আজ: শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২০ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

রাশিয়ার হুমকিতে বিশ্ববাজারে উর্ধ্বমুখী গমের দাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে উত্তেজনা যেন বাড়ছে নতুন করে। দিন দু’য়েক আগে শর্ত পূরণ না হওয়ার অজুহাতে কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি থেকে সরে গেছে রাশিয়া। এরপর ইউক্রেনের বন্দরগামী জাহাজগুলোকে সম্ভাব্য সামরিক লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনার বিষয়ে হুমকি দিয়েছে দেশটি।

আর এর ফলও মিলেছে হাতেনাতে। বিশ্ব বাজারে গমের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের বন্দরের দিকে যাওয়া জাহাজগুলোকে সম্ভাব্য সামরিক লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনার বিষয়ে রাশিয়া ঘোষণা দেওয়ার পর বিশ্ব বাজারে গমের দাম তীব্রভাবে বেড়ে গেছে। এর আগে চলতি সপ্তাহেই কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি থেকে সরে আসে মস্কো।

এক বছর আগে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তির মাধ্যমে কৃষ্ণসাগর দিয়ে নির্বিঘ্নে আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে পারত ইউক্রেনের খাদ্যশস্য। তবে গত ১৭ জুলাই চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর রাশিয়া সেটির মেয়াদ বাড়াতে অস্বীকৃতি জানায়।

এদিকে মস্কোর ওই হুমকির পর হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বেসামরিক জাহাজে হামলায় ইউক্রেনকে দোষারোপ করার পরিকল্পনার জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেছেন। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তার দাবি পূরণ হলে তিনি অবিলম্বে শস্য চুক্তিতে ফিরে যাবেন।

তার দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাশিয়ার কৃষি ব্যাংককে বৈশ্বিক অর্থপ্রদান ব্যবস্থার সাথে পুনরায় সংযোগ করা।

বিবিসি বলছে, বুধবার রাতে ইউক্রেনের বন্দর শহর মাইকোলাইভে রুশ বিমান হামলায় অজ্ঞাত সংখ্যক লোক নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এছাড়া বুধবার রাতে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরেও বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে রাশিয়ান-নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়ায় ড্রোন হামলায় এক কিশোরী নিহত হয়েছেন বলে রুশ সমর্থিত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি থেকে সরে আসার পর বুধবার কার্যত হুমকির সুরে কথা বলে রাশিয়া। দেশটি জানায়, কৃষ্ণসাগরে জাহাজ ঢুকলেই তাতে হামলা করা হতে পারে।

বুধবার এক বিবৃতিতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইঙ্গিত দিয়েছে, রাশিয়ার সম্মতি ছাড়া ইউক্রেনের শস্য নিতে, কৃষ্ণসাগরে যদি কোনো জাহাজ প্রবেশ করে সেটির ওপর হামলা চালানো হবে। কারণ এসব জাহাজকে অস্ত্রবাহী হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, ‘কৃষ্ণসাগর চুক্তি ছিন্ন এবং সামুদ্রিক মানবিক করিডোর বন্ধ হওয়ায়— ২০ জুলাই রাত ১২টা থেকে কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের বন্দরের দিকে যাওয়া সব জাহাজকে অস্ত্রভর্তি কার্গোবাহী জাহাজ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘জাহাজে যেসব দেশের পতাকা পাওয়া যাবে; তাদেরকে কিয়েভ সরকারের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের সংঘাতে জড়িত বলে বিবেচনা করা হবে। কৃষ্ণসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমার উত্তরপূর্ব এবং দক্ষিণপূর্বের কয়েকটি এলাকাকে জাহাজ চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে।’

এদিকে রাশিয়ার এই হুমকির পর বিশ্ববাজারে গমের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বিবিসি বলছে, বুধবার ইউরোপীয় স্টক এক্সচেঞ্জে গমের দাম আগের দিনের থেকে ৮.২ শতাংশ বেড়েছে। দাম বাড়ার পর প্রতি টন গম এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫৩ দশমিক ৭৫ ইউরোতে। এছাড়া ভুট্টার দাম বেড়েছে ৫.৪ শতাংশ।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে গমের দাম এক লাফে বেড়েছে ৮.৫ শতাংশ। যা ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মূল্য বৃদ্ধি।

ইউক্রেনের কৃষিমন্ত্রী মাইকোলা সোলস্কি বলেছেন, ওডেসা বন্দরে রাশিয়ার হামলায় ৬০ হাজার টন শস্য ধ্বংস হয়ে গেছে এবং শস্য রপ্তানি অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মূলত শস্য চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার ভোরে ইউক্রেনের বন্দরগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে রাশিয়া।

ম্যারেক্স ক্যাপিটাল বিশ্লেষক চার্লি সারনাটিঙ্গার বলেছেন, চলমান যুদ্ধে এই ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধি ও হামলার হুমকি ‘কৃষ্ণসাগর দিয়ে সমুদ্রপথে সকল ধরনের শস্যের চালান বন্ধ করে দিতে পারে। আর তেমনটি হলে যুদ্ধের শুরুতে যে চিত্র দেখা গিয়েছিল এখনও সেই একই পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।

এ/সি ট্রেডিংয়ে প্রেসিডেন্ট জিম গারলাচ বলেছেন: ‘ইউক্রেনের পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে সত্যিকার অর্থেই ভয়াবহ হামলা চলছে এবং কেউ এর মাঝখানে যাবে না। এই অঞ্চলটি ইউরোপের রুটির ঝুড়ি এবং জাহাজগুলোকে সেখান থেকে সরিয়ে রাখা হচ্ছে।’

বিবিসি বলছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন বুধবার শস্য চুক্তিকে পশ্চিমা দেশগুলো ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল’ হিসাবে ব্যবহার করার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া ইউক্রেন ‘যুদ্ধের উদ্দেশ্যে’ কৃষ্ণসাগরের শস্য করিডোর ব্যবহার করেছে বলেও অভিযোগও করেছে মস্কো।

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.