চলতি মৌসুমে চিনির বৈশ্বিক উৎপাদন কমার আশঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২৩-২৪ মৌসুমে চিনির বৈশ্বিক উৎপাদন ১ দশমিক ২১ শতাংশ কমার আশঙ্কা রয়েছে। এ সময় বাজার বড় ধরনের সরবরাহ ঘাটতির মুখে পড়তে পারে। ইন্টারন্যাশনাল সুগার অর্গানাইজেশন (আইএসও) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবরে ২০২৩-২৪ বিপণন মৌসুম শুরু হবে। এ মৌসুমে চিনির বৈশ্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২১ লাখ ১৮ হাজার টন। সংস্থাটির প্রাক্কলন অনুযায়ী, এ সময় ভোগ্যপণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন দাঁড়াবে ১৭ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার টনে। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার টন। এদিকে পণ্যটির ব্যবহার ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার থেকে বেড়ে ১৭ কোটি ৬৯ লাখ ৬০ হাজার টনে উন্নীত হতে পারে।
বিশ্লেষকরা জানান, উৎপাদনের তুলনায় ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কায় বিশ্ববাজারে উদ্বৃত্ত থেকে ঘাটতির দিকে মোড় নেবে। চলতি মৌসুমে পণ্যটির উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৪ লাখ ৯৩ হাজার টনে।
এগ্রিমান্ডির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও উপল শাহ জানান, বৈশ্বিক উৎপাদন পরিস্থিতি বেশকিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ উৎপাদনে বড় প্রভাব রাখবে।
তিনি আরো জানান, এ বছর ব্রাজিলে রেকর্ড আখ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এর পরও চিনি উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। কারণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে মিলগুলো চিনির পরিবর্তে ইথানল উৎপাদন বাড়াতে পারে। আগামী কয়েক মাস চিনি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ চিনি উৎপাদক। কোটার ভিত্তিতে দেশটি চিনি রফতানি করে। আগামী মৌসুমে ভারত চিনি রফতানি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ খবর প্রকাশের পর চিনি সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন উপল শাহ। তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের শুরুতে পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।’
আইএসওর নির্বাহী পরিচালক জশ ওরিভ বলেন, ‘নিউইয়র্কের ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে অপরিশোধিত চিনির দাম ১২ বছরের সর্বোচ্চে অবস্থান করছে। প্রতি পাউন্ড লেনদেন হচ্ছে ২৭ দশমিক ৪৪ সেন্টে।’
বৈশ্বিক উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখবে ভারতের উৎপাদন পরিস্থিতি। ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্কলন অনুযায়ী, দেশটিতে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩ কোটি ১৭ লাখ টনে। তবে শিল্পসংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠান মনে করছে, উৎপাদনের পরিমাণ তিন কোটি টনে নামতে পারে।
ভারতে মৌসুমের শুরুতে চিনির মজুদ দাঁড়াতে পারে ৫৭ লাখ টনে। মোট চিনি সরবরাহের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৬১ লাখ টন। স্থানীয় বাজারে ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২ কোটি ৮১ লাখ টনে। মোট চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে ২ কোটি ৯১ লাখ টনে।
এদিকে শীর্ষ উৎপাদক দেশ ব্রাজিলে এখনো চিনির মজুদ নিম্নমুখী। মূলত বৃষ্টির কারণে দেরিতে আখ সংগ্রহ শুরু করায় চিনি উৎপাদনেও বিলম্ব হয়েছে, যা মজুদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে ইউরোপ, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, চীন ও মেক্সিকোয়ও উৎপাদনে নানা চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।