানা যায় এ ধরনের কোন সমস্যা নেই। একই ধরণের সমস্যা ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে রয়েছে কিন্তু এ বিষয়ে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ০৯/০৩/২০১৬ তারিখে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ২৮/১১/২০১৬ তারিখে মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয় বরাবর পত্র প্রেরন করে। ২৮/১১/২০১৬ তারিখের পরের প্রেক্ষিতে আপনার মন্ত্রণালয় একমত পোষন করে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ধারা-২৩৪ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োগ না করার নিমিত্ত শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ে ১৪/০২/২০১৭ তারিখে পত্র প্রেরন করেন (কপি সংযোজিত)। উক্ত পরের প্রেক্ষিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অডিটের বিষয়ে কোন সমস্যা হচ্ছে না বলে জানা যায়।
এমতাবস্থায়, শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ২৩৪ এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য ধারাসমূহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বীমা কোম্পানীর ক্ষেত্রেও যেন প্রয়োগ না করা হয় বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য তিনি অনুরোধ করেন।

ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন বলেন, “শ্রম আইন অনুযায়ী ফাউন্ডেশনে টাকা জমা দিতে কোম্পানীগুলোকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। তবে চিঠির প্রেক্ষিতে কেউ কেউ টাকা দিচ্ছে আবার অনেকে কর্ণপাত করছে না।”

তিনি বলেন, “ফাউন্ডেশনের জনবল কম হওয়ায় কোনো কোম্পানী ফান্ডে টাকা জমা না দিলেও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। শ্রম আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। কারণ তারা নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে কোম্পানী পরিদর্শন করে, শ্রমিক কল্যাণের টাকা জমা না দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।”

বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী-রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, “শ্রম আইন মানছে না কিছু বীমা কোম্পানী, তাদেরকে বিধি অনুযায়ী ফান্ড গঠন ও পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা নন-কমপ্লায়েন্স, তাদেরকে কমপ্লায়েন্স হতে বলা হয়েছে।”
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে মাত্র তিনশ কোম্পানী এ ফাউন্ডেশনে টাকা জমা দিয়েছে। এই ফান্ডে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ কোটি টাকা জমা হয়েছে।নিবন্ধিত কোম্পানীর বড় অংশই টাকা জমা না দেওয়ায় প্রতি মাসেই কোম্পানীগুলোকে চিঠি দিচ্ছে ফাউন্ডেশন।

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.