জেট ক্যাটাগরি হওয়ার ঝুকিতে ১৮ প্রতিষ্ঠান
শাহ আলম নূর : ছয় মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদনের বাইরে থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে তালিকাভুক্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত আরও আঠারোটি কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমপক্ষে দুই বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা এবং বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হওয়ায় জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনার ঝুঁকিতে রয়েছে।
২৫ জুন, দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকার কারণে ইতিমধ্যেই এ এবং বি ক্যাটাগরির পাঁচটি নন-কমপ্লায়েন্ট কোম্পানিকে জেট ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিনিয়োগকারিদের কোন লভ্যাংশ না দেয়া সহ বেশ কিছু সমস্যা থাকা সত্তেও ডিএসই বেশ কয়েক বছর যাবত এসব কোম্পানিকে এ এবং বি ক্যাটাগরিতে দেখিয়ে আসছে। এভাবে বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করা হয়েছে বলে সমনে করছেস সংশ্লিষ্ঠরা।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাদের ওয়েবসাইটে জেড ক্যাটাগরির পরিবর্তে এ এবং বি ক্যাটাগরি দেখানোর বিষয়ে ডিএসইর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে।
২৬ জুন ডিএসই-তে পাঠানো বিএসইসি চিঠিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে, “ক্যাটাগরির এই ধরনের মিথ্যা চেহারা বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই বিভ্রান্তিকর।”
যে পাঁচটি কোম্পানিকে ইতিমধ্যে জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলো হল নুরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার, নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, শুরবিদ ইন্ডাস্ট্রিজ, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস এবং অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স।
অন্য ১৮টি অ-অভিযোগ কোম্পানির মধ্যে, রিং শাইন টেক্সটাইল, নিউ লাইন ক্লোথিংস, কাট্টালি টেক্সটাইল, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, এবং রেনউইক জাজনেশ্বর অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেড এখনও এ ক্যাটাগরিতে শ্রেণীবদ্ধ।
মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, ডেল্টা স্পিনার্স, ইয়াকিন পলিমার, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস, ইনটেক লিমিটেড, কেয়া কসমেটিকস, এটলাস বাংলাদেশ, আজিজ পাইপস, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, লিব্রা ইনফিউশনস, জাহিন স্পিনিং এবং জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ বি শ্রেণীভুক্ত প্রতিষ্ঠান।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ২১টি টানা দুই বছর লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি, ১৪টির এজিএম মুলতুবি রয়েছে এবং পাঁচটি ছয় মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদনের বাইরে রয়েছে।
বিএসইসির নির্দেশনা অনুসারে, একটি কোম্পানি যদি নিম্নলিখিত শর্তগুলি মেনে চলতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাকে জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হবে: পরপর দুই বছর নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা না করা; নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এজিএম না করা, সর্বোচ্চ ছয় মাস চালু না থাকা; এবং টানা দুই বছরের জন্য নেতিবাচক নেট অপারেটিং নগদ প্রবাহ।
বাজার সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন বিনিয়োগকারীরা যারা নিম্নমানের শেয়ার থেকে মুনাফা করছে তারা পাঁচটি নন-কম্পালায়েন্স কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়ায় একটি ধাক্কা খেয়েছেন।
কিছু বিনিয়োগকারী বলছেন বিএসইসি কর্তৃক শিথিলতার কারনে দূর্বল কোম্পানিগুলো সুযোগ পাচ্ছে। এই শিথিলতা মূলত তালিকাভুক্ত নন-কম্পালায়েন্স কোম্পানিকে জেট কাটাগরিতে নামিয়ে আনা কঠিন করে তুলেছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যে একটি কোম্পানি পরপর দুই বছর নগদ লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হলে জেট ক্যাটাগরিতে পাঠানো যেতে পারে। যখন আইনি পরিণতি বা ফোর্স ম্যাজিউরের কারণে এজিএম করতে ব্যর্থ হলে দুই বছরের জন্য ছাড় দেওয়া যেতে পারে।
কমিশনের শিথিলতার কারনে কয়েক ডজন দুর্বল কোম্পানিকে লভ্যাংশ প্রদান না করে বা ন্যূনতম অর্থ প্রদান না করে এ বা বি বা ্যাটাগরিতে অবস্থান করতে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্মকর্তারা বলছেন দূর্বল কোম্পানির গ্রেড পরিবর্তন না করার কারনে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে ডিএসই’র কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে কমিশন। তারা বলছেন ডিএসই’র কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না এলে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।
ডিএসই-এর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, তাদের তদন্ত দল দেখতে পেয়েছে যে পাঁচটি কোম্পানি ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদনের বাইরে রয়েছে। একই সাথে অন্যান্য অনিয়মের কারনে এসব কোম্পানিকে জেট ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন আমরা এখন পর্যন্ত কমিশনের কোনো চিঠি পাইনি। তবে ডিএসই অন্য ১৮টি কোম্পানির বিষয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় শর্ত পূরন করতে ব্যার্থ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে যে কোনো ক্যাটাগরি পরিবর্তনের বিষয়ে ডিএসই সবসময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে থাকে। সুতরাং ঝুকিতে থাকা ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে অবশ্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে আলোচনা করবে।