আজ: শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার |

kidarkar

মন্দা বাজারে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় সুবাতাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ার বাজারে চলছে মন্দা ভাব। এমন মন্দার মধ্যেও জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় চলছে সুবাতাস।

সংশ্লিষ্ঠদের সাথে কথা বলে জানা যায় গ্রাহকদের সঞ্চয় থেকে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো। সদ্য সমাপ্ত হিসাব বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতের ৩২টি কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। আর এ সম্পদের ৭৭ শতাংশই রয়েছে বীমা খাতের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির দখলে।

সম্পদের দিক থেকে শীর্ষ পাঁচ কোম্পানি হলো মেটলাইফ, ডেল্টা লাইফ, ফারইস্ট লাইফ, ন্যাশনাল লাইফ ও জীবন বীমা করপোরেশন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে কোম্পানিগুলোর দাখিল করা তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ চিত্র উঠে এসেছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত বীমা কোম্পানির সম্পদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা বা বিনিয়োগবিধি কোনোটিই চূড়ান্ত হয়নি। ফলে জমি ও বহুতল ভবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়েছে পড়েছে বীমা কোম্পানির সম্পদের বিনিয়োগ। যদিও আইন অনুযায়ী জীবন বীমা কোম্পানির মোট সম্পদের ৯০ শতাংশের মালিক বীমা গ্রাহকরা। অবশিষ্ট ১০ শতাংশের ওপর অধিকার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন, যুগ্ম সচিব) খলিল আহমদ বলেন, জীবন বীমা কোম্পানির সম্পদ থেকে যে আয় হবে, তার ৯০ শতাংশের মালিক বীমা গ্রাহক। আমরা গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের হিসাব পৃথককরণে কাজ করছি। বিপুল পরিমাণ এ সম্পদের মালিকানা নিজেদের দাবি করার কোনো সুযোগ নেই জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর।

আইডিআরএর তথ্যানুসারে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সম্পদের দিক থেকে শীর্ষে অবস্থান করছে বহুজাতিক কোম্পানি মেটলাইফ। প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮১৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সম্পদের দিক থেকে শীর্ষে থাকা এ কোম্পানিটি এগিয়ে আছে জীবন বীমা তহবিলেও। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির জীবন বীমা তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮১২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

সম্পদের দিক থেকে মেটলাইফের পরই রয়েছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৬ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির সম্পদ বেড়েছে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির জীবন বীমা তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৮৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

তৃতীয় স্থানে থাকা ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সম্পদের পরিমাণ ৪ হাজার ১৯৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যদিও সদ্য সমাপ্ত হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে এ কোম্পানির সম্পদ কমেছে ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ কোম্পানির জীবন বীমা তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৬৬ কোটি ৬ লাখ টাকা।

সম্পদের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে থাকা ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৯০৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে সদ্য সমাপ্ত হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির সম্পদ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমেছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জীবন বীমা তহবিলের দিক থেকেও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এর জীবন বীমা তহবিলের পরিমাণ ৩ হাজার ২৭৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল মোহাম্মদ আবু নাসের বলেন, আমাদের সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করা হয়নি। যদি পুনর্মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে এ সম্পদের পরিমাণ আরো বেশি বাড়বে। বরাবরই ঝুঁকিমুক্ত খাতে এ কোম্পানির সম্পদ বিনিয়োগ করা হয় বলে জানান তিনি।

বীমা ব্যবসায় খুব বেশি এগিয়ে না থাকলেও সম্পদের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা করপোরেশন। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের জীবন বীমা তহবিলের পরিমাণ ১ হাজার ৯৩৪ কোটি ৮ লাখ টাকা।

শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির বাইরে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৮৫৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, মেঘনা লাইফের ১ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা, সন্ধানী লাইফের ১ হাজার ৮৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, প্রাইম ইসলামী লাইফের ৯২৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ও প্রগতি লাইফের ৬৪ কোটি টাকা, রূপালী লাইফের ৫২৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৩৪৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, প্রগ্রেসিভ লাইফের ৩২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, হোমল্যান্ড লাইফের ৩১৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা, গোল্ডেন লাইফের ১৯৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা ও গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সম্পদের পরিমাণ ১৭০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

এছাড়া সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬১ কোটি ৭ লাখ টাকা, বায়রা লাইফের ৭৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা, সোনালী লাইফের ৭৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, এলআইসির ৫৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, চার্টার্ড লাইফের ২৫ কোটি ২ লাখ টাকা, বেস্ট লাইফের ২২ কোটি ৮১ লাখ টাকা, আলফা ইসলামী লাইফের ২২ কোটি ৭ লাখ টাকা ও জেনিথ ইসলামী লাইফের ২০ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর বাইরে সানফ্লাওয়ার লাইফের সম্পদের পরিমাণ ১৮ কোটি ৮ লাখ টাকা, মার্কেন্টাইল লাইফের ১৭ কোটি ২৮ লাখ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের ১৬ কোটি ৭২ লাখ, স্বদেশ লাইফের ১৩ কোটি ৩৩ লাখ, যমুনা লাইফের ১১ কোটি ৭৫ লাখ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফের ২ কোটি ১৭ লাখ ও ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সম্পদ রয়েছে ২৮ লাখ টাকা।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.