উৎপাদনে ব্র্যাক ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অংশীদারি চুক্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এই যৌথ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো জলবায়ু-সহনশীল ফসল উৎপাদন এবং সঠিক চাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে এই অঞ্চলের কৃষকদের ক্ষমতায়ন করা।
এই কৃষি-কেন্দ্রিক সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের আওতায় ব্র্যাক ব্যাংক কৃষক, স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা এবং সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের গবেষণা ও প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। প্রকল্পটি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু-সহনশীল ফসল উৎপাদন পদ্ধতির উন্নয়ন এবং গ্রহণের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতিও জোর দেবে।
এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবগুলো প্রশমিত করার বিষয়ে কৃষকদের সক্ষম করে তোলা, যেহেতু বিশেষকরে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এসব অঞ্চলের আবাদি জমিতে লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিওও মো. সাব্বির হোসেন এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব সোসিওইকোনমিক রিসার্স অ্যান্ড ট্রেইনিংয়ের চেয়ারম্যান ও ডিন ড. খন্দকার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কৃষিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ খায়রুল হাসান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রি বিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের ড. মোঃ সালাউদ্দিন পলাশ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি ১৬ জুলাই ২০২৩ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব এসএমই ব্যাংকিং সৈয়দ আব্দুল মোমেন; হেড অব কমিউনিকেশন্স ইকরাম কবীর এবং উভয় প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
ব্র্যাক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে দুই বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো সাতক্ষীরা, খুলনা এবং বরগুনা জেলায় বসবাসকারী প্রায় ৩,০০০ জন কৃষকের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলা।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ পানিতে লবণাক্ততার কারণে ফসল উৎপাদনে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। সাধারণত এই অঞ্চলের কৃষকরা বছরে মাত্র একটি ফসল চাষ করতে পারেন। এই সমস্যাটির সমাধানকল্পে প্রকল্পটি নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় পরিবর্তন আনবে– লবণাক্ত-সহনশীল ফসলের প্রজাতি নির্বাচনের ওপর দৃষ্টি রাখার পাশাপাশি ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লবণাক্ততার প্রকোপ কমানোর বিষয়ে ব্যবস্থাপনা-কৌশল বাস্তবায়ন করবে। এই যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণাটি উক্ত এলাকার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কৃষকদের জন্য খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এই বিশেষ সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিওও মো. সাব্বির হোসেন তার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একটি গবেষণা প্রকল্পে অংশীদারিত্ব করতে পারা খুবই আনন্দের বিষয়, যা উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের আবাদযোগ্য জমিতে লবণাক্ততার বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে। এই যৌথ উদ্যোগ কৃষকদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।”
তিনি উৎপাদনমুকী অর্থনীতিতে, বিশেষকরে কৃষি খাতে, অবদান রাখার জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির ওপর আবারও জোর দেন। ব্যাংক তার সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল এমন সব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার নীতিগুলোকে সমুন্নত রেখে মানুষ এবং সমাজের মঙ্গলের ওপর স্থায়ী প্রভাব নিশ্চিত করে।
এই যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জসমূহকে কার্যকরভাবে প্রশমিত করে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের জীবনে স্থায়ী ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।