আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৪ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার |

kidarkar

শেষ ওভারে নাটকীয়তার পর রুদ্ধশ্বাস জয় বাংলাদেশের

স্পোর্টস ডেস্ক: শেষ ওভারে দরকার মাত্র ৬। করিম জানাতের করা ওই ওভারে প্রথম বলেই মেহেদী হাসান মিরাজ বাউন্ডারি হাঁকালে বাংলাদেশের জয় বলতে গেলে নিশ্চিত হয়ে যায়। কে জানতো এরপর এমন নাটক অপেক্ষা করছে!

ওভারের দ্বিতীয় বলে মিরাজ (৮) পুল খেলতে গিয়ে মিডউইকেটে দিলেন ক্যাচ। তার পরের দুই বলে তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদ ক্যাচ দিয়ে ফিরলে হ্যাটট্রিকও হয়ে যায় করিম জানাতের।

শেষ ২ বলে দরকার ২ রান। হাতে ২ উইকেট। স্ট্রাইকে শরিফুল ইসলাম। আরও একবার কি তীরে এসে তরী ডুববে? পিনপতন নীরবতা পুরো স্টেডিয়ামে। তবে নাটকের শেষ হলো পঞ্চম বলেই, শরিফুল বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করে ফেললেন।

সিলেটে সিরিজের রুদ্ধশ্বাস প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানকে ২ উইকেট আর এক বল হাতে রেখে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের সিরিজে নিয়েছে ১-০ লিড।

সামনে ১৫৫ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য। ১০ ওভার যেতেই ৬৪ রানে নেই ৪ উইকেট। আফগানিস্তানের বোলিং শক্তির কথা সবারই জানা। এই ম্যাচ বাংলাদেশের হাত থেকে বুঝি ছুটেই গেলো, মনে হচ্ছিল তখন।

তবে তাওহিদ হৃদয় আর শামীম হোসেন পাটোয়ারী দেখালেন তারুণ্যের শক্তি। চাপের মুখে ভড়কে না গিয়ে দুর্দান্ত এক জুটি গড়লেন তারা। যে জুটিতেই ম্যাচটা চলে আসে বাংলাদেশের দিকে।

হৃদয়-শামীমের জুটিটি ৪৩ বলে ৭৩ রানের। ২৫ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৩৩ করে শামীম আউট হন। তবে হৃদয় অপরাজিত ছিলেন শেষ পর্যন্ত।

৩২ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে ৩টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা হাঁকান ডানহাতি এই ব্যাটার। টি-টোয়েন্টিতে এটি তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসও।

রান তাড়ায় আরও একবার শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। আফগান পেসার ফজলহক ফারুকি উইকেট উপড়ে দেন রনি তালুকদারের (৫ বলে ৪) স্টাম্প। ৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

নাজমুল হোসেন শান্ত শুরুটা করেছিলেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। ওমরজাইকে মিডউইকেট দিয়ে দারুণ একটি ছক্কাও হাঁকান। কিন্তু আরও একবার দৃষ্টিকটু আউটে শেষ হয় শান্তর ইনিংস। বল তার কনুইয়ে লেগে ভেঙে যায় স্টাম্প। ১২ বলে শান্ত করেন ১৪।

লিটন দাস ঠিক টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংটা করতে পারছিলেন না। ১৯ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৮ রান করে ডাউন দ্য উইকেটে ওমরজাইকে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে আসেন এই ওপেনার। ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

৭.২ ওভারে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ৪১ রান তোলার পর বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ওই অবস্থায় খেলা আর না হলে বাংলাদেশ হেরে যেতো।

তবে বৃষ্টি থেমেছে দ্রুতই। আবারও ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এবার অধিনায়ক সাকিব রানের চাকা ঘোরানোর চেষ্টা করেন। আফগান পেসার ফরিদ আহমেদকে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান, পরের ওভারে রশিদ খানকেও চার মারেন।

কিন্তু মারমুখী হয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাকিব। আগের ওভারে দুই বাউন্ডারি হজম করা ফরিদই বাউন্সি ডেলিভারিতে বাংলাদেশ অধিনায়ককে ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ বানিয়েছেন। ১৭ বলে ৩ বাউন্ডারিতে সাকিব তখন ১৯ রানে।

৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদেই ছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। তাওহিদ হৃদয় আর শামীম হোসেন পাটোয়ারী মারকুটে জুটিতে জয়ের ভিত গড়ে দেন।

এর আগে ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিল আফগানিস্তান। ১৬ ওভার শেষেও তাদের রান ছিল ১০১। কিন্তু মোহাম্মদ নবি আর আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের এক জুটিতেই চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পেয়ে গেছে আফগানরা।

সাকিব-তাসকিন-মোস্তাফিজদের পিটিয়ে শেষ ৪ ওভারে সফরকারী দল তুলেছে ৫৩ রান। সবমিলিয়ে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তানের সংগ্রহ ১৫৪।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন তিনি।

ইনিংসের অষ্টম বলেই উইকেট পেতে পারতো বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদকে খেলতে গিয়ে বল বাতাসে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ।

কভার পয়েন্ট থেকে দৌড়ে গিয়ে রনি তালুকদার দুর্দান্ত এক ক্যাচ তালুবন্দী করে ফেলেছিলেন। কিন্তু উল্টো দিক থেকে দৌড়ে গিয়ে কোনোমতে হাতে জমানো সেই ক্যাচ তিনি পড়ে যাওয়ার পর পড়ে যায় মাটিতে। ১ রানে জীবন পান গুরবাজ।

তৃতীয় ওভারেই উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। নাসুমের বলে স্কয়ার লেগে তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন হযরতউল্লাহ জাজাই (১০ বলে ৮)। তার পরের ওভারে তাসকিনের আঘাত। ডানহাতি এই পেসারের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে ক্যাচ দেন আগে জীবন পাওয়া গুরবাজ (১১ বলে ১৬)।

এরপর শরিফুল ইসলাম নিজের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই তুলে নেন ইব্রাহিম জাদরানকে (৬ বলে ৮)। আগের বলে ছক্কা হাঁকানো জাদরান ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক লিটন দাসকে। ৩২ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে আফগানরা। পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারে তোলে মোটে ৪০ রান।

পরের দুই ওভার দেখেশুনে খেলেছে আফগানরা। অষ্টম ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেটর দেখা পান সাকিব। টাইগার অধিনায়ককে ওপরে খেলতে গিয়ে মিডঅফে ধরা পড়েন করিম জানাত (৯ বলে ৩)। দৌড়ে এসে ক্যাচটি তালুবন্দী করেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

সেখান থেকে ৩৬ বল খেলে ৩১ রানের ধীরগতির এক জুটি গড়েন মোহাম্মদ নবি আর নাজিবুল্লাহ জাদরান। ১৪তম ওভারে এই জুটিটি ভাঙেন মিরাজ। টাইগার অফস্পিনারের বল নাজিবুল্লাহর (২৩ বলে ২৩) ব্যাট ছুঁয়ে গেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন লিটন। ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারায় আফগানরা।

তবে এরপর নবি আর আজমতুল্লাহ ওমরজাই দারুণ জুটি গড়েন। ষষ্ঠ উইকেটে তারা ৩১ বলে ৫৬ রান এনে দেন আফগানদের। ১৯তম ওভারে ওমরজাই সাকিবকে টানা দুই ছক্কা হাঁকান। ওই ওভারেরই শেষ বলে আরেকটি বিগ হিট নিতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে তাসকিনের ক্যাচ হন এই ব্যাটার (১৮ বলে ৪ ছক্কায় ৩৩)।

ফিফটি তুলে নিয়ে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার নবি। ৪০ বলে তার ৫৪ রানের ইনিংসে ছিল ৬টি চার আর ১টি ছক্কার মার।

বাংলাদেশি বোলারদের সবাই উইকেট পেয়েছেন। শেষের দিকে মার খেলেও তুলনামূলক মিতব্যয়ী ছিলেন সাকিব আর তাসকিন। সাকিব ২৭ রানে ২টি আর তাসকিন ২৯ রানে নেন একটি উইকেট।

একটি করে উইকেট নিয়েছেন নাসুম, শরিফুল, মোস্তাফিজ আর মিরাজও। এর মধ্যে সবচেয়ে খরুচে ছিলেন শরিফুল। ৩ ওভারে ৩০ রান দেন তিনি। মোস্তাফিজ ৪ ওভারে খরচ করেন ৩১ রান।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.