আজ: মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪ইং, ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৮ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার |

kidarkar

দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কোম্পানি

বিশেষ সুবিধা নিয়ে তালিকাভুক্ত হচ্ছে বেস্ট হোল্ডিং

নিজস্ব প্রতিবেদক :পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ানের মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংসকে তালিকাভুক্ত করতে বিশেষ আইনি ছাড় দিয়েছে।কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে জালিয়াতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধেও শতকোটি টাকা লুটপাট ও অবৈধ অর্থের বৈধতা প্রদানে সরাসরি সহায়তার অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তবে বিএসইসি বলছে, আইনের মধ্যে থেকেই তারা অনুমোদন দিয়েছেন। এখানে আইনের কোনো লঙ্ঘন হয়নি।

কারণ হিসাবে বিএসইসি বলছে, কোম্পানিটি পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫ অনুসারে আবেদন করেছে। তারা ওই রুলসের শর্ত পূরণ করেছে। বাইরের অন্য কিছু রুলসে সংযুক্ত নেই।

এর আগে , কোম্পানিটি আইন লঙ্ঘন করে ২০২০ সালে সরকারি কোম্পানির তকমা দিয়ে সরাসরি তালিকাভুক্তির চেষ্টা করে। । সে সময় প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় ১৮০০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে। ব্যাংকগুলো প্রাইভেট প্লেসমেন্টে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৬৫ টাকায় ক্রয় করে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের শেয়ারের কারণে সরকারি কোম্পানি হিসাবে ফাঁকফোকর দিয়ে সরাসরি তালিকাভুক্তির চেষ্টা করে। কিন্তু সেই উদ্যোগে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, আগেরবার সরাসরি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় এবার আইপিও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজারে আসার উদ্যোগ নিয়েছে বেস্ট হোল্ডিংস কর্তৃপক্ষ। প্রাইভেট প্লেসমেন্টে কোম্পানিটির শেয়ার কিনেছেন বা মালিকানায় শরিক হয়েছেন শতাধিক রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটিতে ওই সব ব্যক্তি ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগ আটকে আছে। তাই কোম্পানিটিকে দ্রুত বাজারে এনে ওই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ ফেরত দিতে পুনরায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাজটি যাতে নির্বিঘ্নে হতে পারে, সে জন্য আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে যেসব আইনি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলোয় ছাড় দেওয়া হয়েছে।

কমিশনের পাবলিক ইস্যু আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি আইপিওতে আবেদনের দুই বছর আগে থেকে শুধু স্টক শেয়ার ইস্যু ছাড়া অন্য কোনোভাবে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে না। কিন্তু কোম্পানিটি এরকম সময়ের মধ্যে বন্ড ছেড়ে বড় অঙ্কের মূলধন বাড়িয়েছে। আবার বন্ডের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে শেয়ারেও রূপান্তর করেছে। এটি আইনের পরিপন্থি।

বলা হয়েছে, আইপিও আবেদনের আগে কোম্পানিটি যত ধরনের শেয়ার ইস্যু করেছে, সেগুলোর ওপর তিন বছরের বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা বা লক-ইন থাকবে। যেদিন থেকে কোম্পানিটির শেয়ার পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে, সেদিন থেকে এ লক-ইনের সময় গণনা শুরু হবে। এ ছাড়া আইপিও অনুমোদনের আগে নতুন করে আর কোনো শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না কোম্পানিটি।

এদিকে,আলোচিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর সঙ্গে দূর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এর জালে ধরা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ।দুদকের তথ্য অনুসারে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে ৯৫ কোটি টাকার তথ্য গোপন করে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু এবং বেস্ট হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ। এ ক্ষেত্রে সরকারের সাড়ে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে উল্লিখিত দুজনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার বাদী দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল হুদা। মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালের ৮ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার ৬ নম্বর প্লটের ৩০.২৫ কাঠা জমি ১১০ কোটি টাকায় ক্রয় করে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু। ওই জমির বিক্রেতা আমিন আহমেদ।

কিন্তু নিবন্ধন মূল্য দেখানো হয় ১৫ কোটি ২৫ লাখ। অর্থাৎ ৯৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার তথ্য গোপন করা হয়। জমি বিক্রয় ও প্রকৃত মূল্য গোপন করতে আমিন আহমেদ তাকে সহযোগিতা করেছেন। আমিন আহমেদ ১৩৪টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও নগদে ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এ ধরনের কাজ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায়। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ২০১২ সালের ৮ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার ৬ নম্বর প্লটের ৩০.২৫ কাঠা জমি ১১০ কোটি টাকায় ক্রয়ের জন্য অপর আসামি আমিন আহমেদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিপত্র করেন। চুক্তিকৃত জমির মূল্য ১১০ কোটি টাকা এবং চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় পরিশোধিত অর্থ ১০ কোটি টাকা। চুক্তিপত্র অনুযায়ী ২টি দলিলে ভূমির দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। যার মধ্যে ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম দলিলে ১৮ কাঠা জমির দাম ৯ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছ। যেখানে গ্রহীতা- শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, শেখ শাহরিয়ার পান্না ও মিসেস শিরিন আক্তার। অন্যদিকে দ্বিতীয় দলিলে ওই একই বছরে ১২.২৫ কাঠার দাম ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। যেখানে গ্রহীতা হলেন- শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই। অর্থাৎ জমির মোট রেজিস্ট্রেশন মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশনে মূল্য ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম দেখিয়ে অবৈধ আয় গোপন করার চেষ্টা করেন তিনি। এছাড়া জমির মূল্য কম দেখিয়ে সরকারের ৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার রাজস্বও ফাঁকি দিয়েছেন।

মামলা সূত্র আরও জানায়, জমি বিক্রয় ও প্রকৃত মূল্য গোপন করতে আমিন আহমেদ তাকে সহযোগিতা করেছেন। আমিন আহমেদ ১৩৪টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও নগদে ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। অপরদিকে তাদের আয়কর নথিতে জমির জন্য মূল্য প্রদর্শন করেছেন ২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৪ টাকা। অর্থাৎ শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর আয়-ব্যয় এবং প্রকৃত সম্পদের মধ্যে কোন সামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়নি।

তিনি বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অস্তিত্বহীন ও নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ভুয়া ঋণ মঞ্জুর করে আত্মসাৎকৃত অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর, ছদ্মাবরণের মাধ্যমে গোপন করেছেন। আসামি আমিন আহমেদ বাচ্চুর অবৈধ অর্থের বৈধতা প্রদানে সরাসরি সহায়তা করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০১৫ সালে দায়ের করার পর দীর্ঘ ৮ বছর পর বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে গত জুন মাসে ৫৮ মামলায় ব্যাংকটির আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুদক।

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.