আজ: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৯ মে ২০২৩, সোমবার |

kidarkar

বিদেশি এয়ারলাইন্স’র দৃষ্টি বাংলাদেশে এভিয়েশন বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের এভিয়েশন বাজারে যুক্ত হতে চায় আরো বিদেশি এয়ারলাইন্স। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব এয়ারলাইন্স চালুর ফলে বিভিন্ন রুটে টিকিটের দাম কমতে পারে। বিশেষ করে চলমান ডলার সংকটের এ সময়টায় বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) ইতোমধ্যে মিশর এয়ার এবং ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সকে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া আবুধাবি ভিত্তিক অতি-স্বল্প-মূল্যের এয়ারলাইন উইজ এয়ারের অনুমোদন প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান রয়েছে।

প্রতিশ্রুতিশীল ব্যবসায়িক সম্ভাবনার কারণে অন্তত আটটি বিদেশি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের এভিয়েশন বাজারে প্রবেশের আগ্রহ দেখিয়েছে।

সূত্রমতে, চলতি বছরের অক্টোবরে ঢাকা বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের পরিকল্পিত সফট লঞ্চের পর বাংলাদেশে কার্যরত বিদেশি এয়ারলাইন্সের সংখ্যা প্রায় ৪০ ছাড়িয়ে যাবে; এ সংখ্যা বর্তমানে ৩৩।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব এয়ারলাইন্স চালুর ফলে বিভিন্ন রুটে টিকিটের দাম কমতে পারে। বিশেষ করে চলমান ডলার সংকটের এ সময়টায় বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

তারা আরো বলেছেন, দেশের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ঠিক রাখা এবং বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখার জন্য স্থানীয় এয়ারলাইন্সের রুট এবং ফ্লিট সম্প্রসারণের মাধ্যমে সেগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আরও বেশি স্থানীয় এয়ারলাইন্সকে এই বাজারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া অপরিহার্য।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) ইতোমধ্যে মিশর এয়ার এবং ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সকে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া আবুধাবি ভিত্তিক অতি-স্বল্প-মূল্যের এয়ারলাইন উইজ এয়ারের অনুমোদন প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান রয়েছে। ইজিপ্ট এয়ার ১৪ মে ঢাকা-কায়রো-ঢাকা রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু করে।

সিএএবি চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান বলেন, “ইথিওপিয়া এক মাসের মধ্যে ফ্লাইট চালনা শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আবুধাবির উইজ এয়ারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে, কিন্তু ঢাকায় স্থান সংকুলানের কারণে তাদের চট্টগ্রাম থেকে কার্যক্রম শুরুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

এছাড়া, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ), ইরাকি এয়ারওয়েজ এবং রয়্যাল জর্ডানিয়ান এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনায় আগ্রহ দেখিয়েছে। এয়ার ফ্রান্স এবং আরেকটি এয়ারলাইন বাংলাদেশে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় ফরাসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। স্পেন থেকেও আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। আলোচনা শুরু হবে এয়ার কানাডার সাথেও, তিনি বলেন।

সিএএবি’র চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেছেন, একবার নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু হলে আরো বেশি এয়ারলাইন বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হতে বা কোড-শেয়ারিং চুক্তিগুলোতে আগ্রহী হতে পারে।

সিএএবি সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং গরুড় ইন্দোনেশিয়াও বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়েছে।

ইজিপ্ট এয়ারের বাংলাদেশ অফিসের নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, “মিশরে বাংলাদেশিদের আগ্রহ থাকায় অনেক পর্যটককেই এক্ষেত্রে যাত্রী হিসেবে আকৃষ্ট করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া, এমন অনেকেই আছেন যারা মিশরে ব্যবসার কথা বিবেচনা করছেন।”

তিনি বলেন, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-গামী অনেক যাত্রী প্রায়ই মিশরকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বেছে নেয় যাতে তারা মিশর ঘুরে দেখতে পারে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে তুলনামূলকভাবে ভালো পরিষেবা পেতে পারে।

