ফান্ড লুটপাটে ফেঁসে যাচ্ছেন ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ
নিজস্ব প্রতিবেদক: কোনো কেনাকাটা না করেও ২২ খাতে ব্যয় দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক রতন কুমার সাহাসহ তিনজন।
রতন কুমার সাহা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে যখন অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন তখন কলেজের ৪৪টি ব্যাংক হিসাবে স্থিতি ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৭২৮ টাকা। মাত্র দেড় বছর দায়িত্ব পালনের পর ব্যাংক হিসাবের স্থিতির পরিমাণ কমে ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৪৬ টাকা হয়। এছাড়াও বেশকিছু খাতে আয় যোগ হয় ওই ফান্ডে।
কিন্তু ফান্ডের টাকা বৃদ্ধি না পেয়ে বরং কমেছে। কেনাকাটার সত্যতা না থাকলেও ২২ খাতে ব্যয় দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ২ কোটি ৪০ লাখ ১২ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এ ঘটনায় আরও দুইজনকে আসামি করে রোববার (২৩ জুলাই) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটির উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অনুমোদনকৃত মামলার অপর আসামিরা হলেন, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান ও কলেজের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর কাজী জাহাঙ্গীর আলম।
অধ্যাপক রতন কুমার সাহা ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যান।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে ৪৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় খাতভিত্তিক আর্থিক আয়-ব্যয় নির্বাহ করা হয়ে থাকে। রতন কুমার সাহা ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এই কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। এ পদে যোগ দিয়ে তার আগের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবু তাহেরের দায়িত্ব থেকে কলেজের ৪৪টি ব্যাংক হিসাবের মোট স্থিতি ৭ কোটি ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৭২৮ টাকা বুঝে নেন।
রতন কুমার সাহার সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২০১৯ সালের ৩ মে তাকে ওএসডি করা হয়। এরপর একই বছরের ১১ জুন পরবর্তী অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া। তিনি যখন দায়িত্ব নেন তখন কলেজের ব্যাংক হিসাবগুলোর স্থিতি ছিল ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৪৬ টাকা।
দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, অধ্যাপক রুহুল আমিন ভূঁইয়া ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগ দিয়ে কলেজের পাঁচ শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি গঠন করেন। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষা তহবিল, উন্নয়ন তহবিল, ল্যাবরেটরি তহবিল, অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারী তহবিলসহ উল্লেখযোগ্য ২২টি খাতের আয়-ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখে, এগুলোতে বিল-ভাউচার নেই, এমনকি ব্যয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা কমিটির রিকুইজিশনও ছিল না। মালামাল গ্রহণ বা বিতরণের প্রমাণ নেই এবং বিধি মোতাবেক ক্রয়/ব্যয় হয়নি মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কলেজের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি অধ্যাপক রতন কুমার সাহার কর্মকালীন বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও আত্মসাতের প্রমাণ পায়।
অপরদিকে আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে গঠিত আরেকটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অধ্যাপক রতন কুমার সাহা, তৎকালীন হিসাবরক্ষক আব্দুল হান্নান এবং ক্যাশিয়ার কাজী জাহাঙ্গীর আলমের পরস্পর যোগসাজশে ২ কোটি ৪০ লাখ ৯২ হাজার ৯০৭ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এরপর বিষয়টি দুদকের কাছে হস্তান্তর করা হলে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি।
দুদকের কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্প্রতি তিনি কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশ করেন।
ওই প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, কোনো খাতে খরচ না হলেও বা ব্যয়ের ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও ব্যয় দেখিয়ে পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ২ কোটি ৪০ লাখ ১২ হাজার ৯০০ টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এই অভিযোগে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭(ক)/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুদক।