আজ: শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৭ অগাস্ট ২০২৩, সোমবার |

kidarkar

মার্কিন ও জার্মান আকাশ প্রতিরক্ষার প্রশংসায় পঞ্চমুখ জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে ৫০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে। যুদ্ধের এই পর্যায়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাজধানী মস্কোসহ রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার ঘটনা বেড়েছে। অন্যদিকে আকাশপথে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও ব্যর্থ করার দাবি করছে কিয়েভ।

ইউক্রেনের সেই সাফল্যের রহস্য যেন এবার সামনে এলো। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি মার্কিন ও জার্মান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ‘অত্যন্ত কার্যকর’ বলে উল্লেখ করেছে। সোমবার (৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসামরিক ও আবাসিক ভবনগুলোতে রুশ হামলার ব্যাপক চেষ্টা সত্ত্বেও মার্কিন এবং জার্মান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইউক্রেন ‘উল্লেখযোগ্য ফলাফল’ পাচ্ছে বলে রোববার মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

এছাড়া হামলা চালানোর জন্য রাজধানী মস্কোর দিকে যাওয়া একটি ড্রোনকে গুলি করে নামানোর কথা জানিয়েছে রাশিয়া। গত এক সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় দফায় এই ধরনের হামলা চেষ্টার ঘটনা ঘটল। এছাড়া উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সাথে ক্রিমিয়ার সংযোগকারী দু’টি সেতুতে হামলা করেছে ইউক্রেন।

রয়টার্স বলছে, চলমান যুদ্ধে একে অপরের সৈন্য, অস্ত্র এবং যুদ্ধে সহায়তা প্রদানকারী অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ বাড়িয়েছে উভয় দেশ। এছাড়া গত বছর রুশ আক্রমণের পর থেকে দক্ষিণ ও পূর্ব ইউক্রেনজুড়ে মস্কোর দখলে চলে যাওয়া এলাকাগুলো থেকে রাশিয়ান বাহিনীকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ইউক্রেন।

২০১৪ সালে দখল করে নেওয়া ক্রিমিয়ার মস্কো-নিযুক্ত প্রধান কর্মকর্তা বলেছেন, উপদ্বীপের চোনহার সেতুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে এবং এতে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ক্রিমিয়া এবং ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের রাশিয়া-অধিকৃত অংশগুলোর মধ্যে তিনটি সংযোগ সড়কের মধ্যে আরেকটি হেনিচেস্ক শহরের কাছে অবস্থিত। এই সেতুতেও গোলাবর্ষণ করা হয়েছে এবং এতে এক বেসামরিক চালক আহত হয়েছেন বলে মস্কো-নিযুক্ত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

রোববার রাতে দেওয়া ভিডিও ভাষণে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, মার্কিন-নির্মিত প্যাট্রিয়ট এবং জার্মানির তৈরি আইআরআইএস-টি সহ পশ্চিমাদের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘অত্যন্ত কার্যকর’ প্রমাণিত হচ্ছে এবং ‘ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্য ফলাফল দিয়েছে।’

জেলেনস্কি বলছেন, ইউক্রেন গত সপ্তাহে রাশিয়ার আক্রমণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। এর মধ্যে ৬৫টি বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১৭৮টি হামলাকারী ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে ইউক্রেনীয় সেনারা। ভূপাতিত এসব ড্রোনের মধ্যে ৮৭টি শাহেদ ড্রোনও রয়েছে।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী পরে জানায়, রাশিয়া ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৪৮ বিমান হামলা চালিয়েছে। সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দুর্ভাগ্যবশত, রুশ হামলায় বেসামরিক জনগণও নিহত ও আহত হয়েছেন। আবাসিক ভবন এবং অন্যান্য বেসামরিক অবকাঠামোও ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে।’

এছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খারকিভে একটি রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্রে রাশিয়ার ‘গাইডেড বোমা’ হামলায় দু’জন নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। খারকিভ অঞ্চলের কুপিয়ানস্কের কাছে শনিবার রাতে এই হামলার পর ভবনটিতে আগুন ধরে গেছে এমন একটি ছবি অনলাইনে পোস্ট করেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

তিনি এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তার দাবি, ‘এই একটি যুদ্ধাপরাধই বলে দিচ্ছে রাশিয়ার আগ্রাসনের পুরো চিত্র।’

রাশিয়া অবশ্য ইচ্ছাকৃতভাবে ইউক্রেনে বেসামরিক নাগরিক বা সামরিক হাসপাতালকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করার কথা অস্বীকার করেছে। রুশ আগ্রাসন ও এর জেরে সৃষ্ট যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া ইউক্রেনের বহু শহর ধ্বংস হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের সরবরাহ করা অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে প্যাট্রিয়ট সিস্টেম। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে রাশিয়ার বিমান হামলা প্রতিরোধে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনকে সহায়তা করছে।

গত মে মাসে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স বলেছিল, প্যাট্রিয়ট সিস্টেমকে বিমান, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ এই ধরনের অস্ত্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে উন্নত মার্কিন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এতে সাধারণত রাডার এবং অন্যান্য সহায়তা যানসহ লঞ্চার অন্তর্ভুক্ত থাকে।

এছাড়া রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে আইআরআইএস-টি-এসএলএম এয়ারডিফেন্স সিস্টেম দিয়েছে জার্মানি। এর সাহায্যে মাটির ওপর ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে ধেয়ে আসা মিসাইল আটকে দেওয়া যায়। মিসাইলের গতিপথও পরিবর্তন করে দিতে পারে এই সিস্টেম।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.