আজ: শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ইং, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ফের দাপটে ‘দুর্বল’ লিগ্যাসি ফুটওয়্যার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঋণ নিয়ে রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের দ্বন্দ্ব নিরসনে একমত হয়েছে উভয় পক্ষ। শেষ পর্যন্ত ঋণের বিষয়টি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির বিষয়ে এই অগ্রগতি হয়। রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণের সুদে ছাড় দেয়া হয়েছে এবং কোম্পানি এ ছাড়ের সুবিধা নিয়ে ঋণটি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানা যায়, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখার কাছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ঋণের পরিমাণ ছিল ৩১ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪১ টাকা। তবে ব্যাংকের কাছ থেকে সুদ ছাড় পাওয়ার পর কোম্পানিটিকে ১১ কোটি ৬৬ লাখ ৪৭ হাজার ৩০৩ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ অর্থ পরিশোধ করলেই পুরো ঋণের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। ঋণের অর্থ পরিশোধের জন্য তহবিল সংগ্রহে কোম্পানিটি পরিশোধিত মূলধন বাড়াবে বলে পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯০ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৬ পয়সা। সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৩ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৯৩ পয়সায়।

২০০০ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৭৫ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। কোম্পানি পুঞ্জীভূত লোকসান রয়েছে ২৩ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮০।

তবে এই খবর প্রকাশের আগে ১২ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ২৬ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারের এমন দাম বাড়লেও কোম্পানিটির আর্থিক ভিত্তি খুবই দুর্বল। সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটি লোকসানের মধ্যে রয়েছে।

এই কোম্পানির শেয়ার দাম এভাবে বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। এমনকি প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে বার্তাও প্রকাশ করা হয়।

ডিএসই এই সতর্কবার্তা প্রকাশ করে গত মে মাসে। ডিএসই সতর্কবার্তা প্রকাশের পর কোম্পানিটির শেয়ার দাম আরও প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। তবে গত আড়াই মাসে কোম্পানিটি নিয়ে আর কোনো সতর্কাবার্তা প্রকাশ করেনি ডিএসই।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এই দাম বাড়ার পেছনে কোনো বিশেষ চক্র রয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা কম হওয়ায় সহজেই বাজারে শেয়ারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা সম্ভব। কোনো বিশেষ পক্ষ এই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পেছনে থাকতে পারে।

তারা বলছেন, কোনো বিশেষ পক্ষ যখন একটি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ায়, তারা হুট করেই সব শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারেন না। যে কারণে একটি দামে নিয়ে গিয়ে মাঝেমধ্যে মূল্য সংশোধন করা হয়, আবার দাম বাড়ানো হয়। এভাবে শেয়ার দাম বাড়িয়ে বিক্রির চেষ্টা করেন তারা। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার দাম ৫০ টাকার নিচে থেকে বাড়িয়ে প্রায় দেড়শো টাকা করা হয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১ মার্চ লিগাসি ফুটওয়্যারের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩৯ টাকা। সেখান থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়ে ১০ এপ্রিল প্রতিটি শেয়ারের দাম ৯৭ টাকা ৭০ পয়সায় উঠে। এরপর কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়ে ৬৫ টাকা ৯০ পয়সায় নেমে আসে। এই মূল্য সংশোধনের পর আবার হু হু করে বাড়তে থাকে কোম্পানিটির শেয়ার দাম। এতে দেখতে দেখতে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০০ টাকায় উঠে যায়।

এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েক দফায় নোটিশ পাঠায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ২৩ মে ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে সতর্কাবার্তা প্রকাশ করা হয়। ওই বার্তায় বলা হয়- লিগাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটি কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করা হয়। জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- সম্প্রতি শেয়ারের যে দাম বেড়েছে এবং লেনদেন বেড়েছে তার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। তবে গতকাল কোম্পানিটি মূল্যসংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছে।

ডিএসই থেকে যখন এই সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়, সে সময় লিগাসি ফুটওয়্যারের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৯০ টাকা ৩০ পয়সা। এরপর দাম বাড়ার প্রবণতা আরও বেড়ে গত ৬ আগস্ট প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৩৬ টাকা ৫০ পয়সায় উঠে।

এরপর আবার কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়। ১৬ আগস্ট প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০১ টাকা ৫ পয়সায় নেমে আসে। তবে এখন আবার দাম বাড়তে দেখা যাচ্ছে। ৫ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১২৬ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়ায়। আজ বৃহস্পতিবার ২ টাকা ৮০ পয়সা বেড়ে সর্বশেষ ১২৯ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়।

শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০২০ সালে কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।

এদিকে ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটি লোকসান করেছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯০ পয়সা।

১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮০টি। এরমধ্যে ৩০ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২০ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.