ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘সলিউশন টু প্লাস্টিক পলিউশন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অডিটোরিয়ামে সম্প্রতি বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৩ উদযাপন করেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (সিথ্রিইআর)। পৃথিবীকে রক্ষার জন্য পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ইতিবাচক পদক্ষেপসমূহকে অনুপ্রাণিত করাই ছিল এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য। লঙ্কান এলায়েন্স ফাইনান্স লিমিটেড এই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষতা করেছে।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিথ্রিইআর’র কো-অর্ডিনেটর শামীম আরা নিপার উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়। এই বছরের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্যকে প্লাস্টিক দূষণের ঐতিহাসিক পটভূমির সাথে সামঞ্জস্য করে আলোচনা করেন তিনি।
প্লাস্টিক দূষণ এবং প্লাস্টিক দূষণ কমাতে বিশ্বব্যাপী গৃহীত কৌশলসমূহের বিষয়ে একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিথ্রিইআর’র ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট মুমতাহিনা রহমান। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত ভুটানের শিক্ষার্থীবৃন্দ তাদের দেশের প্রেক্ষাপটে প্লাস্টিক দূষণকে প্রতিহত করার কৌশলসমূহ এবং ভুটানের অভিযাত্রা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এমিরেটাস এবং সিথ্রিইআর’র অ্যাডভাইজার প্রফেসর আইনুন নিশাতের সভাপতিত্বে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনায় অংশ নিয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহে বিভিন্ন ধরনের বিন বসানোর মাধ্যমে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এবং এর সঠিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক সৃষ্টির ঘোষণা দেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর এবং ভারপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ। প্লাস্টিক বর্জ্য পুনঃব্যবহার এবং এর পুনঃ উৎপাদনে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করেন তিনি।
সামুদ্রিক প্রতিবেশে আসা প্লাস্টিক প্রথমে ম্যাক্রো প্লাস্টিক এরপর মেসো প্লাস্টিক এবং সবশেষে এটি মাইক্রো প্লাস্টিক দূষণে পরিণত হয় বলে উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল এবং পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর এবং চেয়ারপারসন শাহেদুর রশিদ। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের জাতীয় নীতির বাস্তবায়ন করতে হবে বলে পরামর্শ প্রদান করেন এবং এই জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সহযোগিতা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
পোড়া প্লাস্টিককে অত্যন্ত বিষাক্ত বলে মন্তব্য করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ডিপার্টমেন্ট অফ এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এর ডিন এবং চেয়ারপারসন ড. আহমেদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণের কারণে পৃথিবী, মাটি, পানিসহ সবকিছুই হুমকির মুখে রয়েছে।’
প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি গোলাম ইফতেখার মাহমুদ বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই আমাদের সরকার প্লাস্টিকের পরিবর্তের পাটজাত পণ্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছে কিন্তু এখনো এটি বাস্তবে পরিণত হয় নি।’ ২০০২ সাল থেকেই বাংলাদেশ প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তিনি বলেন, ‘এর সঠিক বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত হয়নি’।
ইন্টারগর্ভনমেন্টাল নেগোশিয়েটিং কমিটি’র (আইএনসি) সেশন-২ এ অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ইউএনইপি’র অফিসিয়াল ইয়ুথ কনস্টিটিউয়েন্সির গ্লোবাল কো-অর্ডিনেটর জুহায়ের আহমেদ কৌশিক। আর্টিস্টিক কমিউনিকেশন এর ক্রিয়েটিভ হেড এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী জাকিয়া বারি মম প্যানেল এই আলোচনায় অংশ নেন। পরিবেশ রক্ষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং আমাদের যুব সমাজকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার আহবান জানান তারা।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এই আয়োজনে ফটোগ্রাফি, পোস্টার প্রদর্শনী এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয় এবং মিলিটারি ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এর শিক্ষার্থীবৃন্দ।