বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশৃংখলা
শিক্ষার্থীরা মেধানুযায়ী পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বেসরকারি মেডিকেল ভর্তি প্রক্রিয়ায় হযবরল সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। প্রথমবারের মতো অটোমেশন চালু করায় মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা পছন্দমত মেডিকেল কলেজে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পূর্বের ভর্তির নিয়ম অনুযায়ী সারাদেশে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। এ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির পর প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ ছিলো। এতে শিক্ষার্থীরা পছন্দমত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারতো। চলতি বছর বেসরকারি মেডিকাল কলেজে ভর্তির ব্যাপারে বিস্ময়কর পরিবর্তন আনা হয়। সংশ্লিষ্টদের তীব্র বিরোধিতার মধ্যে প্রথমবারের মত অটোমেশন চালু করা হয়। এতে প্রথমে শিক্ষার্থীদের ৫টি মেডিকাল কলেজে ভর্তির চয়েস রাখা হয়। পরবর্তীতে এই নীতি পরিবর্তন করে ছেলেদের জন্য ৬০টি মেডিকেল কলেজ ও মেয়েদের জন্য ৬৬টি চয়েস রাখা হয়।
চয়েসের এ ধরনের নিয়ম শুধু বাংলাদেশে জন্য নয়, সারাবিশ্বে নজিরবিহিন। দেশের উচ্চ মাধ্যমিকে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ৫টি প্রতিষ্ঠানের চয়েস দেয়া যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য-অধিদপ্তর দেশ-বিদেশের সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ৬৬টি মেডিকেল কলেজের অপশন দেয়। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) এ ব্যাপারে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে। তাদের বিরোধিতাদের সত্ত্বেও স্বাস্থ্য-অধিদপ্তর গত ১৩ জুন মঙ্গলবার কলেজ ঠিক করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠায়। এ ক্ষুদে বার্তা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাদের দেয়া পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাননি অনেকে। অবস্থা দেখে মনে হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইচ্ছা মত কলেজ নির্বাচন করে শিক্ষার্থীদের ক্ষুদে বার্তা দিয়েছে। তাদের চয়েস কোনো মূল্য দেয়া হয়নি। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো যে, কোন নীতিতে বা পদ্ধতি অনুসরণ করে কলেজ নির্বাচন করা হয়েছে তা অবহিত করা হয়নি। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদের ভর্তির তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। যা নিয়ে দেশের মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিবাকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, মেডিকেল কলেজের সঙ্গে সংশিষ্ট সকলে অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করে পূর্বের পদ্ধিততে ফিরে যাওযার দাবি করেন।
প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মুবিন খান বলেন, অটোমেশন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তিতে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। কোন কলেজে ছাত্র-ছাত্রী পাচ্ছে না সবার মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হয়েছে । এই বছর ৪৯ হাজার ছাত্রছাত্রী মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তার মধ্যে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তির জন্য যখন আবেদন কল করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে মাত্র ৬ হাজার ৩২০ টি আবেদন পড়েছে । বেসরকারি কলেজের আসন সংখ্যা হচ্ছে 6500 এতে ১:১ ও হয় নাই । ভর্তি নীতিমালয়ে বলা হয়েছে যে ওয়ান ইনটু ফাইভ অর্থাৎ একজনের বিপরীতে পাঁচজন প্রার্থী কিন্তু প্রকৃত চিত্র হলো একজনের বিপরীতে অনেক ক্ষেত্রে একজনও হয়নি l সবকিছু মিলে একটি হযবরালো অবস্থা বিরাজ করছে। পৃথিবীর কোন দেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী সরকার ভর্তি করে দেয়ার নিদর্শন নেই বাংলাদেশের এ ধরনের কোন দৃষ্টান্ত নেই ।
তিনি বলেন, বেসরকারি মেডিকেলগুলোতে ভারতীয় দূতাবাসের তথ্য মতে প্রথম বর্ষ থেকে ইন্টার্নশিপ পর্যন্ত এই মুহূর্তে বারো হাজার বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী ১২০০০ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে এবং ২০০ মিলিয়নেরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে যেটা বিশ্বের এই সংকটময় মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিতে ড় ধরনের অবদান রাখছে । সুতরাং আমি বলব এটা চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের অর্জন এবং গৌরব বোধ করে অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা সেক্টরে এত বিশাল সংখ্যার বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করে না বা বিদেশি ছাত্রছাত্রী আসে না তাই সার্বিক অবস্থা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গুলোর অস্তিত্ব টিককে রাখা স্বার্থে পূর্বের নিয়ম ওহাল রাখার বিকল্প নেই ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্বাচনকৃত ভর্তিচ্ছু তালিকায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা ঢাকার বাইরে গ্রামে-গঞ্জের কোনো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আবার ঢাকার বাইরের অনেককেই রাজধানীসহ বড় বড় শহরে সুযোগ দেয়া হয়েছে। যা তাদের জন্য ব্যয় বহন করা কষ্টের। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্টরা অভিমত প্রকাশ করেন যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই নীতি মেডিকেল শিক্ষা ধ্বংসের নামান্তর। নির্বাচনের বছরে এসে মেডিকেলে ভর্তিতে এধরনের সিন্ধান্ত আত্মঘাতী হওয়ার সামিল।
মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারের ঘোষিত একটি নীতিমালা রয়েছে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যেকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডিন ও সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ থাকেন। এমন একটি গঠিত শক্তিশালী ভর্তি কমিটি থাকতে সেখানে হঠাৎ করে অটোমেশন পদ্ধতি চালুর প্রয়োজন নেই। কারণ, এই কমিটি তো স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত। কেউ অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। অতীতেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।