আজ: সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪ইং, ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ব্যবসা সম্প্রসারণে পুঁজিবাজারে আসছে ওয়েব কোটস পিএলসি

শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারের এসএমই মার্কেট থেকে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে পাঁচ কোটি টাকা উত্তোলন করবে ওয়েব কোটস পিএলসি। উত্তোলিত অর্থের মাধ্যমে কোম্পানিটি যন্ত্রপাতি আমদানি, চলতি মূলধন ও ঋণ পরিশোধ করবে। ইতিমধ্যে কোম্পানিটি এ অর্থ উত্তোলনের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২৮ কোটি ১ লাখ ৪১ হাজার টাকার পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটির কিউআইও পরবর্তী মূলধন হবে ৩৩ কোটি ১ লাখ ৪১ হাজার টাকা। অর্থ্যাৎ বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে কোম্পানিটি এসএমই মার্কেটে ৫০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। উত্তোলিত অর্থের মধ্যে মেশিনারিজ ক্রয় করবে ২ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকায়, ঋণ পরিশোধ করবে ১ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকায়, চলতি মূলধন হিসেবে সংরক্ষন করবে ১ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং কিউআইও প্রসেসিং বাবদ ব্যয় ধরেছে ২৭ লাখ টাকা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শতভাগ রফতানি নির্ভর এ প্রতিষ্ঠানটি ১০-এর অধিক পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করে থাকে। এরমধ্যে- সেলফ এডহেসিভ পেপার, ফটো ইনলে, টিস্যু পেপার, গাম টেপ, হ্যাং ট্যাগ, সাইজ ট্যাগ, ব্যাক বোর্ড, নেক বোর্ড, প্রাইস ট্যাগ, পেপার বেন্ট ও সেল্ফ কপি কম্পিউটার কন্টিনিউয়াস পেপার। এসব পণ্য নিজস্ব বিতরণ চ্যানেলের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী রফতানিকারকদের কাছে সরবরাহ করাই কোম্পানিটির আয়ের মূল উৎস। মূলত কোম্পানিটির মূল আয়ের ৭০ শতাংশই আসে সেল্ফ এডহেসিভ পেপার রফতানির মাধ্যমে।

জানা যায়, ওয়েব কোটস পিএলসি আরএমজি সেক্টরের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজে বিক্রির জন্য আঠালো ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত কাগুজে পণ্য উৎপাদন করে। বাংলাদেশের বাজারে এ শিল্পের বাজার যথেষ্ট বড় এবং এর চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় এসব পণ্য গুণগতমান নিশ্চিত করে ন্যায্যমূল্যে বাংলাদেশের যেকোন স্থানে বিক্রি করা যায়। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য সেল্ফ এডহেসিভ ও ট্যাগ পেপারের চাহিদা পর্যাপ্ত থাকায় এ শিল্প খুবই সম্ভাবনাময়।

প্রসপেক্টাসের তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে কোম্পানিটির মোট রেভিনিউ এবং মুনাফার হার সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে। ২০১৮ সালের জুন মাসে কোম্পানিটির মোট রেভিনিউ ছিল ৮৯ কোটি ৮২ লাখ ৬১ হাজার ৯১৬ টাকা। এর বিপরীতে কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে ৮ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার ৯৩ টাকা। এছাড়া, ২০১৯ সালে ৫৭ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার ৬৮৬ টাকা রেভিনিউয়ের বিপরীতে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ২৩১ টাকা, ২০২০ সালে ৫৮ কোটি ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৭২১ টাকার বিপরীতে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৯২ হাজার ৪০৭ টাকা, ২০২১ সালে ৪৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৪ হাজার ১৭০ টাকার বিপরীতে ২ কোটি ৯২ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৭ টাকা, ২০২২ সালে ৪৮ কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ৮৮২ টাকার বিপরীতে ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার ৭৩৮ টাকা এবং ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩২ কোটি ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৩১ টাকা রেভিনিউয়ের বিপরীতে কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে। ২ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ৩৯৭ টাকা।
বিগত বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বিশ্লেষনে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৩০.৭৪ টাকা। এছাড়া ২০১৯ সালে ১৬.৫৪ টাকা, ২০২০ সালে ১৪.১৮ টাকা, ২০২১ সালে ১০.৪৩ টাকা, ২০২২ সালে ১৫.৬৪ টাকা এবং ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির ইপিএস ০.৯০ টাকা।

মূলত চাহিদা কমে যাওয়া ও কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ২০১৯ ও ২০২১ সালে কোম্পানিটির মুনাফা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে নতুন প্রোডাকশন লাইন এবং পণ্যে বৈচিত্র আসায় ২০২২ সালে তা প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যের পরিমাণ ১৫.৯২ টাকা।

কোম্পানিটির অফিস ও কারখানায় সর্বমোট ১৪১ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারি কাজ করছে। এরমধ্যে সকলের চাকরিই স্থায়ী। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে সর্বনিম্ন বেতনের পরিমাণ ৮,৫০০ টাকা। মানব সম্পদকে সবচেয়ে মূল্যবান বিবেচনা করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। কারণ মানব সম্পদের কার্যকর ও দক্ষ ব্যবহারের ওপর কোম্পানির ভবিষ্যত নির্ভর করে। আর তাই কোম্পানির পক্ষ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মাসিক বেতনের পাশাপাশি বিভিন্ন উৎসব ভাতা, বার্ষিক ইনক্রিমেন্টসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে থাকে। এছাড়াও কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শ্রম কল্যান আইন-২০০৬ অনুযায়ী মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রমিক কল্যান তহবিলের মাধ্যমে শ্রমিকদের মাঝে বিতরণ করে থাকে।

ওয়েব কোটস পিএলসির সামগ্রিক বিষয়ে আলাপকালে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রাহাত রেজা অমি বলেন, বাংলাদেশ একটি আমদানি নির্ভর রফতানিকারক দেশ। রফতানির ক্ষেত্রে একটা টেকসই প্রচ্ছদ শিল্প অনেক বেশি জরুরি হওয়া সত্বেও অদ্যবদি একটি যুৎসই প্রচ্ছদ শিল্প স্থাপনের মতো সক্ষমতা আমরা অর্জন করতে পারি নাই। পরিণতিতে আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং আমরা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমরা শুরু থেকেই প্রচ্ছদ শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে দেশের রফতানি খাতে ভূমিকা পালন করছি এবং ভবিষ্যতে আরও ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে ওয়েব কোটস পিএলসিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

রাহাত রেজা অমি জানান, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে আমাদের নিজস্ব উৎপাদন প্রক্রিয়ার কলেবর বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি প্রক্রিয়ায় ওয়েব কোটস পিএলসি দেশের রফাতানি খাতে আরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

জানা যায়, ওয়েব কোটস পিএলসি ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। কোম্পানিটি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রুপান্তরিত হয়। কেরানীগঞ্জের লাকিরচরে নিজস্ব জায়গায় (১৪৭ ডেসিমেল) কোম্পানিটির ফ্যাক্টরি রয়েছে।

প্রসঙ্গত, কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্বে রয়েছে সোনালী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.