আশুরা যে কারণে স্মরণীয়
নিজস্ব প্রতিবেদক: আল্লাহ তায়ালা হিজরি সনের যে চারটি মাসকে সম্মানিত করেছেন তা হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও সফর। এ চারটি মাসের মধ্যে মুহাররম অন্যতম ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময় মাস।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গণনা হিসেবের মাস হলো বারোটি। (মহররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানী, জমাদিউল আউয়াল, জমাদিউস সানী, রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জিলকদ এবং জিলহজ) যেদিন থেকে তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এর মধ্যে চারটি মাস বিশেষ সম্মানিত। (সূরা তাওবা, আয়াত, ৩৬)
১২ মাস হলো মহররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানি, জমাদিউল আউয়াল, জমাদিউস সানি, রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জুলকদ ও জিলহজ। আর হারাম বা সম্মানিত চারটি মাস হলো মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ। (তাফসিরে বাগাভি ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা নং :৪৪)
আসমান-জমিন সৃষ্টিসহ পৃথিবীতে অনেক স্মরণীয় ও যুগান্তকারী ঘটনা এ মাসের ১০ তারিখে অর্থাৎ পবিত্র আশুরার দিন সংঘটিত হয়েছিল।
মহররমের দশম দিবসে অর্থাৎ আশুরার দিনে সংঘটিত ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় ঘটনাবলির মধ্যে রয়েছে-
১. আকাশ জমিন পাহাড়-পর্বত সব কিছুর সৃষ্টি। ২. আদম (আ.) কে সৃষ্টি । ৩. নূহ (আ.) মহাপ্লাবন শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরণ। ৪. হজরত ইবরাহিম (আ.) নমরুদের প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তিলাভ। ৫. দীর্ঘ ১৮ বছর রোগ ভোগের পর হজরত আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ ইত্যাদি।
এছাড়াও এদিন বিশেষভাবে স্মরণীয় একটি ঘটনা হলো- ঐতিহাসিক কারবালার রক্তঝরা ঘটনা। অর্থাৎ ১০ মুহাররম ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে শাহাদতের অমিয় সুধা পান করেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.)।
তবে এ ঘটনার বাইরেও এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইসলাম এবং ইসলাম পূর্ব সময় থেকে। এই দিন এবং এর আগে পরে একদিন মিলিয়ে রোজা রাখতেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং অন্যদের রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছেন তিনি। (সহিহ মুসলিম: ২৫২০)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আগমন করলেন, দেখলেন মদীনার ইয়াহুদীরা আশুরার দিবসে রোজা পালন করছে।
তাদেরকে রোজা রাাখার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তারা বললো, এই দিনটি আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনে আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ.) এবং তার সম্প্রদায় বনী ইসরাঈলকে ফেরআউনের কবল থেকে মুক্ত করেছেন এবং তার উপর বিজয় দান করেছেন।
আর তারই শুকরিয়া হিসেবে এদিনে মুসা (আ.) রোজা রেখেছিলেন। তাই আমরাও এই দিনে রোজা রাখি।
তখন রাসুল (সা.) বললেন মুসা (আ.) এর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তোমাদের চেয়ে আমিই বেশি হকদার। তারপর তিনি নিজেও রোজা রাখলেন এবং সাহাবিগণকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। (মুসলিম : ২৬৫৩)
তবে ইয়াহুদীরা আশুরা উপলক্ষে একদিন রোজা রাখে। তাদের রোজার সাথে যেন মুসলমানদের রোজার সাদৃশ্য না হয়, তাই মুসলমানরা আশুরার রোজার সাথে ৯ অথবা ১১ তারিখে আরো একটি রোজা বৃদ্ধি করে মোট দুইটি রোজা রাখবে।