পাকিস্তানের কাছে বড় হার বাংলাদেশের
স্পোর্টস ডেস্ক : বাঁচামরার ম্যাচে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। মনে হচ্ছিল, টাইগাররা বুঝি নিজেদের ছন্দ ফিরে পেয়েছে। কিন্তু সুপারফোর পর্বের প্রথম ম্যাচে আবারও সেই ব্যাটিং ব্যর্থতা। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে মাত্র ১৯৩ রানেই গুটিয়ে গেলো বাংলাদেশের ইনিংস। পাকিস্তান ম্যাচটা জিতে নিলো ৭ উইকেট আর ৬৩ বল হাতে রেখেই।
বোর্ডে বেশি রান নেই। তারপরও টাইগার বোলাররা অনেকটা সময় চাপে রেখেছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটারদের। ৫৫ বলে ৩৫ রান তোলা পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটিটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। তার দুর্দান্ত ডেলিভারি মিস করে এলবিডব্লিউ হয়েছেন ফাখর জামান (৩১ বলে ২০)।
এরপর বাবর আজমকে বোল্ড করেন তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারি বাবরের (২২ বলে ১৭) ব্যাটে লেগে ভেঙে যায় স্টাম্প। ৭৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান।
তবে এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ান আর ইমাম উল হক মিলে দলকে সহজ জয়ের পথ গড়ে দেন। তাদের ১০৪ বলে ৮৫ রানের জুটিতে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় পাকিস্তান।
অবশেষে ইমামকে বোল্ড করেন মিরাজ। ৮৪ বলে ৫ চার আর ৪ ছক্কায় ইমাম সাজঘরে ফেরেন ৭৮ রানে। তবে ততক্ষণে পাকিস্তানের জয় বলতে গেলে নিশ্চিত হয়ে গেছে। মোহাম্মদ রিজওয়ান ৭৯ বল খেলে ৭ চার আর ১ ছক্কায় ৬৩ রানে অপরাজিত থেকে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন।
এর আগে শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফদের তোপে ৪৭ রান তুলতেই বাংলাদেশের চলে গিয়েছিল ৪ উইকেট। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিম।
প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে বাংলাদেশকে লড়াকু পুঁজি গড়ার পথ করে দিয়েছিলেন এই যুগল। কিন্তু বাকিরা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিলেন। বড় শট খেলতে গিয়ে একের পর এক উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন তারা। শেষের ৯ বলে ৩ রান তুলতে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে টাইগাররা।
ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর পরও ৩৮.৪ ওভারে ১৯৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
সাকিব পান ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৪তম হাফসেঞ্চুরি। কিন্তু হাফসেঞ্চুরির পর রান বাড়াতে গিয়ে ভুল করে বসেন টাইগার অধিনায়ক। ফাহিম আশরাফকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারলেগ বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন সাকিব। ৫৭ বলে তার ৫৩ রানের ইনিংসে ছিল ৭টি চারের মার।
সাকিবের আউটে ভাঙে মুশফিককে নিয়ে গড়া ১২০ বলে ১০০ রানের জুটি। এর পরপরই ক্যারিয়ারের ৪৬তম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন মুশফিক। তিনি দেখেশুনে খেলছিলেন, কিন্তু বাকিদের মধ্যে দায়িত্বজ্ঞানের লেশও ছিল না।
শামীম পাটোয়ারী দারুণ ছক্কা হাঁকিয়ে নজর কাড়েন। কিন্তু দলের বিপদে এই হাল ধরার বদলে আবারও ওপরে তুলে মারতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন (২৩ বলে ১৬)। এরপর মুশফিক ৮৭ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৬৪ করে হন হারিস রউফের শিকার।
আফিফ হোসেন একটা প্রান্ত ধরে খেলার চেষ্টাও করেননি। নাসিম শাহকে পুল করতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে (১১ বলে ১২)। পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারলেও যেখানে আড়াইশর বেশি স্কোর গড়া সম্ভব ছিল, সেখানে যাচ্ছেতাই ব্যাটিং প্রদর্শনীতে ১৯৩ রানেই থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
হারিস রউফ ১৯ রানে ৪টি আর নাসিম শাহ ৩৪ রানে নেন তিনটি উইকেট।
আগের ম্যাচে ইনিংস ওপেন করতে নেমে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। যে কারণে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষেও মিরাজকে দিয়ে ইনিংস ওপেন করানো হলো। তার ওপর আফগানদের বিপক্ষে ওপেনিং জুটিতেই প্রায় ১০ ওভার খেলেছিলেন তিনি নাঈম শেখের সঙ্গে।
সব মিলিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট জুটি ভাঙতে চাননি এবং শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহদের বিপক্ষে মিরাজকে দিয়েই ইনিংস ওপেন করালো টিম ম্যানেজমেন্ট।
কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের হয়ে আর ক্লিক করেননি মেহেদী মিরাজ। শাহিন শাহ আফ্রিদির বিপক্ষে প্রথম ওভার খেলেছেন নাঈম শেখ। যদিও কোনো রান করতে পারেননি।
দ্বিতীয় ওভার বোলিং করতে আসেন নাসিম শাহ। তার প্রথম বল মোকাবিলা করেন মিরাজ এবং প্রথম বল মোকাবিলা করতে গিয়েই ক্যাচ তুলে দেন তিনি (১ বলে ০)।
নাসিম শাহ যে বলটি করেছিলেন, সেটিতে সাধারণত উইকেট আসে না। কিন্তু শর্ট লেন্থের বলটি ছিলেন পা বরাবর। মিরাজ ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাটের ওপরের কানায় লাগান। স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়েই ক্যাচটি ধরেন ফাখর জামান।
এরপর লিটন চোখ ধাঁধানো ৪টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তবে সেট হয়ে ভুল করার অভ্যাস থেকে বের হতে পারেননি এই ব্যাটার। শাহিন আফ্রিদির বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। ১৩ বলে করেন ১৬ রান।
নাইম শেখও সেট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু হারিস রউফের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে বল সোজা আকাশে তুলে দেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ২৫ বলে ৪ বাউন্ডারিতে নাইমের ব্যাট থেকে আসে ২০ রান।
তাওহিদ হৃদয় আরও একবার ব্যর্থ। রউফের ১৪৫ গতির বলে যেন চোখেই দেখেননি। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই তরুণ (৯ বলে ২)। ৪৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। পরে সাকিব-মুশফিকের ব্যাটে সেই ধাক্কা সামলে উঠলেও শেষ রক্ষা হয়নি।