ষড়যন্ত্রে বিএনপির জন্ম, এখনও ষড়যন্ত্র করছে: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক: ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে অবৈধভাবে বিএনপির জন্ম হয়েছিল, অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে তারা খুশি হতে পারে না। এজন্য এখনও তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর কাওলায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আওয়ামী লীগের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সঙ্গে থাকায় জনগণকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিল, আবারও প্রধানমন্ত্রী হয়েছে; ভোট চুরির অপরাধে এ দেশের মানুষ ভোটচোরাকে কখনও ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। সেজন্য তাকে আন্দোলনের মাধ্যমে মাত্র দেড় মাসে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল জনগণের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। আমরা এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নতি করেছি।’
‘যে বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার করেছিল, সেই ভুয়া ভোটার সরিয়ে দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি, যাতে নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়। আর বিএনপি সেই সময়ে নানা তালবাহানা করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিল।’
নির্বাচনের পরিবর্তে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখলের অভ্যাস বিএনপির পুরনো, উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বিএনপির একা না; বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বন্ধুকের নলের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল। তারই হাতে গড়া বিএনপি। সেনা ও বিমান বাহিনীসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে হত্যা করেছে, অত্যাচার করেছে, লাশ গুম করেছে। সেনাবাহিনীর যে সদস্যরা মারা গেছে, তাদের লাশ স্বজনরা পায়নি। এখনও তারা খুঁজে ফেরে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বিএনপির জন্মই হয়েছে হত্যার মধ্যে দিয়ে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি শুধু আমাদের স্বাধীনতাই দেননি, মাত্র সাড়ে ৩ বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। এ দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন, স্কুল-কলেজ চালু করেছিলেন, রাস্তাঘাট- ব্রিজসহ ধ্বংসপ্রাপ্ত সবকিছু মেরামত করে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময়ে ষড়যন্ত্র করে জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো। শুধু তাকে নয়, সেই একই সাথে আমার মা যিনি ছায়ার মতো বাবার পাশে ছিলেন, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে শক্তি যুগিয়েছেন, তাকেও হত্যা করেছে। ১০ বছরের ছোট্ট ছেলে রাসেলসহ পুরো পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই থেকে এ দেশের হত্যা, ক্যু, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল চলে।
তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে এদের জন্ম, তাই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে তারা খুশি হতে পারে না। ক্ষমতায় থেকে এরাই জনগণের সম্পদ লুট করেছে, অর্থ পাচার করেছে আর এ দেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। শুধু জিয়াউর রহমানই যে করেছে, তা নয়; খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে দিনের পর দিন হয়রানি করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিল, গোপালগঞ্জের নাম নাকি মুছে ফেলবে। তার স্বামী জিয়াউর রহমান জয় বাংলা স্লোগান বাতিল করেছিল, ৭ মার্চের ভাষণ বন্ধ করেছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার ডাকে যারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে, সেই জয় বাংলা স্লোগান আবারও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতিহাস মুছে দিলেও মোছা যায় না, সেটি প্রমাণ হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণ, যেটা একদিন বাজানোই যেত না, নিষিদ্ধ করেছিল, আজকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে সেই ভাষণ। ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলাদেশের না, এই দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শহিদের রক্ত বৃথা যায় না, সেটা প্রমাণ হয়েছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির সঞ্চালনায় সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা অংশ নেন।