বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ পতন
নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বেসরকারি খাতে ঋণ ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু গত সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) কোনোটিতেই সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি ব্যাংক খাত। জানুয়ারিতে এ খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরের আগের মাসগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছিলো ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে। আগস্টে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কিছুটা বেড়ে ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে দাঁড়ায়। এর পরের মাস সেপ্টেম্বরে এ প্রবৃদ্ধি কমে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। অক্টোবরে ১৩ দশমিক ৯১ ও নভেম্বরে ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে দাঁড়ায়। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এ খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এরপরে চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই হার আরও কমে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৬২ শতাংশে।
চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা। এ মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত ডিসেম্বরের চেয়েও কম। ডিসেম্বরে খাতটির ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিলো ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
করোনা মহামারির পর থেকে এমনিতেই ঋণের চাপ বেড়েছে। কারণ ঋণের সুদহার বেঁধে দেওয়া ছিলো। এজন্য অনেকে নতুন ও বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ উৎপাদনক্ষমতা বাড়িয়েছেন। এরপরেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে ব্যাপকহারে বেড়েছিলো ডলারের দাম। ফলে আমদানিকারকদের ঋণপত্রের মূল্য বেড়ে যায়। এতে তাদের ঋণ নেওয়ার পরিমাণও বেড়েছিলো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় ফের বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, সাধারণভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকে। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে। করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে মে মাসে খাতটির ঋণ প্রবৃদ্ধি নামে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। তবে সেই বছরের জুন থেকে তা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে আবারও বেসরকারি খাতের ঋণে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি পড়তে শুরু করেছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার-সংকট সমাধানে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর পরেও অর্থনীতির বড় এই সংকট কাটছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মানদণ্ড অনুযায়ী বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়াবে ২৫ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে। একইসঙ্গে গত বছরের শেষের দিকে বেশ কিছু ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম প্রকাশ পায়। এতে ইসলামি ধারার ব্যাংকে কমতে থাকে আমানতের পরিমাণ। তবে সম্প্রতি গ্রাহকরা ব্যাংকে আবারও আমানত রাখতে শুরু করেছে।