বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে ব্যবসা করার এখনই সঠিক সময়: বিএসইসি চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক : জাপানের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ অপেক্ষা করছে। তাই এখনই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে ব্যবসা করার সঠিক সময়। সেজন্য জাপানে অবস্থানরত প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) জাপানেরর রাজধানী টোকিও-তে অনুষ্ঠিত ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৩ ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়ালস অফ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রোডশোতে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, দেরি হওয়ার আগেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। বাংলাদেশে বিনিয়োগে বেশকিছু সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানো সক্ষমতা, আর্থিক ও রাজস্ব নীতি এবং বিনিয়োগবান্ধব সরকার, মুনাফাসহ বিনিয়োগ প্রত্যাবর্তনের জন্য কোন প্রাক-অনুমোদন নেই এবং সমুদ্রের সম্পদনির্ভর অর্থনীতি রয়েছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারও দারুণ ভূমিকা রাখছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কম অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ভালো পারফরমেন্স করেছে। এ বছর আমাদের পুঁজিবাজারে ৭৪.৬০ বিলিয়ন ডলার মূলধন বিনিয়োগ করা হয়েছে। আর সে কারণেই ২০২০ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সর্বোচ্চ রিটার্ন প্রদান করে বলে এএফসি দ্বারা স্বীকৃতি পেয়েছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে গ্রোইং ট্রেড রিলেশনশিপ রয়েছে। এ সম্পর্ক দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অনেক বেড়েছে। গত ১০ বছরে এটা ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। জাপানে রপ্তানি আগের চেয়ে ৩ গুণ বেড়েছে। আশা করছি আগামী এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো বাড়বে। ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ বেড়েছে ৩.৬ শতাংশ। তবে বাংলাদেশে জাপানের আরো অনেক বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। আগামীতে বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে বড় বিনিয়োগ প্রত্যাশা করে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, গত ৫০ বছরের বাংলাদেশ অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এ সমস্যটি ছিল নেতিবাচক খবর, অপপ্যচার। বলা হতো, আমরা গরিব দেশ, শিক্ষার হার অনেক কম, নারী ও পুরুষের বৈষম্য, প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব রয়েছে। এগুলো সবই পুরোনো ধারণা, আসলে সেগুলো আর বিদ্যমান নেই। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল নেগেটিভ ১৪ শতাংশ। বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা ছিল ৯৮ শতাংশ। পার ক্যাপিটাল ইনকাম ছিল ১৪০ ডলার। আর ২০২২ সালে এসে জিডিপি দাঁড়িয়েছে ৭.১ শতাংশে। বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা কমে দাঁড়িয়েছে ২.৯০ শতাংশ। পার ক্যাপিটাল ইনকাম দাঁড়িয়ে ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। এতেই বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশে কি ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের বেশ সাফল্য রয়েছে। নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য এদেশের সম্ভাবনা অনেক। বাংলাদেশের জিডিপি এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনো কম। আমাদের রেমিট্যান্স আয়ও বাড়ছে। এখনো বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট ভালো অবস্থানে আছে। তাই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং অশেষ সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৩৯টি হাই-টেক পার্ক, ৯৭টি ইকোনোমিক জোন ও ৮টি ইপিজেড রয়েছে। ফলে বাংলাদেশে এখন অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানি একে অপরের সঙ্গে একীভুতকরণ ও অধিগ্রহণ করছে। আপনারা দেখেছেন জেটিআই ঢাকা টোবাকোকে, গ্ল্যাক্সো স্মিথক্লাইন ইউনিলিভারকে এবং রবি আজিয়াটা এয়ারটেলকে অধিগ্রহণ করেছে। এগুলো বাংলাদেশে অধিগ্রহণ এবং একীভূত হওয়ার কিছু উদাহরণ। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ইলেক্ট্রোনিক্স কোম্পানি ও মোটর কার কোম্পানি বাংলাদেশে উৎপাদনে আসছে। আমরা পরবর্তী চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাংলাদেশে এখন গাড়ি কোম্পানিগুলোও আসছে। এখন বাংলাদেশ গাড়ি উৎপাদন শুরু করছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। সেখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, শেয়ারবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআই’র বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হয়।
জাপানের ‘দ্যা রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়ালস অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের রোড শো পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির ষষ্ঠতম আয়োজন। এ রোড শোতে এবারও বিএসইসির সঙ্গে আয়োজক হিসবে রয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা)। এছাড়া পার্টনার হিসবে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া সহযোগিতায় রয়েছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, মিনোরি জাপান বাংলাদেশ ও জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেটরো)।
রোড শোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনসহ বিএসইসির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।