আজ: শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ইং, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৮ এপ্রিল ২০২৩, শনিবার |

kidarkar

দশ কোম্পানির দখলে ৩৮ ভাগ লেনদেন

শেয়ার বাজারে বেড়েছে লেনদেন, তবু মিলছে না স্বস্তি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : টানা তিন সপ্তাহ পতনের পর গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও তা বিনিয়োগকারীদের পুরোপুরি স্বস্তি দিতে পারছে না। সপ্তাহজুড়ে প্রধান মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের গতি।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দৈনিক গড় লেনদেন ৪১ শতাংশের ওপরে বেড়ে গেছে। লেনদেন বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে বাজার মূলধন। সেই সঙ্গে দাম কমার তুলনায় দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান।
তবে আগের মতোই তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটে রয়েছে। ফলে দুইশ’র বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে টানা পতনের পর শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও তা বিনিয়োগকারীদের পুরোপুরি স্বস্তি দিতে পারছে না।
এমন ক্রেতা সংকটের মধ্যেই গত সপ্তাহে ডিএসইতে বাজার মূলধন প্রায় সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকা বেড়েছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬২ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ৫৪৫ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়ার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপর ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬২ হাজার ৯১১ কোটি ৯৮ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৬২ হাজার ৩৬৬ কোটি ৩১ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৫৪৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
গেল সপ্তায় ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮৯৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৬৩৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা ৭৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭৬টির, দর কমেছে ৫৮টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪৪টি কোম্পানির। লেনদন হয়নি ২৩টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২১৪ দশমিক ২০ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ১০ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ১৯৮ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৪৭ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে।
এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ২১ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ২৪ পয়েন্ট ছিল। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ২১ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
গেল সপ্তাহে এ ক্যাটাগরির ৮০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। বাকী ২০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার বি ক্যাটাগরিতে অবস্থান করেছে। সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ৩৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ারে। একাই মোট শেয়ারের ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ লেনদেন করেছে।
এছাড়া ইস্টার্ন হাউজিং ৬ দশমিক ১২ শতাংশ, আমরা নেটওয়ার্কস ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ইউনিক হোটেল ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, জেমিনি সি ফুড (বি ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ, এডিএন টেলিকম ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ, এপেক্স ফুটওয়্যার ২ দশমিক ৩১ শতাংশ, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন ২ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং রংপুর ডেইরী এন্ড ফুড (বি ক্যাটাগরি) ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের এ ক্যাটাগরির শেয়ার বি ও জেড ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই এ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা বি-ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই জেড ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো এন ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.