আজ: মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪ইং, ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৪ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার |

kidarkar

ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘গুরুতর’, তদন্ত হওয়া দরকার: যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের জড়িত থাকার বিষয়ে কানাডার তোলা অভিযোগকে ‘গুরুতর’ বলে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছে দেশটি।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের কো-অর্ডিনেটর জন কিরবি এসব কথা বলেন। বুধবার (৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খালিস্তানপন্থি নেতার হত্যায় ভারতের জড়িত থাকার বিষয়ে কানাডার তোলা অভিযোগ ‘গুরুতর’ এবং এটি পরিপূর্ণভাবে তদন্ত করা দরকার বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।

মূলত গত জুন মাসে কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এবং কানাডিয়ান নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় সরকারের এজেন্টদের ভূমিকা ছিল বলে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ সামনে আনার পর ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক গুরুতরভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

নিহত নিজ্জার নয়াদিল্লির চোখে ‘সন্ত্রাসী’ হলেও তার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত।

হোয়াইট হাউসে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের সমন্বয়ক জন কিরবি মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, গত সপ্তাহে সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ওয়াশিংটনে বৈঠক করেছেন এবং সেসময় তাদের মধ্যে কানাডার তোলা অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কিরবি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘(হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার) বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। আমরা অবশ্যই তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এই বিষয়ে কথা বলার জন্য এই দুটি দেশের ওপর ছেড়ে দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট বলেছি, এই অভিযোগগুলো গুরুতর। এসব অভিযোগের সম্পূর্ণরূপে তদন্ত হওয়া দরকার এবং অবশ্যই, যেমন আমরা আগেই বলেছি, আমরা ভারতকে সেই তদন্তে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

অন্যদিকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল পৃথক এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেছেন, কানাডার নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রাখা এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আগেও প্রকাশ্যে এবং ব্যক্তিগতভাবে বলেছি, (শিখ নেতাকে হত্যার ঘটনায়) কানাডার তদন্তে সহযোগিতা করতে এবং সেই প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছি।’

বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘কোয়াড এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে ভারত আমাদের অংশীদার এবং আমরা তাদের ও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সাথে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ডেপুটি মুখপাত্র আরও বলেন, ‘কিন্তু আমি যেমন বলেছি, আমরা এই অভিযোগগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি এবং আমরা কেবল কানাডার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি না বরং কানাডাকে সহযোগিতা করার জন্য ভারত সরকারকে প্রকাশ্যে ও ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছি।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কানাডার শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেসময় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা শিখ নেতা নিজ্জারের হত্যার সাথে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে।

কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ মন্দিরের বাইরে গত ১৮ জুন গুলি করে হত্যা করা হয় ৪৫ বছর বয়সী হরদীপ সিং নিজ্জারকে। হাউস অব কমন্সের সভায় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, কানাডার মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার পেছনে ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করার মতো ‘বিশ্বাসযোগ্য কারণ’ রয়েছে।

ভারত অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এছাড়া ভারত ২০২০ সালে নিজ্জারকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে ঘোষণা করে এবং নিজ্জারকে হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর আনা অভিযোগটিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে নয়াদিল্লি।

এছাড়া ভারতের বিরুদ্ধে ট্রুডোর এই অভিযোগ সামনে আসার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনার একপর্যায়ে উভয় দেশ একে অপরের একজন করে কূটনীতিককে বহিষ্কার করে এবং পরে কানাডিয়ান নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করে ভারত।

এছাড়া আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে কানাডাকে ৪১ কূটনীতিক সরিয়ে নিতেও বলেছে ভারত।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.