আজ: মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪ইং, ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, বুধবার |

kidarkar

ব্যবসা বেড়েছে তালিকাভুক্ত ফাইভ স্টার হোটেলগুলির

শাহ আলম নূর : কোভিড-১৯ মহামারী চলে যাওয়ার পর থেকে দেশের হোটেল ও মোঠেল শিল্প বেশ ভাল সময় পর করছে। দেশের হোটেল ও সেবা খাতের কাম্পানিগুলির ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে পাঁচ তারকা হোটেলেগুলো এই সময়ের মধ্যে ৪৫০ শতাংশের বেশি মুনাফা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
সংশ্লিষ্ঠদের মতে দেশে বর্তমানে ১৭টি পাঁচ তারকা হোটেল রয়েছে। করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পর দেশের হোটেল শিল্প মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এতে একটি মারাত্মক মহামারী ধাক্কার পরে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে তালিকাভুক্ত এবং নন-তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির মুনাফা ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধেপাঁচ তারকা হোটেল দ্য ওয়েস্টিন ঢাকার মালিক ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড’র নিট মুনাফা ৪৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হোটেল এবং সেবা খাতের কোম্পানির রাজস্ব এবং নিট মুনাফা উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে ৪৪.৭৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭.৯৪ কোটি টাকা।
কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) চলতি অর্থবছরের প্রথম সপ্তাহে ১.৫২ টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের জন্য ০.২৭ টাকা ছিল।
হোটেল এবং সেবা খাতের কোম্পানিটির দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক মুনাফা ছিল ২৯.৪০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭.৯২ কোটি টাকা। কোম্পানিটির দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা, গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে ০.২৭ টাকা।
ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের পরিচালক মোঃ শরীফ হাসান বলেন, মহামারী পরিস্থিতির স্বাভাবিক হওয়ায় হোটেল এবং রিসোর্ট ব্যবসা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে তাদের আয় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
কোম্পানির শেয়ার প্রতি নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৪.৭৯ টাকা ছিল যা ২০২২ সালের জুনে ৮৪.৭৩ টাকা হয়েছে।
ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসর্ট ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়া বছরের জন্য তার সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে৷ এটি ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে৷

২০০০ সালে সংগঠিত, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস ১ জুলাই, ২০০৭ এ ‘দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা’ ব্র্যান্ড নামে ব্যবসা পরিচালনার অনুমোদন পায়। রাজধানীর বনানীতে ফাইভ স্টার শেরাটন হোটেল এবং উত্তরায় হানসা হোটেলের মালিকও প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়া, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড, কক্সবাজার ভিত্তিক বিলাসবহুল হোটেল রয়্যাল টিউলিপের মালিক কোম্পানি, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৪২.২ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথমটিতে মুনাফা করেছে ৮.৬ কোটি টাকা।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মূল আয় ১৫২ শতাংশ বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য ৩.৫০ টাকা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের জন্য ০.৭২ টাকা ছিল।
হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিটি ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত এর শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ১৪.১৭ টাকা ছিল। কোম্পানিটি ২০২১-২২ অর্থ বচরের জন্য ৪২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০.১৪ কোটি টাকা বেশি।
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ এ যাত্রা শুরু করে, কক্সবাজারের ইনানীতে ১৫ একর জমিতে, ৫ তারকা ক্যাটাগরির রিসোর্টটিতে ৪৯৩টি রুম এবং স্যুট রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর এটি বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে একটি প্রিয় স্থানে পরিণত হয়েছে। কোম্পানির মতে, সমস্ত সুবিধা এখন এটিকে বিশ্বের সেরা সমুদ্রতীরবর্তী অবলম্বনে পরিণত করেছে।
এক তথ্যে দেখা যায় অপেক্ষাকৃত কম পুঁজিতে বাংলাদেশে হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বেশ লাভজনক এবং জনপ্রিয়ও। শুধু ঢাকা নয়, জেলা ও উপজেলাতেও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন হোটেল-রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ বলছে, গত এক দশকে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে মূল্য সংযোজন বেড়ে হয়েছে আট গুণ। এক দশক আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে মূল্য সংযোজন হয়েছিল মাত্র ১১ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাত থেকে মূল্য সংযোজন হয়েছে ৮৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় আট গুণ বেশি।
এক তথ্যে দেখা যায় দেশের ৬ হাজার ৭৩৪টি হোটেল-রেস্টুরেন্টের ওপর জরিপটি পরিচালনা করে বিবিএস। বিবিএসের ১৫১ জন গণনাকারী ও ৮০ জন সুপারভাইজার মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক শুমারি ও ২০১৯ সালের বিজনেস ডিরেক্টরি থেকে তথ্য নিয়ে জরিপটি করা হয়েছে।
বিবিএস’র এক কর্ম কর্তা বলেন, হোটেল-রেস্টুরেন্ট জরিপটি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, এক দশকে সারা দেশে হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা কত বেড়েছে ও জিডিপিতে এই খাত থেকে কী পরিমাণ মূল্য সংযোজন হচ্ছে, তা জানা। এই খাতে কত মানুষ কর্মরত আছেন, সেই তথ্যও বের করা হয়েছে এ জরিপ থেকে। প্রতি ১০ বছর পরপর জরিপটি করা হয়। এর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে শেষ জরিপ করা হয়েছিল।
হোটেল-রেস্টুরেন্ট জরিপটি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, এক দশকে সারা দেশে হোটেল রেস্টুরেন্টের সংখ্যা কত বেড়েছে ও জিডিপিতে এই খাত থেকে কী পরিমাণ মূল্য সংযোজন হচ্ছে তা জানা।
দেশে এখন হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪। এক দশক আগে এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৪। এই খাতে এক দশকে কর্মসংস্থানও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য। এই খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩২ জনের। যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৮ লাখ ৩৭ হাজার। বাকিরা নারী। এক দশক আগে হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতে কর্মসংস্থান ছিল ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪ জনের।
হোটেল-রেস্টুরেন্টে যাঁরা নিয়োজিত আছেন, তাঁদের মজুরি বা বেতনের পেছনে সংশ্লিষ্ট এক অর্থবছরে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। তাতে প্রতিবছর একজন শ্রমিকের মজুরির পেছনে খরচ হয়েছে গড়ে ৬৯ হাজার ৪৮ টাকা।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.