তারল্য সংকট কমায় ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ বাড়ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক : তারল্য সংকট কমে আসায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের কাছে বিনিয়োগ করেছে ৭,৮৪৪ কোটি টাকা। যা আগের মাস জানুয়ারিতে ছিল ৫,৭২২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংকাররা বলেন, বছরের শেষ সময়ে ব্যাংকিং খাতের ক্লোজিংয়ে নগদ রিজার্ভ অনুপাত (সিআরআর) এবং সংবিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত (এসএলআর) বজায় রাখতে ব্যাংকগুলোর ব্যাপক টাকা দরকার ছিল, তার কারণে সেই সময়ে ব্যাংকগুলো সরকারকে ঋণ কম দিয়েছে। এখন ক্লোজিং শেষে ব্যাংকগুলোর সেই চাপ কমে গেছে তাই ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে।
তারা আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সরবরাহ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন প্রি-ফাইন্যান্স ও রি-ফাইন্যান্স স্কিমে তহবিল দেয়ায় ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কমে এসেছে যার কারণে ব্যাংকিং খাতে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, সরকার অর্থবছরের ঘাটতি বাজেট মেটাতে চলতি অর্থবছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ছয় মাস কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে। একই সময়ে তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ঋণ না নিয়ে উল্টো তাদের আগের ঋণ বাবদ পরিশোধ বেশি করে।
চলতি ২০২৩ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে ৪৫,৪৩৭ কোটি টাকা। তবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেখা যায় এখনও সরকারের আগের ঋণ বাবদ পরিশোধ কমে দাঁড়িয়েছে ৪,০৪৪ কোটি টাকা। যদিও সরকারের ব্যাংকগুলোকে পরিশোধের পরিমাণটা ডিসেম্বরে পর্যন্ত ছিল ১৭৭১০ কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে জুলাইতে তফসিলি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ১,৫৯৮ কোটি টাকা। পরের মাস আগস্টে এসে ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধ করেছে ১,৬০২ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে আগের ঋণ পরিশোধ করেছে ৩,৫১৪ কোটি টাকা। অক্টোবরে যদিও সরকার ১৯০ কোটি টাকা নতুন ঋণ নিয়েছে।
নভেম্বর সরকার নতুন করে পরিশোধ করেছে ১৪,১২৮ কোটি টাকা। এছাড়া ডিসেম্বরের ২২ তারিখ পর্যন্ত নতুন করে পরিশোধ করেছে ৪,৩১৪ কোটি টাকা। ২০২২ এর ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর সরকারের কাছে ঋণের মোট বকেয়া বা আউটস্ট্যান্ডিং দাঁড়িয়েছে ১৯৬,৬০৮ কোটি টাকা।
যদিও ২০২৩ এর জানুয়ারি থেকে ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। জানুয়ারিতে সরকার ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়েছে ৫,৮২২ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে নিয়েছে ৭,৮৪৪ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংকগুলোর সরকারের কাছে ঋণের মোট আউটস্ট্যান্ডিং দাঁড়িয়েছে ২১০,২৭৪ কোটি টাকা।
একটি সরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, দেশের কিছু ইসলামিক ব্যাংক তারল্য সংকটে থাকলেও বেশিরভাগ বিদেশি, সরকারি–বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। সেই টাকা দিয়ে এখন সরকারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করছে। যদিও ডিসেম্বরের ক্লোজিং ও অতিরিক্ত ডলার কিনতে গিয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কিছুটা তারল্য সংকটে ছিল।
সরকার চলতি ২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ১০৬,৩৩৪ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে ৪১,৩৯২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৩৪.৯২%।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকগুলো সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করেনি সেটা নয়। তারা গত বছরের শেষের কয়েক মাস ট্রেজারি বিল বন্ডের সরকারের কাছে যে রেট চাচ্ছে তার তুলনায় সরকার কম রেট দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোর অনেকটা সিআরআর ও এসএলআর বজায়ে চাপ কম তাই তারা সরকারকে নতুন করে ঋণ দিচ্ছে।