আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৪ অগাস্ট ২০২৩, শুক্রবার |

kidarkar

পুঁজি বাজারে ফ্লোর প্রাইসের প্রভাব

ফ্লোর প্রাইসে ব্যাংকগুলির আটকা ১৬ হাজার কোটি টাকা

শাহ আলম নূর : ফ্লোর প্রাইসের মধ্যে ক্রেতাদের ক্ষীণ উপস্থিতির কারণে গত এক বছর ধরে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রায় শেয়ার মার্কেটে আটকে আছে, যা ঋণদাতাদের বেশ ভাল ভাবে আঘাত করেছে। এতে এসব ব্যাংকে দেখা দিয়েছে তারল্যের সংকট।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২১ সালে করোনাভাইরাস মহামারী টেনে আনা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে শেয়ার বাজার পতন বন্ধ করতে প্রতিটি শেয়ার কোম্পানির জন্য ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করেছে।

গত ডিসেম্বর মাসে ১৬৯টি কোম্পানির জন্য ফ্লোর প্রাইজ তুলে নেওয়া হয়েছিল। চলতি  বছরের মার্চ মাসে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও গভীর হওয়ার পরে আবার নতুন করে তা চালু করা হয়েছে।

শেয়ার বাজারে দেশের ৬৩টি ব্যাংক ২০২২ শেয়ার মার্কেটে ১৬,৩১৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। যা আগের ২০২১ সালের তুলনায় ১৫,১০১ কোটি টাকা বেশি।

বিপুল পরিমান বিনিয়োগ করেও দেশের ব্যাংকগুলো কোন রকমের লাভ করতে পারেনি। বাজারে ক্রেতার সংকটে এসব প্রতিষ্ঠান তারে শেয়ার বিক্রি করতে পেরেনি।

ব্যাংকগুলো ফ্লোর প্রাইস এর কারনে পরিস্থিতিকে তাদের জন্য অনন্য বলে বর্ণনা করেছেন। তারা বলছে, ফ্লোরের দাম আটকে যাওয়ায় তারা বেশ সমস্যার মধ্যে দিয়ে সময় পার করছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ এ (রুমী) আলী বলেন, বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে না, কিন্তু বাংলাদেশে তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হয়।

“কিন্তু যেহেতু একটি স্টক মার্কেট বিনিয়োগ ঝুঁকি বহন করে, তাই একটি সঠিক নির্দেশিকা থাকা উচিত।” ব্যাংকগুলোর শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা উচিত নয় বলে মনে করেন প্রখ্যাত এই ব্যাংকার। বরং তাদের উচিত উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া। সমস্ত স্থানীয় বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আছে কিন্তু রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকের উপস্থিতি বেশি।

ছয়টি রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংক সম্মিলিতভাবে গত বছর শেয়ারবাজারে ৫,৯০৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল, যা ব্যাংকিং খাতের মোট বিনিয়োগের ৩৬ শতাংশ।

সোনালী ব্যাংক ২০২২ সালে ২,১৬৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, যা সরকারি ব্যাংগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ এসেছে জনতা ব্যাংক থেকে এবং তা দাঁড়িয়েছে ১,৭৭৫ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংকের বিনিয়োগ ছিল ৮৬৮ কোটি টাকা, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ।

প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, পোর্টফোলিওতে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ২০২২ সালে শেয়র বাজার থেকে লাভ করার কোনো সুযোগ ছিল না কারণ শেয়ার বাজার মন্দার মধ্যে দিয়ে সময় পার করেছে।

একটি মার্চেন্ট ব্যাঙ্কের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন যে ব্যাঙ্কগুলি যদি দেখে যে তাদের স্টক মার্কেটের বিনিয়োগ আটকে যাচ্ছে বা ক্ষতিেসেম্মুখিন হচ্ছে তবে তারা বাজারে আর বিনিয়োগ করবে না। “এটি দীর্ঘমেয়াদে বাজারে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।”

শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগের আয় কমেছে অনেক ব্যাংকের। উদাহরণ স্বরূপ, সোনালী ব্যাংকের বিনিয়োগ আয় ৮৬ শতাংশ কমে ৭২ কোটি টাকায়, আইএফআইসি ব্যাংকের আয় ৯৯ শতাংশ কমে ১ কোটি টাকায় এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের আয় ৭১ শতাংশ কমে ১০ কোটি টাকা হয়েছে।

ব্যাংকের জন্য কম মুনাফা মানে বিনিয়োগকারীদের জন্য কম লভ্যাংশ। উদাহরণস্বরূপ, সিটি ব্যাংক ২০২২ সালের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা ২০২১ সালে ছিল ১২.৫ শতাংশ।

একজন মার্চেন্ট ব্যাংকার বলেছেন যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে যে ফ্লোর প্রাইস, যা বিশ্বের বেশিরভাগ স্টক মার্কেটে প্রায় নজিরবিহীন, যদি প্রত্যাহার করা হয়, বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং অন্যান্য অনেক বিনিয়োগকারীর কারনে বাজারকর পতন নেমে আসবে। কিন্তু বাজার শেষ পর্যন্ত অন্যান্য দেশে দেখা হিসাবে প্রত্যাবর্তন করবে।

মনিরুজ্জামান বলেন, এমনকি ব্লু-চিপ স্টকগুলি, যেগুলি সাধারণত বড়, সুপ্রতিষ্ঠিত, আর্থিকভাবে ভাল কোম্পানিগুলির একটি চমৎকার খ্যাতি রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানও ফ্লোর প্রাইজে আটকা পরেছে।

দেশের ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্ল্যাটফর্ম অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হুসেন ফ্লোর প্রাইসকে একটি সীমাবদ্ধতা বলে অভিহিত করেছেন। “স্টক মার্কেটে কোন সীমাবদ্ধতা প্রত্যাশিত নয়।”

তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা বাজারকে প্রায় অচল করে দিয়েছে এবং বাজারে কোনো পক্ষই লাভবান হচ্ছে না।

“কৃত্রিম মূল্য কারো জন্য লাভজনক হতে পারে না। আমরা বিএসইসিকে দ্রুত ফ্লোরের দাম উঠানোর আহ্বান জানাচ্ছি।”

ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার থেকে শুরু করে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি পর্যন্ত সকল স্টেকহোল্ডার দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইস মেকানিজমের বিরোধিতা করে আসছে কারণ তাদের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম গত মাসে বলেছিলেন যে অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সাথে সাথে স্টক মার্কেট নিয়ন্ত্রক ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করবে।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সংঘাত শীঘ্রই শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.