এদিকে, বাংলাদেশি যাত্রীরা যাতে অল্প সময়ের মধ্যে ‘ইফিশিয়েন্ট ট্রানজিট পয়েন্ট’ হয়ে ইথিওপিয়ার মাধ্যমে আফ্রিকান দেশগুলোতে পৌঁছাতে পারে সে লক্ষ্যে ঢাকা থেকে ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকার দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। এই দেশে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স চালুর উদ্দেশ্য হলো, ইথিওপিয়াকে ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করে এই বাংলাদেশি যাত্রীদের কম সময়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সাথে যুক্ত করা।

এদিকে, জুনের শেষ নাগাদ ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে ফ্লাইট শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারতের বাজেট এয়ারলাইন স্পাইসজেট।

তাদের প্রকাশিত সাম্প্রতিক বিবৃতি অনুসারে, আগামী মাসের শেষ দিকে আগরতলা-চট্টগ্রাম-আগরতলা রুটে একটি ফ্লাইট চালু করবে তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

স্থানীয় এয়ারলাইন্স কর্মকর্তারা জানান, তারা তাদের প্রতিযোগীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। বরং তাদের উদ্বেগ আসলে দেশের বিমানবন্দরগুলোর অতিরিক্ত ফ্লাইট সমন্বয়ের সীমিত সক্ষমতা নিয়ে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সিইও স্কোয়াড্রন লিডার লুৎফর রহমান বলেন, “প্রতিযোগীতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই যাত্রীদেরকে বোঝাতে হবে যে আমরা আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবা অফার করি। আমরা যদি সেই সক্ষমতা অর্জন করতে পারি, তাহলে কেন বিদেশি এয়ারলাইন্সের প্রভাব আমাদের ওপর পড়বে?”

তিনি আরো বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করা উচিত। টার্মিনালের সামগ্রিক গুণমানের কথা উল্লেখ করে তিনি ট্যাক্সি ট্র্যাক ও সিঙ্গেল রানওয়েতে সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন।

“যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই ইস্যুগুলো সমাধান করে এবং আরো বেশি এয়ারলাইন্সের অনুমতি দেয়, তাহলে এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।”

এদিকে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট বাংলাদেশের (আটাব) মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ দেশের বাজারে বিদেশি এয়ারলাইন্সের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “অধিকাংশ দেশে ন্যাশনাল ক্যারিয়ারগুলো বাজারের মোটামুটি ৪০% ব্যবসা ধরে রাখে। কিন্তু আমাদের এখানে বিদেশি এয়ারলাইনগুলো আমাদের ব্যবসার প্রায় ৭০%-৭৫% দখল করে রেখেছে। আমরা যদি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সহ স্থানীয় এয়ারলাইন্সের যাত্রী সক্ষমতা বাড়াতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমরা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারেও ক্ষতির সম্মুখীন হব।”

এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য ‘ফিফথ ফ্রিডম’ তথা- বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি)।

গত ১৬ মে এক বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের চারটি এয়ারলাইন্স- এমিরেটস, ইতিহাদ, ফ্লাই দুবাই এবং এয়ার অ্যারাবিয়া- বাংলাদেশে তাদের বিমান চলাচল বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন রুটে ‘ফিফথ ফ্রিডম’ পাওয়ার প্রস্তাব দেয়।

কিন্তু সিএএবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বর্তমানে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাজ চলায় ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে না। ফলে এখন যে পরিমাণ ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে, সেভাবেই চলবে।”

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, শাহজালাল বিমানবন্দরে দৈনিক ফ্লাইটের পরিমাণ বেশি হওয়ায় অধিকাংশ বিদেশি এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে ফ্লাইট চালনা করতে চায়। এই বিমানবন্দরটি প্রতিদিন প্রায় ১৬০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, ১৭০টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট এবং অসংখ্য কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করে থেকে।

এছাড়াও অপারেশনে রয়েছে কয়েকটি জেনারেল হেলিকপ্টার। সবমিলিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০টি ফ্লাইট চলাচল করে।

প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে বিধায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। যাত্রীবাহী ফ্লাইটের পাশাপাশি এ বিমানবন্দর দিয়ে শত শত টন পণ্য পরিবহনকারী কার্গো ফ্লাইটগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.