ভারতে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন হয়েছে সম্রাট
নিজস্ব প্রতিবেদক: জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার আসামি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট ভারতে চিকিৎসা শেষে ফিরেছেন বলে হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে।
বুধবার (২ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে চিকিৎসা শেষে গত ২৪ জুলাই সম্রাট দেশে ফেরেন বলে হাইকোর্টকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন সম্রাটের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী। আজ বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
গত ১৫ জুলাই দুদকের করা মামলার রিট শুনানির একদিন আগে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে চলে যান সম্রাট। তার আইনজীবী তখন জানান, চিকিৎসার জন্য আদালতের অনুমতি নিয়েই কলকাতা গিয়েছেন তিনি।
এর পরের দিন জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার আসামি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতির আদেশ স্থগিত চেয়ে দুদকের করা আবেদনের শুনানি ১ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি করেন হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় সেটি শুনানিতে উঠে।
সম্রাটের বিদেশ গমনে বিচারিক আদালতের দেওয়া অনুমতি বাতিল চেয়ে গত ১৩ জুলাই হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করে দুদক। পরে গত ১৬ জুলাই এ আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার একদিন আগে ১৫ জুলাই দিনগত রাতে চিকিৎসার জন্য ভারতে চলে যান সম্রাট।
১৬ জুলাইয়ের শুনানিতে সম্রাটের বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে আদালত শুনানির জন্য ১ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) রাখেন। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট একই বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ওইদিন আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান আর সম্রাটের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী।
ওইদিন মুনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, আদালতের অনুমতি নিয়ে ১৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য ভারতের কলকাতায় গেছেন সম্রাট। আগামী ২৫ জুলাই তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। উনি (সম্রাট) নিজেই আমাকে এমনটি জানিয়েছেন। আমি যেটুকু জানি তা আদালতকে জানিয়েছি।
শুনানিতে দুদকের আইনজীবী বলেন, সম্রাট গত বছরের মে মাসে অসুস্থতার সার্টিফিকেট দেখিয়েছেন। তখন তার আইনজীবী বলেন, ভিসা পাওয়ায় ১৫ জুলাই তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে গেছেন।
এর আগে গত ১ জুন সম্রাটকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেন বিচারিক আদালত। একই সঙ্গে আদালত সম্রাটের পাসপোর্ট তার জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম এ আদেশ দেন।
ওইদিন আইনজীবী আফরোজা জানান, তার মক্কেল (সম্রাট) কিডনিসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আগেই আবেদন করেছিলেন তিনি। একই সঙ্গে পাসপোর্ট তার জিম্মায় দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয় আদালতের কাছে। শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দিয়েছেন।
আইনজীবী আফরোজা আরও জানান, সম্রাটের পাসপোর্ট তার জিম্মায় দেওয়ার আদেশ হয়েছে। তবে আদালত শর্ত দিয়েছেন, পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য সম্রাট একমাস বিদেশে অবস্থান করতে পারবেন। তিনি তার পাসপোর্ট সর্বোচ্চ দুইমাস নিজের জিম্মায় রাখতে পারবেন। পরে তাকে তার পাসপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে।
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় তার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। অভিযোগপত্রে তার বিরুদ্ধে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
এছাড়া অভিযোগপত্রে ২১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, এ টাকা তিনি পাচার করেছেন। গত বছরের ২২ মার্চ অভিযোগপত্র আমলে নেন আদালত।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তার সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। তখন র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গ্রেফতারের সময় সম্রাট ও আরমান মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। তাদের কাছে বিদেশি মদ ছিল। এ কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের ছয়মাসের কারাদণ্ড দেন।
গ্রেফতারের পর সম্রাট ও আরমানকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আনা হয়। পরে সম্রাটকে নিয়ে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালায় র্যাব। সেখানে বন্যপ্রাণীর চামড়া, মাদক ও অস্ত্র পাওয়ার কথা বলা হয়। বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্রাটকে ছয়মাসের কারাদণ্ড দেন।