আজ: শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪ইং, ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার |

kidarkar

রাশিয়াকে অস্ত্র দিলে উ. কোরিয়াকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রি করলে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলো ‘আক্রমণাত্মকভাবে’ কার্যকর করার হুমকিও দিয়েছে দেশটি।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন রাশিয়া সফরে গেছেন এবং এর মধ্যেই এই হুমকি দিলো ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বিশেষ এক ট্রেনে চড়ে মস্কোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটির সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

এর আগে রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিম জং উন রাশিয়ার পূর্বাঞ্চল সফর করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

এছাড়া পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়ায় অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন কিম। যদিও রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহের মতো যেকোনও পরিকল্পনার বিরুদ্ধে পিয়ংইয়ংকে আগেই সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি রাশিয়াকে অস্ত্র দিলে উত্তর কোরিয়াকে মূল্য চুকাতে হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে দেশটি।

এই পরিস্থিতিতে কিমের রাশিয়া সফর ও সম্ভাব্য অস্ত্র চুক্তি নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সোমবার বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে সহায়তাকারী সকলকে ‘জবাবদিহি’ করতে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।

মিলার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি উভয় দেশকেই মনে করিয়ে দেবো- উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ায় অস্ত্র হস্তান্তর করা হবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাবের লঙ্ঘন। অবশ্যই, আমরা আক্রমণাত্মকভাবে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় অর্থায়নকারী সকল পক্ষের বিরুদ্ধে আমাদের নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রয়োগ করেছি এবং আমরা সেই নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রয়োগ করতে থাকব এবং প্রয়োজন হলে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেও দ্বিধা করব না।’

অবশ্য উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া বা উভয়ের বিরুদ্ধেই যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে কিনা তা তিনি নির্দিষ্ট করেননি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং (পুতির-কিমের) বৈঠকের ফলাফল কী হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবে।’

রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া উভয়ই ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। মস্কো এবং পিয়ংইয়ং নিশ্চিত করেছে, পুতিন ও কিম আগামী দিনে দেখা করতে চলেছেন।

আল জাজিরা বলছে, সোমবার রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন অর্থনৈতিক ফোরামের একটি ইভেন্টে যোগ দিতে দেশটির সুদূর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় বন্দরনগরী ভ্লাদিভোস্তকে গেছেন। মূলত এই শহরেই তিনি ২০১৯ সালে কিমের সাথে দেখা করেছিলেন।

গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, কিম জং উন এবং ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আসন্ন বৈঠকটি রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ভ্লাদিভোস্তক শহরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। মার্কিন এই সংবাদপত্রের কূটনৈতিক সংবাদদাতা এডওয়ার্ড ওং বলেন, উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের একটি দল গত মাসের শেষের দিকে ভ্লাদিভোস্তক ও মস্কো সফর করে।

তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের ওই দলটির মধ্যে ‘নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও ছিলেন যারা কিমের সফরের সময় প্রোটোকলের দায়িত্বে’ থাকেন। আর এই কারণে ভ্লাদিভোস্তক শহরে তাদের আগাম ভ্রমণকে সেখানে সম্ভাব্য এই বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে জোরালো লক্ষণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সোমবার মিলার বলেন, সাহায্যের জন্য ‘আন্তর্জাতিক ভাবে বিচ্ছিন্ন ও অস্পৃশ্য কিমের কাছে হাত পেতে পুতিন এটিই দেখাচ্ছেন যে, ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন চালানো তার (পুতিনের) ‘কৌশলগত ব্যর্থতা’ ছিল।

তিনি বলেন, ‘এখন এর চেয়ে ভালো প্রমাণ আর নেই। আক্রমণ শুরুর দেড় বছর পরে এসে পুতিন কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে তার লক্ষ্য অর্জনেই ব্যর্থ হননি, আপনি তাকে সামরিক সহায়তার জন্য কিম জং উনের কাছে ভিক্ষা করার লক্ষ্যে তার নিজের দেশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করতে দেখছেন।’

উল্লেখ্য, টানা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসনের শুরু থেকেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে অস্ত্রসহ সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

অপরদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে সহায়তা না করতে চীনসহ প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে সতর্ক করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও উত্তর কোরিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে।

পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি জোর দিয়ে বলেছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর ‘আধিপত্যবাদী নীতি’ মস্কোকে তার নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য সামরিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.