লোকসানে ‘ডুবতে যাচ্ছে’ ইউনিয়ন ক্যাপিটাল
নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডের লোকসানের বোঝা প্রতি বছরই বড় হচ্ছে।
একদিকে আয় ও পরিচালন মুনাফা কমছে। পাশাপাশি নিট লোকসান বাড়ায় ‘ডুবতে যাচ্ছে’ কোম্পানিটি। একই সঙ্গে কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসানও বছর বছর বাড়ছে। এ ছাড়া কোম্পানির বিতরণকৃত ঋণের খেলাপির হারও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক।
কোম্পানিটি টানা চার বছরেরও বেশি সময় ধরে লোকসানে রয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর পরবর্তী নিট লোকসান আগের বছরের চেয়ে বেড়ে প্রায় দেড়গুণ হয়েছে। এমনকি চলতি ২০২৩ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) কোম্পানিটির রেকর্ড নিট লোকসান হয়েছে। কোম্পানির নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
লোকসানের কারণ হিসাবে কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের খেলাপি ঋণ বাড়ায় সুদ-বাবদ আয় কমে গেছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তার বিপরীতে সঞ্চিতি বাড়াতে হয়েছে। পাশাপাশি ব্রোকারেজ কমিশন-বাবদ আয়ও এ সময়ে কমেছে। এ সব কারণে কোম্পানিটিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লোকসান গুণতে হয়েছে।
নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ হিসাব বছর থেকে টানা লোকসানে রয়েছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির মোট আয় হয়েছিল ১৭১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর আগের হিসাব বছরে যা হয়েছিল ২৪৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় কমেছে ৭৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা ৩০ দশমিক ৯০ শতাংশ। আয় কমার পাশাপাশি আলোচ্য সময়ের বিভিন্ন ব্যয় বহন শেষে কোম্পানিটির কর পরবর্তী লোকসান হয়েছিল ১০৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর আগের হিসাব বছরে যেখানে কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছিল ৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। লোকসানের কারণে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এর আগের হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।
২০২০ হিসাব বছরে কোম্পানির মোট আয় আগের বছরের তুলনায় ১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা কমে হয়েছে ১৫৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। শতকরা হিসাবে বছর ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় কমেছে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ হিসাব বছরে কোম্পানির নিট লোকসান হয়েছে ৫৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ লোকসান ২০১৯ হিসাব বছরের তুলনায় ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম ছিল। এ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।
২০২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির মোট আয় হয়েছে ৯৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ আয় আগের হিসাব বছরের তুলনায় ৬২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বা ৩৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ কম ছিল। আয় কমার পাশাপাশি আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির নিট লোকসান আগের হিসাব বছরের তুলনায় ৮৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা বা ৬১ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। এ হিসাব বছরে কোম্পানির নিট লোকসান হয়েছে ১৩৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। লোকসান বাড়ায় আলোচ্য হিসাব বছরের জন্যও শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ বঞ্চিত হন।
সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২ হিসাব বছরে কোম্পানিটির মোট আয় আগের হিসাব বছরের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৯২ শতাংশ কমে হয়েছে ৬১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অথাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় কমেছে ৩১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর পরবর্তী নিট লোকসান আগের হিসাব বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৪৯ গুণ বেড়ে হয়েছে ২০৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ লোকসান আগের হিসাব বছরের তুলনায় ৬৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বা ৪৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি ছিল। সর্বশেষ এ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয়ের তুলনায় নিট লোকসান ৩ দশমিক ৩৩ গুণ বেশি ছিল। এ বড় লোকসানের কারণে আলোচ্য হিসাব বছরেও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোন লভ্যাংশের সুপারিশ করেনি কোম্পানিটি।
২০২২ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের আলোকে সম্প্রতি মতামত জানিয়েছে কোম্পানির নিরীক্ষক কে এম হাসান এন্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানির বড় লোসকান হয়েছে। আর বছর শেষে পুঞ্জিভুত লোকসানের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৪৯১ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। এছাড়া আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস), শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনভিপিএস) ও মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাতে (সিএআর) বড় নেতিবাচক প্রভাব ছিল। এমন পরিস্থিতে ভবিষতে কোম্পানিটি তার চলমান ব্যবসায়ীক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
এদিকে সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানির মোট আয় হয়েছে ২২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে এ আয় হয়েছিল ৩৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় কমেছে ১৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বা ৪০ দশমিক ৫১ শতাংশ। আয় কমার পাশাপাশি আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির রেকর্ড ১০৩ কোটি টাকা নিট লোকসান হয়েছে। এ লোকসান এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বা ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।