উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক স্থিতিশীল করার অঙ্গীকার চীন-যুক্তরাষ্ট্রের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিজেদের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক স্থিতিশীল করার অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের দুই দিনের চীন সফরের পর বৈশ্বিক এই দুই দেশের পক্ষ থেকে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো।
মঙ্গলবার (২০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের দুই দিনের বেইজিং সফরের পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তাদের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক স্থিতিশীল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন সোমবার আলোচনার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখাও করেছেন। আর এর মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই পরাশক্তির মধ্যে উচ্চ-স্তরের যোগাযোগ পুনরায় শুরু হলো।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, তারা অগ্রগতি অর্জন করেছেন। অন্যদিকে অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইঙ্গিত দিয়েছেন, উভয় পক্ষই আরও আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। তবে উভয় দেশের মধ্যে এখনও যে বড় পার্থক্য রয়েছে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন শীর্ষ এই মার্কিন কূটনীতিক।
গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ ৩৫ মিনিটের বৈঠক শেষে অ্যান্টনি ব্লিংকেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যেটাতে জোর দিয়েছি… ঊর্ধ্বতন স্তরে টেকসই যোগাযোগই হচ্ছে পার্থক্যগুলো কাটিয়ে ওঠার এবং প্রতিযোগিতা যাতে সংঘাতের দিকে না যায় তা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার চীনা সমকক্ষদের কাছ থেকে একই কথা শুনেছি। আমরা উভয়েই আমাদের সম্পর্ক স্থিতিশীল করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত।’
কিন্তু ৬১ বছর বয়সী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, চীন সম্পর্কে তার ‘পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গি’ রয়েছে এবং ‘(চীনের) অনেক ইস্যুতে আমরা গভীরভাবে – এমনকি তীব্রভাবে – দ্বিমত পোষণ করি’।
বিবিসি বলছে, ট্রাম্প-আমলের বাণিজ্য যুদ্ধ, তাইওয়ানকে নিজেদের বলে বেইজিংয়ের জোরালো দাবি এবং চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে কথিত চীনা গুপ্তচর বেলুন উড্ডয়নের প্রেক্ষাপটে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক কার্যত ভেঙে পড়েছে।
গত প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে চীনে কোনো শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিকের এটিই প্রথম সফর। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অ্যান্টনি ব্লিংকেনই সবচেয়ে সিনিয়র নেতা যিনি চীন সফর করলেন।
অবশ্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরটি আরও পাঁচ মাস আগেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় একটি সন্দেহভাজন চীনা গুপ্তচর বেলুন উড়ে যাওয়ার পর অ্যান্টনি ব্লিংকেন সেই সফরটি স্থগিত করেছিলেন।
বিবিসি বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং আমেরিকার ফেন্টানাইল সংকট থেকে তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়া এবং চীনের কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবকিছুই অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং শি জিনপিংয়ের আলোচনার মধ্যে ছিল বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে।
এবং এই বৈঠকে কোনও সুস্পষ্ট অগ্রগতি না থাকলেও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, উভয় দেশের সম্পর্ক ইতিবাচক দিকে অগ্রসর হতে পারে।
অ্যান্টনি ব্লিংকেনের বক্তব্য প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘দুই পক্ষ কিছু অগ্রগতি করেছে এবং কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে। এটা খুব ভালো।’
মূলত তাইওয়ান হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিরোধের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র এবং এই ইস্যুতে উভয় দেশের বিরোধ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর আশঙ্কাও রয়েছে। চীন স্ব-শাসিত তাইওয়ানকে একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসাবে দেখে যা শেষ পর্যন্ত বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
তবে তাইওয়ান তার নিজস্ব সংবিধান এবং নেতাদের সাথে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে নিজেকে আলাদা হিসাবে মনে করে। অবশ্য শি জিনপিং ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি তার মেয়াদেই তাইওয়ানকে বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে আনতে চান।
এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বছর বলেছিলেন, চীন আক্রমণ চালালে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করবে। সেসময় বাইডেনের সেই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছিল বেইজিং।
কিন্তু সোমবার অ্যান্টনি ব্লিংকেন আবার জোর দিয়ে বলেছেন, ওয়াশিংটন তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না। তিনি বলেন, চীনও কিছু আশ্বাস দিয়েছে। একইসঙ্গে ইউক্রেনে ব্যবহার করার জন্য রাশিয়াকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সহায়তা সরবরাহ না করার কথাও জানিয়েছে বেইজিং।