আজ: শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ইং, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ মার্চ ২০২৩, শনিবার |

kidarkar

সৌদি-ইরান এক হয়েছে চীনের মধ্যস্থতায়, কী ইঙ্গিত দিচ্ছে এটি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যের দুই বৈরী দেশ সৌদি আরব ও ইরান আবারও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। ২০১৬ সালে এক শিয়া ধর্মগুরুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এবং এর জেরে তেহরানে সৌদির দূতাবাসে হামলাকে কেন্দ্র করে দুই দেশ সম্পর্ক ছিন্ন করে।

কিন্তু গতকাল শুক্রবার (১০ মার্চ) চীনের রাজধানী বেইজিং থেকে ঘোষণা আসে আবারও এক হচ্ছে এ দুই দেশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের মাধ্যমে সৌদি আরব ও ইরানের এক হওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত দিচ্ছে ‘বিশ্ব শাসন ব্যবস্থায়’ পরিবর্তন আসছে।

শুক্রবারের আলোচনা শেষে ইরান ও সৌদি আরব ঘোষণা দেয় তারা একে-অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না এবং অখণ্ডতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সচেষ্ট থাকবে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, চীনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমান জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ওয়াং উইয়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সেক্রেটারি আলী সামখানি এবং সৌদি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক মুয়াদ বিন মোহাম্মদ আল-আইবান।

সৌদি ও ইরানের মধ্যকার বিরাজমান দূরত্ব ও দ্বন্দ্ব নিরসনে যে চীন কাজ করছে এ বিষয়টি আগে কখনো জানানো হয়নি।

চীনের মধ্যস্থতাকারী ওয়াং উই এ ঘোষণার পর জানিয়েছেন, ‘বিশ্বাসযোগ্য মধ্যস্থতকারী’ দেশ হিসেবে চীন তার দায়িত্ব পালন করেছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

‘কম ঝুঁকি, চীনের জন্য বড় প্রাপ্তি’

২০১৬ সালে শিয়া ধর্মগুরুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে ইরান-সৌদি কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলেও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল অনেক আগে থেকেই।

মধ্যপ্রাচ্যে যেসব যুদ্ধ বা সংঘাত হয়েছে সেগুলোর সবগুলোতেই পক্ষে এবং বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে সৌদি আরব এবং ইরান। দুই দেশের কেউই কোনো বিষয়ে একমত হতে পারেনি।

দীর্ঘ ৮ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলা ইয়েমেনে বিদ্রোহীদের সহায়তা করে যাচ্ছে ইরান। অপরদিকে সরকারি বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছে সৌদি আরব। এছাড়া আরও যেসব আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব রয়েছে সেখানেও এ দুই দেশ বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু তারা আবার এক হওয়ায় আঞ্চলিক যুদ্ধ এবং দ্বন্দ্বগুলোর তীব্রতা কমে যাবে বা একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক আরব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ স্কলার রবার্ট মোগেলিঙ্কি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনে চীনের ভূমিক প্রমাণ করছে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করছে বেইজিং।’

‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ভালো না, তাই মধ্যস্থতাকারীর দিক দিয়ে চীন ভালো অবস্থানে আছে।’

‘এই মধ্যস্থতায় যুক্ত হওয়ার বিষয়টি চীনের জন্য কম ঝুঁকি এবং বড় একটি প্রাপ্তি।’

‘সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্য ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা মানে হলো— আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব কমে আসবে এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা হ্রাস পাবে। এ বিষয়টি চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক সব শক্তির জন্য ভালো।’

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির জ্যেষ্ঠ গবেষক সিনা তোসোই আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘চীন পরিষ্কারভাবে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতায় আগ্রহী। কারণ আরব সাগরীয় দেশগুলো চীনের জ্বালানির অন্যতম বড় সূত্র। চীন সৌদি এবং ইরান দুই দেশ থেকেই জ্বালানি আমদানি করে।’

২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেল শোধনাগারে হামলা চালায় ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। এতে অস্থায়ীভাবে সৌদির তেল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যার প্রভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।

সিনা তোসোই বলেছেন, ‘এ বিষয়টি চীনের জন্য চরম বিপর্যয়কর ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো সংঘাত চীনের জ্বালানি সরবরাহে প্রভাব ফেলবে এবং তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের ক্ষতি করবে।’

যুক্তরাষ্ট্র পক্ষ নিচ্ছে

মধ্যপ্রাচ্যের দ্বন্দ্ব ও বিরোধগুলোতে স্পষ্টভাবে পক্ষ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানকে আটকাতে সৌদি আরব ও ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে মার্কিনিরা। ফলে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।

কুইন্সি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পার্সি বলেছেন, চীন মধ্যপ্রাচ্যে কোনো দেশের পক্ষে অবস্থান নেয়নি এবং এ অঞ্চলে নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করেছে। ফলে তারা সহজেই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পেরেছে।

এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, ‘চীনের এ মধ্যস্থতা নির্দেশ করছে বিশ্ব শাসনে পরিবর্তন আসছে। স্নায়ুযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের যে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা গিয়েছিল সেটি শেষ হয়ে আসছে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, ইরানকে বেকায়দায় রাখতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে কোনো শর্ত ছাড়াই সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু হয়তবা ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বুঝতে পেরেছেন, সৌদি আরবের পাশে ইরান থেকে যাবে। কিন্তু যদি কোনো কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহায়তা বন্ধ করে দেয় তাহলে তারাই বিপদে পড়বে। এ কারণে ইরানের সঙ্গে থাকা দূরত্ব নিরসন করতে চাচ্ছেন তিনি

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.