ঈদে যুদ্ধবিরতির জন্য সুদানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গৃহযুদ্ধ কবলিত সুদানে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ক্ষমতার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৫ এপ্রিল, শনিবার থেকে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে উত্তরপূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে।
এ গৃহযুদ্ধে ইতোমধ্যে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০০ জন।
আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর মধ্যে সুদান অন্যতম। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৯১ দশমিক ৭ শতাংশই মুসলিম। গৃহযুদ্ধের মধ্যেই শুক্রবার দেশটিতে পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তিন দিনের যুদ্ধবিরতে ঘোষণার জন্য চাপ দিচ্ছে দুই বিবদমান পক্ষ সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নেতাদের।
আরএসএফের কমান্ডাররা অবশ্য জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে মানবিক বিবেচনায় তারা ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে প্রস্তুত এবং শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলেও বিবিসিকে বলেছেন তারা।
তবে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
২০২১ সালে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির, যিনি প্রায় ৩ দশক সুদানের ক্ষমতা আকড়ে ধরেছিলেন। দেশটির সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নেতৃত্বে ঘটে এই অভ্যুত্থান।
বশিরকে উৎখাতের পর ‘সভরিন কাউন্সিল (সার্বভৌম পরিষদ) নামের একটি পরিষদ দেশটি পরিচালনা করে আসছে। সেই পরিষদের প্রেসিডেন্ট সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট আরএসএফের শীর্ষ নির্বাহী জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালু, যিনি হেমেদি নামেই বেশি পরিচিত।
আরএসএফ-কে মূল সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে অনেক দিন ধরে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় ১০ বছর বিলম্ব চায় আরএসএফ। সেনাবাহিনী দুই বছরের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া উচিত বলে মনে করে।
সুদানে বেসামরিক শাসনে ফেরার প্রস্তাবিত পদক্ষেপের মূলে আছে আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার এ বিষয়টি। কিন্তু এর সময়সূচি নিয়ে দু,পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরেই শুরু হয়েছে সংঘাত।
উভয়পক্ষেরই জনবল রয়েছে যথেষ্ট। সুদানের সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত সেনাসদস্যের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার এবং আরএসএফের সক্রিয় সদস্যসংখ্যা প্রায় দেড় লাখ।
এর আগে সুদানে দু’বার যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, কিন্তু দু’বারই তা ব্যর্থ হয়েছে। সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিলেন— তিনি আরএসএফ কমান্ডারদের সঙ্গে সংলাপে আগ্রহী নন।
তবে গতকাল বুধবার জাতিসংঘের মহাসচিব সুদানে বিবদমান দু’পক্ষকে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি বিবেচনায় এনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার অনুরোধ জানান। জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়, সংঘাত ও সহিংসতার কবল থেকে বাঁচতে গত ৬ দিনে সুদান ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ শাদে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও সেনাবাহিনী ও আরএসএফের কমান্ডারদের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সুদানে চলমান এই গৃহযুদ্ধে সাধারণ বেসামরিক লোকজন, ত্রাণকর্মী, দূতাবাসকর্মী ও দেশটিতে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র খুবই উদ্বিগ্ন।’
সুদানের সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সৌদি আরব, কাতার, তুরস্ক, দক্ষিণ সুদান এবং ইথিওপিয়ার সরকারও টেলিফোনে সুদানের সেনাপ্রধানকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।