মুরুব্বিয়ানা করতে পারবে না ইসি, দলগুলোকে বললেন সিইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মত পার্থক্যের নিরসন হবে বলে আশা করলেও সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় নিতে রাজি নন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রাজনৈতিক দলগুলোকেই দূরত্ব ঘোচাতে সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেছেন, “আমরা আগেও বলেছি, তাদের প্রতি আমরা বারবার আবেদন জানাচ্ছি আপনারা আসুন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। আপনাদের মধ্যে যদি মত-পার্থক্য থাকে, সেটা আপনারা নিরসন করার চেষ্টা করুন। কারণ নির্বাচন কমিশন মুরুব্বিয়ানা করতে পারবে না।”
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে ভোটার দিবসের শোভাযাত্রা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন সিইসি।
মাঝে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ থাকলেও এবার আবার সংশয় তৈরি হয়েছে বিএনপি ও সমমনাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবির কারণে।
বিএনপি বলে আসছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হলে কোনো নির্বাচনে তারা আর যাবে না। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, ‘অসাংবিধানিক’ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর কোনো সুযোগ নেই, তারা ক্ষমতায় থাকতেই নির্বাচন হবে।
সব দলকে ভোটে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের সব ধরনের পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, “আমরা ভদ্রভাবে, বিনীতভাবে সকল রাজনৈতিক দলকে বলব, আপনারা যে কোনো প্রকারেই হোক, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভারসাম্য সৃষ্টি করুন, যাতে এই ভারসাম্যের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রে এক ধরনের নিরপেক্ষতা এবং যথার্থতা প্রতিষ্ঠিত হয়।”
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এক বছরে বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম হলেও সিইসির বিচারে সেটা ‘সন্তোষজনক’। সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলেও তিনি আশাবাদী।
“উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হয়েছে। কারণ মেয়াদ আছে মাত্র ১০ মাস। আর সত্যিকার অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদে কিন্তু উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল। ইভিএমে ভোটে বলা হয় ধীরগতি, সেখানেও উপস্থিতি যথেষ্ট ভালো ছিল। আমরা আশা করি, আগামীতে ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, সেখানে উপস্থিতি যথেষ্ট হবে, সেই আশাবাদ আমি ব্যক্ত করছি।”
নির্বাচনে ইসির ভূমিকা তুলে ধরে সিইসি বলেন, “কেন্দ্রে যাওয়ার দায়িত্ব প্রথমত ভোটারের নিজের। রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যাতে হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল একটা দায়িত্ব রয়েছে; তাদেরকে সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন, আমরা ভোটটা আয়োজন করব।
“আমরা আপনাদের ব্যালট পেপার সাপ্লাই করব, বক্স সাপ্লাই করব। আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সংস্থাগুলো আছে, তাদেরকে আমরা স্ট্রিক্টলি বলে থাকি, আপনারা ভোটকেন্দ্রের চারপাশে প্রত্যাশিত যে আইন-শৃঙ্খলা এবং অনুকূল পরিবেশ, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন। তাই দায়িত্বটি কার? দায়িত্বটি সামগ্রিক সমন্বয়ের; এককভাবে এই দায়িত্ব কখনোই নির্বাচন কমিশনের নয়।”
ভোটার দিবসের এ অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সকালে নির্বাচন ভবন থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে আগারগাঁওয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নির্বাচন ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। দিবসটি উপলক্ষে বিকালে আলোচনা সভারও আয়োজন করেছে ইসি।