ইকুইটি রিসার্চ বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক
নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইকুইটি রিসার্চ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আর্থিক প্রক্ষেপণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলে মনে করছেন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী। পাশাপাশি অধিকাংশ ট্রেডারের জ্ঞানভিত্তিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম আর্থিক যোগ্যতা নেই বলেও মনে করছেন তারা। আর ওষুধ খাতের শেয়ার নিয়ে ৬১ শতাংশ বিনিয়োগকারী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন নীতির পরিবর্তন, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি এ বছর পুঁজিবাজারের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে মনে করেন ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। ২২ দশমিক ৮ শতাংশ মনে করেন, স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষে ডিএসইএক্স সূচক ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার পয়েন্টে থাকবে বলে মনে করেন ২২ দশমিক ২ শতাংশ।দ্য বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট সেন্টিমেন্ট সার্ভে ২০২৩ শীর্ষক এক জরিপে এসব পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ গত ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে এ জরিপ পরিচালনা করে।
এতে ১০১ জন অংশ নেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ বিভিন্ন খাতের চাকরিজীবী, ৮ দশমিক ৯ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ৮ শতাংশ, ছাত্র ৭ দশমিক ৯, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার ৬ দশমিক ৯, শেয়ার লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নির্বাহী ৫ দশমিক ৯, স্বতন্ত্র ব্যবসায়ী ৫, বিদেশী বিনিয়োগকারী ৩ ও অন্যান্য শ্রেণীর ৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ রয়েছেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মতামত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, গত বছর পুঁজিবাজারের পারফরম্যান্স বেশ খারাপ ছিল। ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ মনে করেন, বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়ার কারণে পুঁজিবাজারের পারফরম্যান্স খারাপ হয়েছে। বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন নীতির পরিবর্তন, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি এ বছর পুঁজিবাজারের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে মনে করেন ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। ২২ দশমিক ৮ শতাংশ মনে করেন, স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষে ডিএসইএক্স সূচক ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার পয়েন্টে থাকবে বলে মনে করেন ২২ দশমিক ২ শতাংশ।
অন্যদিকে ৩৭ শতাংশ মনে করেন, বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। গত বছর ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি ও ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ মধ্যমেয়াদে বিনিয়োগ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
এ বছর ওষুধ খাতের শেয়ার নিয়ে ৬১ শতাংশ বিনিয়োগকারী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ৩৬ শতাংশ বাজারে ওষুধ খাতের আরো আইপিও চাইছেন। ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ মনে করছেন, ২০২৩ সালে পুঁজিবাজারে লেনদেন ৪০০-৬০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। একই-সংখ্যক অংশগ্রহণকারী এ লেনদেনের পরিমাণ ৮০০ কোটির বেশি হবে বলে মত দিয়েছেন।
বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পেছনে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নকে দায়ী করেছেন ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করছেন, পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে স্বর্ণ অন্যদের ছাড়িয়ে যাবে। ফ্লোর প্রাইসকে পুঁজিবাজারের অনন্য বৈশিষ্ট্য বলে মনে করেন ৩৭ শতাংশ। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের কারণে বাজার আরো স্বচ্ছ ও গতিশীল হয়েছে বলে মনে করছেন ৪৯ শতাংশ। ৫৩ শতাংশ মনে করছেন, চীনা কৌশলগত বিনিয়োগ বাজার পরিস্থিতির জন্য সহায়ক হয়নি। ৫১ শতাংশ মনে করছেন, এসএমই এক্সচেঞ্জ স্থাপন বাজারে গুণগত মানসম্পন্ন আইপিও আসাকে উৎসাহিত করবে না। ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ মনে করছেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপনের মাধ্যমে খাদ্যের বাজারে অস্থিরতা কমবে না।
অন্যদিকে ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ এটিকে সুপারিশ করেছেন। ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ মনে করেন, ওএমএস-ভিত্তিক ট্রেডিং অ্যাপ বাজার প্রসারে ভূমিকা রাখবে। এটিবি স্থাপন বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক হবে না। ৬৭ দশমিক ৭ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা সুকুকের লেনদেনে অংশগ্রহণে আগ্রহী নন।
৬৭ দশমিক ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জালিয়াতি ও কারসাজিকে এ বছর পুঁজিবাজারের সবচেয়ে জটিল নৈতিক ইস্যু হিসেবে অভিহিত করেছেন। ৫৩ দশমিক ১ শতাংশ মনে করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসির সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ মনে করেন, গত বছর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট সুশাসন গড় মানের চেয়ে নিচে ছিল। ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করছেন, ইন্টারনেটভিত্তিক ট্রেডিং চালুর কারণে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত গবেষণা ও জরিপ কার্যক্রমকে সবসময়ই উৎসাহিত করা হয়। তবে এক্ষেত্রে স্বার্থগত দ্বন্দ্বের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। তাই অংশীজনদের বাইরে তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হলে ভালো। গবেষণা ও জরিপের মানোন্নয়নে কমিশন সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। বিএসইসি বরাবরই গবেষণাভিত্তিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে গবেষণা প্রতিবেদন ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য প্রতিবেদনকে বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজবোধ্য করে উপস্থাপনের বিষয়েও কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।’